60 years of 1962 India-China war

দোষ ছিল ভারতেরও? বাষট্টির সেই চিনা আগ্রাসনের ৬০ বছর, ফিরে দেখা ইতিহাস

চিন কোনও দিনই ম্যাকমহন লাইনকে দু’দেশের সীমান্ত হিসাবে মেনে নিতে চায়নি। বেজিং-এর মতে, ব্রিটিশরা ১৯১৪ সালে এই সীমান্তরেখা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর সেখানেই সংঘাতের ‘বীজ’।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ১৪:১৩
Share:
০১ ২২

১৯৬২-র ১৫ জুলাই। রবিবার। আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ছিল — ‘ভারতীয় ঘাঁটির সন্নিহিত অঞ্চল হইতে চীনাদের পশ্চাদপসরণ’। তার ঠিক ৯৬ দিন পরে ২০ অক্টোবর থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসসি) শুরু হয়েছিল চিনা ফৌজের আগ্রাসন।

০২ ২২

অরুণাচল প্রদেশ থেকে লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত এলএসির বিভিন্ন অংশে চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সেই হামলার জবাব দিতে শুরু করে ভারতীয় সেনা। সীমান্ত সংঘর্ষ গড়ায় পরবর্তী এক মাসের পুরোদস্তুর যুদ্ধে।

Advertisement
০৩ ২২

চিনা বাহিনীর এমন ‘এক পা পিছিয়ে দু’পা এগোনোর’ কৌশল পরবর্তী সময়ের একাধিক বার দেখা গিয়েছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় আকস্মিক হামলার ঘটনা।

০৪ ২২

৬০ বছর আগের সেই যুদ্ধে চিনা হামলার মুখে ভারতীয় সেনার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং ইতিহাসবিদদের বড় অংশ। এর জন্য নয়াদিল্লির ‘ভুল নীতি’কেই দায়ী করেন তাঁরা।

০৫ ২২

তাঁদের মতে চিনের প্রস্তুতি এবং অভিসন্ধি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণমেননের কোনও ধারণাই ছিল না। ভারতীয় সেনার কর্তাদের অধিকাংশও ভাবতে পারেননি চিন হঠাৎ হামলা চালাতে পারে।

০৬ ২২

১৯৫৪ সালে চিনের চেয়ারম্যান মাও জে দংয়ের সঙ্গে আলোচনায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে পাঁচটি নীতিমালার কথা বলেছিলেন নেহরু। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকেই বোঝা যায় পঞ্চশীলের প্রতি মোটেই দায়বদ্ধতা নেই চিনের।

০৭ ২২

লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত ভারত-চিন সীমান্তের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ৩,৪০০ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময়ে তা ছিল না। কারণ মাঝের অধিকাংশ এলাকাটাই ছিল তিব্বত, যার নিয়ন্ত্রণ তখন বেজিঙের হাতে ছিল না।

০৮ ২২

১৯৫৯ সালে এক তরফা ভাবে তিব্বতকে দখল করে চিনের কমিউনিস্ট শাসকেরা। ফলে ভারত এবং চিন বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পরস্পরের প্রতিবেশী হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই সংঘাতের আবহ তৈরির সূচনা হয়।

০৯ ২২

১৯৫৯ সালের অক্টোবরে লাদাখের কোঙ্গা গিরিপথে প্রথম দু’বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে নিহত হন ভারতীয় বাহিনীর ৯ জন। বরফঢাকা পাহাড়ে যুদ্ধের জন্য ভারত যে মোটেই প্রস্তুত নয়, সে দিনই তার আঁচ পেয়েছিল চিন।

১০ ২২

১৯৬২-র ১০ জুলাই লাদাখের গালওয়ানে ভারতের সেনার একটি চৌকিকে ঘিরে ফেলেছিল প্রায় সাড়ে তিনশো চিনা সেনা। লাউডস্পিকারে দীর্ঘ বাগ্‌বিতণ্ডার পরে তারা ফিরে যায়। ওই ঘটনার জেরে ভারতীয় সেনার ‘আত্মবিশ্বাস’ বেড়ে যায়।

১১ ২২

জুলাইয়ের শেষপর্বে নেহরু সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ‘ফরওয়ার্ড পলিসি’ গ্রহণ করে সেনা। যার সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন লেগহর্ন’। চিনা আগ্রাসনের সম্ভাবনার আঁচ পেলেই গুলি চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় সীমান্তে মোতায়েন সেনানীদের।

১২ ২২

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, সে সময় অরুণাচলে ম্যাকমহন লাইনের উত্তরে ভারতীয় সেনা, একাধিক ‘পোস্ট’ তৈরি করেছিল। দাবি তুলছিল থাগ-লা পর্বতশ্রেণি পর্যন্ত অঞ্চলই তাদের অধীন। হুঁশিয়ারি দিয়ে কাজ না হওয়ায় হামলা চালায় চিন।

১৩ ২২

ব্রিটিশ-অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল-এর বই ‘ইন্ডিয়া’স চায়না ওয়র’ জানাচ্ছে, সে সময় সরকার এমনকি, দিল্লির সেনা সদর দফতরের অনুমতি না নিয়ে সীমান্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু অফিসার ‘ফরওয়ার্ড পোস্টিং’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

১৪ ২২

১৯৬২ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেন্ডারসন ব্রুকস এবং ব্রিগেডিয়ার পিএস ভগতের তৈরি সরকারি রিপোর্টে চিন যুদ্ধের কারণ হিসাবে ‘ফরওয়ার্ড পলিসি’কে চিহ্নিত করা হয়েছিল বলে দাবি। ২০১৪-য় সেই রিপোর্টের একাংশ ফাঁস করেছিলেন সাংবাদিক নেভিল।

১৫ ২২

অরুণাচলের ধোলা বা খিনজামেন-সহ বেশ কিছু জায়গায় সেনার নিচুতলার ‘ফরওয়ার্ড পোস্টিং’-এর সিদ্ধান্ত যুদ্ধের অনুঘটক হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এমনকি, পরবর্তী কালে সেনার অন্দর থেকেও এমন অভিযোগ শোনা গিয়েছে।

১৬ ২২

বাষট্টির যুদ্ধে চিনা সেনার হাতে বন্দি ব্রিগেডিয়ার জন ডালভির লেখা ‘হিমালয়ান ব্লান্ডার: দ্য কার্টেন রেজার টু দ্য সাইনো-ইন্ডিয়ান ওয়র অব ১৯৬২’ সাংবাদিক ডি আর মানকেকরের ‘দ্য গিলটি মেন অব ১৯৬২’-র ছত্রে ছত্রে রয়েছে সামরিক ও রাজনৈতিক স্তরে ভুল পদক্ষেপের কথা।

১৭ ২২

সরকার এবং সেনা আধিকারিকদের সীমান্তের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞানতা, পেশাদারিত্বের অভাব, বাস্তববোধের অনুপস্থিতিকে বিপর্যরের কারণ বলে মনে করেন তাঁরা। কারণ, সে সময় নয়াদিল্লির অজ্ঞাতে সীমান্তে রসদ ও সেনা মোতায়েন করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল চিন।

১৮ ২২

১৯৬২-র ৮ সেপ্টেম্বর অরুণাচলের থাগ লা গিরিপথে প্রথম ম্যাকমহন লাইন পেরিয়ে চিনা বাহিনীর অনুপ্রবেশের খবর মেলে। সে সময় ভারতীয় সেনা ভেবেছিল, আগের মতোই এ বার তারা কিছু দিন পরেই ফিরে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

১৯ ২২

কয়েক দিন পরে ভারতীয় সেনার একটি বাহিনী অনুপ্রবেশকারী লাল ফৌজকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের পিছু হটতে হয়। পরবর্তী সময়ে ওই এলাকায় দু’বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ২০ অক্টোবর রাতে অরুণাচলের পাশাপাশি লাদাখেও শুরু হয় চিনা হামলা।

২০ ২২

২০ অক্টোবর রাতে চিনা বাহিনীর সেই অতর্কিত হামলায় গালওয়ানে নিহত হয়েছিলেন ৩৬ জন ভারতীয় সেনা। লালফৌজের হাতে যুদ্ধবন্দি হন মেজর এসএস হাসাবনিস। ৭ মাস বন্দিশিবিরে কাটানোর পরে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।

২১ ২২

ঘটনাচক্রে, সে সময় আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর ছিল আমেরিকা-সোভিয়েত সংঘাতের দিকে। কিউবাগামী পরমাণু অস্ত্রবাহী সোভিয়েত জাহাজকে আটকাতে আমেরিকার নৌবহরের টহলদারি ঘিরে উত্তেজনা ছিল চরমে। চিন সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছিল।

২২ ২২

২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলা যুদ্ধে অরুণাচলের বমডিলা থেকে লাদাখের আকসাই চিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল চিন। পরে পূর্ব সীমান্তের অধিকাংশ এলাকা থেকে তারা পিছিয়ে গেলেও আকসাই চিন-সহ লাদাখের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও তাদেরই দখলে।

সব ছবি আনন্দবাজার আর্কাইভস থেকে প্রাপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement