শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে হরিণী অমরসূর্যকে বেছে নিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনুরাকুমার দিশানায়েকে। রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে পা রাখা পড়শি দেশের ১৬তম প্রধানমন্ত্রী হরিণী আদতে শিক্ষাবিদ। শ্রীলঙ্কার রাজনীতির ইতিহাসে হরিণী তৃতীয় মহিলা যিনি প্রধানমন্ত্রীর পদের দায়িত্ব নিতে চলেছেন।
শ্রীলঙ্কায় দশম প্রেসিডেন্ট হিসাবে কুর্সি দখল করেছেন জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা জেভিপির পলিটব্যুরোর সদস্য দিশানায়েকে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেয়েই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য হরিণীকে বেছে নিলেন অনুরাকুমার।
হরিণীকে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপল্স পাওয়ার (এনপিপি) নামের বাম জোট থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দীনেশ গুণবর্ধনের স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি।
৬ মার্চ, ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন হরিণী। সিরিমাভো বন্দরনায়েকে এবং চন্দ্রিকা কুমারতুঙ্গার পরে তিনি তৃতীয় মহিলা যিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন।
বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে হরিণী অমরসূর্যর নাম ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পদের পাশাপাশি অমরসুরিয়াকে বিচার, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং বিনিয়োগ-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতির সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হরিণী। তিনি একজন অধিকার কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও বটে। শ্রীলঙ্কার একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
৫৪ বছর বয়সি হরিণী জন্মসূত্রে সিংহলি হলেও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ পড়াশোনার হাত ধরেই। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলে বেড়ে ওঠেন হরিণী। পরে তাঁর পরিবার কলম্বোয় চলে আসে। সেখানে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় তাঁর।
তার পরে উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ভারতে থেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন দ্বীপরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেছেন হরিণী। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সময় থেকেই অমরাসূর্যর রাজনৈতিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় বলে ধরা হয়। যা পরবর্তী কালে শ্রীলঙ্কায় তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
হিন্দু কলেজের প্রাক্তন এই ছাত্রীর সাফল্যে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন বর্তমান শিক্ষিক-শিক্ষিকারাও। কলেজের অধ্যক্ষ অঞ্জু শ্রীবাস্তব কলেজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন সংবাদমাধ্যমে।
অঞ্জু বলেন, “হিন্দু কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এটি খুবই সম্মানের বিষয়। হরিণী ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কলেজে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন এবং আমরা তাঁর কৃতিত্বের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আশা করি হিন্দু কলেজ তাঁর সাফল্যের পথ তৈরিতে ভূমিকা পালন করেছে।’’
সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পরে তিনি নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফলিত নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও লাভ করেন হিন্দু কলেজের এই প্রাক্তন ছাত্রী।
আন্তর্জাতিক মানবিক ও উন্নয়ন খাতে কাজ করার জন্য শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন। মূলধারার রাজনীতিতে আসার পর তার রূপান্তর শুরু হয়। ২০১১ সালে যখন রাজাপক্ষে সরকার ক্ষমতায় ছিল, হরিণী তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে বেরিয়েছিলেন।
তার পরে যখন ২০১৫ সালে মাইথিরপালা সিরিসেনা সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন তিনি জেভিপির দিকে ঝুঁকে পড়েন।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সংসদ ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন হরিণী। নভেম্বরের শেষের দিকে সাংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। তার পরই একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন হরিণী ও অন্য মন্ত্রীরা।