আর বেশি দেরি নেই। অমর হয়ে উঠবে মানুষ! ২০০-২৫০ বছর পর আবার বেঁচে উঠতে শুরু করবেন মৃত ব্যক্তিরা। এমনটাই দাবি করেছে আমেরিকার এক সংস্থা।
ক্রায়োনিক্স ইনস্টিটিউট নামে ওই সংস্থার দাবি, তাঁরা এমন এক বিশেষ পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণ শুরু করেছেন, যার ফলে মৃত্যুর ২০০-২৫০ বছর পর এক জন মৃত ব্যক্তি আবার বেঁচে উঠতে পারবেন।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ওই সংস্থায় ৫০০ জনেরও বেশি দেহ হিমায়িত অবস্থায় রাখা রয়েছে। সংরক্ষিত মস্তিষ্কের সংখ্যাও ২০০টির বেশি। অমরত্বের প্রত্যাশায় অনেক মানুষ এই সংস্থায় নাম নথিভুক্ত করতে শুরু করেছেন।
সংস্থার অমরত্বের দাবি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান সংস্থার ওই দাবিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছে। তবে লক্ষণীয় যে, এত বিতর্ক সত্ত্বেও স্যাম অল্টম্যান, জেফ বেজোসের মতো ধনকুবের ওই সংস্থায় টাকা ঢেলেছে।
ক্রায়োনিক্স পদ্ধতিতে সংরক্ষণের সূত্রপাত বিশ্বযুদ্ধের ৯ বছর পর। ১৯৫৪ সালে ক্রায়োনিক্স পদ্ধতিতে মানুষের বীর্য হিমায়িত করার পরীক্ষা শুরু হয়। সফলও হয় সেই পরীক্ষা। অনেক মহিলার মধ্যে হিমায়িত শুক্রাণু রোপনও করা হয়। এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণের নাম দেওয়া হয় ক্রায়ো সংরক্ষণ।
কিন্তু তখনও পর্যন্ত পুরো মানবদেহ সংরক্ষণ করে রাখা নিয়ে পরীক্ষা করার কথা কারও মাথায় আসেনি। এই নিয়ে প্রথম চিন্তাভাবনা করেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট এটিনগার।
১৯৬২ সালে দেহ সংরক্ষণ নিয়ে রবার্টের লেখা একটি বই হইচই ফেলে। সেখানে দেহ সংরক্ষণ করে এক জন মৃতকে পুনরায় বাঁচিয়ে তোলার সম্ভাবনার কথা লেখা ছিল। এর পরেই অনেক গবেষক বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
১৯৬৭ সালে চিকিৎসক জেমস বেডফোর্ডের দেহ প্রথম ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে হিমায়িত করে রাখা হয়।
এর পর রবার্টের হাতে তৈরি ক্রায়োনিক্স ইনস্টিটিউট এই পদ্ধতিতে দেহ সংরক্ষণ শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্য একটি সংস্থা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংস্থা কলেবরে বেড়েছে। মৃতদের তারা বাঁচিয়ে তুলতে পারে বলে দাবিও করেছে।
কিন্তু কী ভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ হয় এই সংস্থায়? ক্রায়ো পদ্ধতিতে সংরক্ষণ হল অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় মানুষের দেহকে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা।
ক্রায়ো সংরক্ষণ পদ্ধতিতে মৃতদেহ হিমাঙ্কের ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নীচে ঠান্ডা করে তা অতি সাবধানে তরল নাইট্রোজেনের একটি বিশাল পাত্রে ডুবিয়ে রাখা হয়।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিনেট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ ফুট লম্বা স্টেনলেস স্টিলের চেম্বারে এ ভাবে অনেক মৃত ব্যক্তির দেহ রাখা রয়েছে।
এই ভাবে দেহগুলি সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে সেই সব দেহ আবার বাঁচিয়ে তোলা! শুনতে অবাক লাগলেও এমনই দাবি সংস্থার। আর সেই কারণেই প্রায় ৫০০-র বেশি দেহ সংরক্ষণ করা রাখা হয়েছে ওই সংস্থায়। আরও অনেক মানুষ দেহ সংরক্ষণের আর্জি জানিয়ে ওই সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন।
ক্রায়োনিক্সে দেহ সংরক্ষণের খরচও নেহাত কম নয়। তবে খরচ করতে হবে কোটি টাকারও বেশি।
খরচসাপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি অন্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দেহ সংরক্ষণের ২০০-২৫০ বছর পর যদি কেউ আবার বেঁচেও ওঠেন, তা হলে ওই ব্যক্তি কোন পরিচয় নিয়ে বাঁচবেন? তাঁর যদি স্মৃতিবিলোপ হয়, তখনই বা কী হবে?
একই সঙ্গে এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, যদি কেউ দীর্ঘ সময় হিমায়িত থাকার পর সত্যিই বেঁচে ওঠেন, তা হলে তা কত ক্ষণের জন্য স্থায়ী হবে?
এই সব প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই বিজ্ঞানীদের একাংশ ক্রায়োনিক্সের তত্ত্বকে বুজরুকি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের অনুশীলনকে মুর্খামি বলেও দাবি করেছেন অনেক বিজ্ঞানী।
অনেকের আবার দাবি, যাঁরা সংস্থায় বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা আসলে লাভ দেখে বিনিয়োগ করেছেন। পুরো বিষয়টি মানা না মানার সঙ্গে বিনিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই।