শে জিয়ানকুই। ২০১৯ সালে মানব জিন নিয়ে পরীক্ষার জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন চিনের এই বিজ্ঞানী। সম্প্রতি তিনি মুক্ত হয়েছেন। এ বার মানব জিন নিয়ে পরীক্ষা করার আরও একটি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিনেরই বিজ্ঞানীরা।
মানব জিন নিয়ে কোন পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছেন জিয়ানকুই, যা নিয়ে এত হইচই পড়ে গিয়েছে? জিয়ানকুই জানিয়েছেন, তিনি ইঁদুরের ভ্রূণ এবং মানুষের নিষিক্ত ডিম্বকোষ বা ‘জাইগোট’গুলির মিউটেশন (একত্রিত) ঘটিয়ে মানব জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান।
জিয়ানকুইয়ের ধারণা, এই মিউটেশনের ফলে অ্যালঝাইমার (স্মৃতিভ্রমজনিত রোগ। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায়।) রোগ থেকে পাকাপাকি ভাবে মুক্তি পেতে পারে মানবজাতি। আর সেই কারণেই তিনি এই গবেষণা করতে চান বলে জানিয়েছেন।
গত ২৮ জুন এই প্রস্তাব দিয়েছেন জিয়ানকুই। যা চিনের অন্য বিজ্ঞানীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, জিয়ানকুইয়ের এই পরীক্ষা পরের প্রজন্মের মানব ডিএনএ-র গঠন চিরতরে নষ্ট করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরীক্ষায় এক ধরনের অস্বাভাবিক নিষিক্ত ডিম্বাণু ব্যবহার করা হবে। যা সাধারণত এক জন মহিলার শরীরে রোপণের উপযুক্ত নয়।
জিয়ানকুই চিনের শেনজেনে ‘সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
২০১৮ সালে খবরের শিরোনাম আসেন জিয়ানকুই। এডস মুক্ত রাখতে তিনি দুই যমজ নাবালিকা বোনের জিন পরিবর্তন করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
এই দুই যমজ বোন লুলু এবং নানা ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করে। জিয়ানকুই তাদের জিন পরিবর্তন করে সিসিআর৫ নামে একটি জিন লক্ষ করেন। যা তাঁর মতে এইচআইভি থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
অন্য দিকে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, জিয়ানকুই যাদের শরীরে জিনের মিউটেশন ঘটিয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন।
জিয়ানকুইয়ের কাজকে বাকি বিজ্ঞানীরা ‘বোকামি’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন।
এই পরীক্ষার জন্য দুই সহকারী-সহ জিয়ানকুইকে চিনের একটি আদালত দোষী সাব্যস্ত করে।
শাস্তি হিসাবে জিয়ানকুইকে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। ১০ লক্ষ ইউয়ান জরিমানাও করা হয় তাঁকে।
জিয়ানকুইয়ের নতুন গবেষণা প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের নানয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পিটার ড্রোজে বলেন, “পুরো বিষয়টা উন্মাদের কাজ ছাড়া আর কিছু না। জিয়ানকুই মূলত মানবদেহে জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অ্যালঝাইমার ঠেকাতে জিয়ানকুইয়ের এই গবেষণা। আগেও উনি এ সব পরীক্ষা করতে গিয়ে জেলে গিয়েছেন। আমি অবাক হচ্ছি যে উনি আবার একই বিষয়ে গবেষণা করতে চাইছেন।’’
চিনের বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, জিয়ানকুইয়ের পরীক্ষা ভুল হলে তা পরবর্তী প্রজন্মের ডিএনএকে প্রভাবিত করবে।
চিন, ব্রিটেন এবং আমেরিকার মতো বেশ কয়েকটি দেশে মানবদেহের জিন পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। জিনগত কোনও পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়লেও তা মানবশরীরে করার অনুমতি নেই।
চিনের আইন গবেষণার জন্য জিনে পরিবর্তন করা ভ্রূণ মহিলাদের মধ্যে রোপণ করার অনুমতি দেয় না। প্রজননের জন্য পরিবর্তিত জিনের ব্যবহার সে দেশে দীর্ঘ দিন ধরে নিষিদ্ধ।
জিয়ানকুইয়ের প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছে যখন আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ কোভিডকে চিনের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছে।
দাবি করা হয়েছে, কোভিড ভাইরাসের জিন পরিবর্তন করে তা মানব সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কারণেই চিনের দিকে আরও আঙুল উঠুক, তা বেজিং চাইছে না বলে মনে করা হচ্ছে।