এ বার ইন্টারনেট ছাড়াই মোবাইলে ভিডিয়ো দেখতে পারবেন ভারতীয়েরা, চোখ রাখতে পারবেন টিভি চ্যানেলে। প্রয়োজন হবে না সিমেরও! না, তার জন্য ভিডিয়ো আগে থেকে ডাউনলোড করে রাখতে হবে না। ‘স্ট্রিম’ করা যাবে সরাসরি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক এবং প্রসার ভারতী।
বছরখানেক আগেই এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। প্রযুক্তির নাম ‘ডিটুএম’। এই প্রযুক্তি ভারতেই তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল, সাংখ্য ল্যাবস এবং আইআইটি কানপুরের তৈরি স্বদেশি এই প্রযুক্তি শীঘ্রই ভারতের বিভিন্ন শহরে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে।
‘ডিটুএম’ প্রযুক্তির অর্থ ‘ডিরেক্ট টু মোবাইল’। এই প্রযুক্তিতে হাতে থাকা মোবাইলে কোনও সিম কার্ড ভরা না থাকলেও চলবে। লাগবে না ইন্টারনেট সংযোগ। অথচ ওই ফোন চালিয়েই দিব্যি দেখা যাবে ভিডিয়ো, চোখ রাখা সম্ভব হবে পছন্দসই টিভি চ্যানেলে। লাইভ টিভিও দেখা যাবে।
অর্থাৎ, এই প্রযুক্তিটি মোবাইল ব্যবহারকারীদের সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই স্মার্টফোনে ভিডিয়ো ‘স্ট্রিম’ করার সুযোগ দেবে।
গত বছরের জুনে, আইআইটি কানপুর, প্রসার ভারতী এবং টেলিকমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় ‘ডি২এম’ সম্প্রচারের উপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কেন্দ্র। এই প্রযুক্তি কী ভাবে কাজ করবে তা-ও ব্যাখ্যা করা হয়।
২০২৩ সালের অগস্টে একটি বিবৃতিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারিক ক্ষেত্রও তালিকাভুক্ত করেছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, বিনা ইন্টারনেটে মোবাইলে বিভিন্ন ‘কন্টেন্ট (আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু নিয়ে ভিডিয়ো)’ দেখা ছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তথ্য প্রচারের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, এই ধরনের পরিষেবার প্রযুক্তি অনেকটা এফএম রেডিয়ো কিংবা ডিটিএইচ-এর মতো, যেখানে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে যন্ত্রে (যেমন ডিশ অ্যান্টেনা থেকে সেট-টপ বক্স) বার্তা পৌঁছয়।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা প্রথাগত সম্প্রচার পদ্ধতির বদলে সরাসরি তাঁদের স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে মাল্টিমিডিয়া দেখার সুযোগ পাবেন।
‘ডিটুএম’ প্রযুক্তি একটি ডিটিএইচ টেলিভিশন এবং এফএম রেডিয়োর মতো কাজ করবে। টেলিভিশন এবং রেডিয়োর মতোই স্মার্টফোনে সঙ্কেত পাঠানো হবে।
মোবাইল ফোনে সরাসরি সিগন্যাল পাঠানোর জন্য টেলিকমিউনিকেশন পরিকাঠামো এবং নির্দিষ্ট স্পেকট্রাম ব্যবহার করবে। এর পর সেই সঙ্কেত গ্রহণ করবে ফোনের ‘রিসিভার’। এর পর সেই সঙ্কেত ভিডিয়ো আকারে ফুটে উঠবে ফোনের পর্দায়।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, এই উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য সরকার ৪৭০-৫৮২ মেগাহার্জের স্পেকট্রাম সংরক্ষণ করবে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, নতুন এই প্রযুক্তি চালু হলে ভিডিয়ো ট্র্যাফিকের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চলে আসবে ডিটুএমে। তখন ৫জি নেটওয়ার্কে ভিড় অনেকটাই কমবে। এর ফলে দেশে ডিজিটাল বিপ্লব হবে, কন্টেন্টের স্বাধীনতাও বৃদ্ধি পাবে।
গত বছর বেঙ্গালুরু, দিল্লির কর্তব্য পথ এবং নয়ডায় ডিটুএমের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছিল।
কেন্দ্র আরও জানিয়েছিল, দেশে আট থেকে ন’কোটি বাড়ি, যেখানে টিভি নেই, সেখানে এই ডিটুএম প্রযুক্তি টিভি দেখার সুযোগ করে দেবে। দেশে ২৮ কোটি পরিবারের মধ্যে এখন ১৯ কোটি পরিবারেরই বাড়িতে টিভি রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আরও কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশে ৮০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহার হয়। সেগুলিতে যত কনটেন্ট দেখা হয়, তার মধ্যে ৬৯ শতাংশই ভিডিয়ো।
মোবাইলে অতিরিক্ত ভিডিয়ো দেখার কারণে নেটওয়ার্ক পরিষেবা ধাক্কা খায়। কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে বাধা আসে। তা থেমে থেমে (বাফার) চলে। কেন্দ্রের দাবি, এ সবের হাত থেকে মুক্তি দেবে ডিটুএম প্রযুক্তি।
‘ডিটুএম’ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোনও মোবাইল বা স্মার্ট ডিভাইসে ভিডিয়ো, অডিয়ো ট্রান্সমিট করে দেখা যাবে। স্থলভাগে যে টেলিকমিউনিকেশন পরিকাঠামো রয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই চলবে প্রযুক্তি।
বিপর্যয়ের সময়ে দেশ জুড়ে দ্রুত আপৎকালীন সতর্কীকরণ ব্যবস্থাও তৈরি করা সম্ভব হবে এর দ্বারা। নিমেষে কোটি কোটি মোবাইলে পৌঁছে যাবে বার্তা। কমবে খরচ। সর্বোপরি নেটওয়ার্কের উন্নতি হবে। ফোন পেতে আর সমস্যা হবে না গ্রাহকদের।