Mullaperiyar Dam

এক রাজ্যের ‘টাইম বোমা’ দেখভালে অন্য রাজ্য! ফাটলে ক্ষতি ৪৫ লাখ মানুষের, উদ্বেগের নাম মুল্লাপেরিয়ার

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ কেরলের ইদুক্কি জেলার মুল্লায়ার এবং পেরিয়ার নদীর সঙ্গমস্থলে তৈরি একটি বাঁধ। কোচি থেকে ১৫০ কিমি দক্ষিণ-পূর্ব এবং ত্রিভান্দ্রাম থেকে ২০০ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৭ সালে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৬
Share:
০১ ২০

টাইম বোমা। যা প্রতি সেকেন্ডে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে বিস্ফোরণের দিকে। ফুরিয়ে আসছে সময়। যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে অঘটন। কেরলের ইদুক্কি জেলায় মুল্লাপেরিয়ার বাঁধকে সেই টাইম বোমা বলেই মনে করছেন কেরলের বাসিন্দাদের একাংশ।

০২ ২০

১৩০ বছরের পুরনো বাঁধটি কেরলের পাঁচটি জেলায় অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

Advertisement
০৩ ২০

মুল্লাপেরিয়ার কেরলের ইদুক্কি জেলার মুল্লায়ার এবং পেরিয়ার নদীর সঙ্গমস্থলে তৈরি একটি বাঁধ। কোচি থেকে ১৫০ কিমি দক্ষিণ-পূর্ব এবং ত্রিভান্দ্রাম থেকে ২০০ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৭ সালে। কাজ শেষ হয় ১৮৯৫ সালে।

০৪ ২০

ইদুক্কি জেলার থেক্কাডিতে পশ্চিমঘাটের ইয়েলা মালা পর্বতমালার কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮১ মিটার উপরে অবস্থিত বাঁধটি তৈরি করেছিলেন জন পেনিকুইক। সেই সময়ে বাঁধ দিয়ে আটকানো জল পূর্ব দিকে সরানোর জন্য মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সঙ্গে চুক্তিও হয়।

০৫ ২০

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধটির উচ্চতা ১৭৬ ফুট। দৈর্ঘ্য ১২০০ ফুট। তৈরি হয়েছে সুড়কি এবং চুনাপাথর দিয়ে। এই বাঁধের পাশেই রয়েছে পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান।

০৬ ২০

কেরলে পেরিয়ার নদীর উপর অবস্থিত হলেও এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ু।

০৭ ২০

খাতায়কলমে ওই বাঁধের সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা ১৪২ ফুট। ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে প্রথম বার ওই বাঁধের জলস্তর ১৪২ ফুটে উঠেছিল। কেরলে অবিরাম বৃষ্টির পরে ২০১৮-এর ১৫ অগস্ট জলাধারটি আবার ১৪২ ফুটের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল।

০৮ ২০

২০২১ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে উঠে আসে, মুল্লাপেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত ত্রুটি দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি বাঁধটি ভূকিকম্পপ্রবণ এলাকায় তৈরি হয়েছে বলেও জানানো হয়।

০৯ ২০

যদি বাঁধটি ভেঙে পড়ে, তা হলে ১২৯ বছরের পুরনো বাঁধটি ৩৫ লক্ষ মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

১০ ২০

তবে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সেই সংখ্যা এখন আর ৩৫ লক্ষে সীমাবদ্ধ নয়। মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের নিরাপত্তা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁধটি যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে। আর এখন যদি সেটা ভাঙে তা হলে এলাকার পর এলাকা ভেসে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ৪৫ লক্ষ মানুষ।

১১ ২০

সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এমএস মেনন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য পাইওনিয়ার’-কে বলেছেন, “বাঁধটির আনুমানিক জীবদ্দশা কয়েক দশক আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। এখন একমাত্র বিকল্প এই বাঁধটিকে বাতিল ঘোষণা করে একটি নতুন বাঁধ তৈরি করা।’’

১২ ২০

বহু দিন ধরেই মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ দিয়ে সংঘাত রয়েছে কেরল এবং তামিলনা়ড়ুর মধ্যে। মুল্লাপেরিয়ার বাঁধটি কেরলে অবস্থিত হলেও তামিলনাড়ু থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কেরলের অভিযোগ, অতীতে বহু বার বাঁধ থেকে আচমকা জল ছেড়ে মানুষকে বিপদে ফেলা হয়েছে।

১৩ ২০

ফলে এ নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকেই বিবাদ রয়েছে দুই রাজ্যের। জল ছাড়ার বিষয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একাধিক বার চিঠিও লিখেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনকে। মুল্লাপেরিয়ার নিয়ে দু’রাজ্যের সংঘাত গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও।

১৪ ২০

সেই বাঁধের স্বাস্থ্যই এ বার ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। মেননের কথায়, “নিরাপত্তার দিকগুলি ছাড়াও এই বাঁধ নিয়ে বিতর্ক যে ভাবে রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বাঁধটি পেরিয়ার নদী জুড়ে নির্মিত, যা আন্তঃরাজ্য নদী নয়। ফলে নতুন বাঁধ নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কেরল সরকারকে তামিলনাড়ুর থেকে কোনও সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার অপেক্ষা করতে হবে না।”

১৫ ২০

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের সুরক্ষা নিয়ে গবেষণা করা অন্য এক বিশেষজ্ঞে তথা অধ্যাপক এসকে গোঁসাইয়ের কথায়, জলাধারটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। গোঁসাই জানিয়েছেন, ১৯৯০-এর দশকে তাঁর গবেষণাতেই নতুন বাঁধ তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে।

১৬ ২০

তার পরে আরও সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে গিয়েছে। মুল্লাপেরিয়ারের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

১৭ ২০

গোঁসাই জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে জল লেগে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের চুন-সুড়কির দেওয়াল ক্ষয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, বাঁধটি যে কোনও সময়ে ভেঙে যেতে পারে। তবে বাঁধ ভাঙার সঠিক তারিখ এবং সময়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

১৮ ২০

উল্লেখ্য, মুল্লাপেরিয়ার নিয়ে কেরল এবং তামিলনাড়ু বিতর্ক এখনও বিদ্যমান। রামনাথপুরম, থেনি, ডিন্ডিগুল, শিবগঙ্গা এবং মাদুরাই— তামিলনাড়ুর এই পাঁচ জেলা তাদের পানীয় জল সরবরাহ, সেচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল।

১৯ ২০

পাশাপাশি তামিলনাড়ুর দাবি, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সময়ে সময়ে তাঁরা বাঁধ মেরামতির কাজ করেছে।

২০ ২০

অন্য দিকে মুল্লাপেরিয়ারের বদলে নতুন বাঁধ তৈরির দাবিতে সোচ্চার কেরলবাসীর দাবি, বাঁধ নিয়ে তামিলনাড়ুর কি-ই বা যায়-আসে। বাঁধ ভাঙলে ক্ষতি তো হবে কেরলের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement