আবারও পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সম্পর্কের আকাশে মেঘ। বিশেষ কারণে তরজা শুরু হল দু’দেশের মধ্যে। যা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
কিন্তু হঠাৎ কী হল দুই প্রতিবেশীর মধ্যে, যা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের রাজনীতি?
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ এক অনুষ্ঠানের। আয়োজন করেছিলেন খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর। সেই বৈঠকে অন্যতম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের কূটনীতিবিদেরা।
নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানের শুরুতে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। সম্মান জানাতে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান অনুষ্ঠানে উপস্থিত পাক প্রতিনিধিরা।
তবে অভিযোগ, সবাই উঠে দাঁড়ালেও পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন উঠে দাঁড়াননি আফগান কূটনীতিবিদ মহিবুল্লা শাকির এবং তাঁর সহযোগীরা। নিজেদের আসনে বসেই ছিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, শাকির পেশোয়ারের আফগান কনসাল জেনারেল।
পাকিস্তানের দাবি, তাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীতকে অপমান করেছেন মহিবুল্লা। এই ঘটনার নিন্দাও করেছে পাক সরকার।
অন্য দিকে, পাকিস্তানের তরফে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে আফগানিস্তান। তালিবানের দাবি, পাক জাতীয় সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্র এবং সুরের উপস্থিতির কারণেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের কূটনীতিবিদ।
শুনতে অবাক লাগলেও তালিবান সরকারের নিয়মনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন, কাবুলের কট্টরপন্থী তালিবান সঙ্গীত-সহ অন্য অনেক শিল্পের প্রতি অসহিষ্ণু।
শিল্পের প্রতি তালিবদের অনীহার কারণে দু’বছর আগে যখন তারা আবার ক্ষমতায় আসে, তখন সে দেশের অনেক গায়ক, সঙ্গীতশিল্পী এবং অন্যান্য শিল্পী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
তবে পাকিস্তান অবশ্য এ বিষয়ে কিছু শুনতে নারাজ। মঙ্গলবারের ঘটনার পর পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচের দাবি, আয়োজক দেশের সঙ্গীতের প্রতি এই ধরনের ‘অসম্মান’ কূটনৈতিক নিয়মের পরিপন্থী।
এক বিবৃতিতে মুমতাজ বলেছেন, ‘‘আমরা ইসলামাবাদ এবং কাবুল— উভয় জায়গার আফগান প্রতিনিধিদের কাছেই বিষয়টি নিয়ে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’
অন্য দিকে, আফগান দূতাবাসের মুখপাত্র শহিদুল্লাহ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না।’’
শহিদুল্লাহ বুধবার সংবাদমাধ্যম ডনকে বলেন, “পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় পেশোয়ারের আফগান কনসাল জেনারেল মহিবুল্লা শাকিরের বসে থাকার একমাত্র কারণ, জাতীয় সঙ্গীতে সুর রয়েছে। আপনারাও কল্পনা করতে পারবেন না যে এক জন ধর্মীয় পণ্ডিত সঙ্গীতের জন্য দাঁড়িয়েছেন।’’
যদিও পাকিস্তানের অনেকেই এই তত্ত্ব শুনতে রাজি হননি। মহিবুল্লাকে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কারের আহ্বানও জানিয়েছেন অনেকে।
অনেকে আবার পাকিস্তানের মর্যাদা বা আন্তর্জাতিক নিয়মের তোয়াক্কা না করা এক জনকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য খাইবার পাখতুনখোয়া সরকারেরও সমালোচনা করেছেন।
ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জল্পনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, আগে বন্ধুত্ব থাকলেও ২০২১ সালে তালিবরা দ্বিতীয় বার আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে চাপানউতর শুরু হয়েছে।
এর আগে বার বার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি)-কে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। পাকিস্তান জুড়ে সন্ত্রাসী হামলার জন্য টিপিপিকেই দায়ী করে সেই দেশ।
টিটিপির হুমকি মোকাবিলায় ইসলামাবাদের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও, কাবুলের তালিবান প্রশাসন এখনও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেই পাকিস্তানের দাবি।
চলতি বছরের মার্চে একে অপরের দিকে আকাশপথে হামলা চালানোর অভিযোগও ওঠে। অভিযোগ ছিল, আফগানিস্তানের মাটিতে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান। তাতে আফগানিস্তানে প্রাণহানিও হয়েছিল। পরে আফগানিস্তান তালিবান সরকারের সেই হামলার জবাবও দিয়েছিল।
সেই আবহেই পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা নিয়ে নয়া বিতর্ক তৈরি হল দু’দেশের মধ্যে।