সারদিন কেমন যাবে, তা নাকি সকাল দেখেই বোঝা যায়। যদিও এই আপ্তবাক্যটি যে বহু বলিউডি ছবির ক্ষেত্রে খাটে না, এ কথা বোধ হয় হলফ করে বলতে পারেন আমির খান। একই দাবি করতে পারেন অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খানেরাও। বক্স অফিসে শুভারম্ভ ভাল হলেও তাঁদের বহু ছবির মধুর সমাপ্তি ঘটেনি।
আমির-শাহরুখদের মতো বহু তারকার ছবি প্রথম দিনেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তবে শেষমেশ সেগুলি বক্স অফিসে গোঁত্তাও খেয়েছে। এমন নজির কম নয়। তার মধ্যে পাঁচটি ছবির কথাই শোনা যাক।
বছরে হাতেগোনা ছবিতে দেখা যায় আমিরকে। ফলে তাঁর ছবির জন্য মুখিয়ে থাকেন অনুরাগীরা। তবে ২০১৮ সালে তাঁদের উৎসাহ যেন বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল। কারণ, সেই প্রথম অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে এক পর্দায় দেখা গিয়েছিল আমিরকে। ছবির নাম, ‘ঠগস অব হিন্দোস্তান’।
‘পিকে’ বা ‘দঙ্গল’-এর মতো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দেওয়ার পর পর আমিরের কেরিয়ারে এসেছিল ‘ঠগস অব হিন্দোস্তান’। প্রযোজক আদিত্য চোপড়ার সেই ছবিতে পরিচালকের আসনে বসেছিলেন বিজয়কৃষ্ণ আচার্য। আমির-অমিতাভের পাশে ছিলেন ক্যাটরিনা কইফ এবং ফতিমা সানা শেখ।
‘ঠগস...’ ঘিরে দর্শকদের যে কতখানি প্রত্যাশা ছিল, তা বোঝা গিয়েছিল ছবি মুক্তির প্রথম দিনে। মুক্তির দিনই ৫০ কোটির ব্যবসা করেছিল ছবিটি। সেটিই নাকি প্রথম হিন্দি ছবি, যা মুক্তির দিনেই এত টাকার ব্যবসা করে। তবে সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি আমিরেরা। ৩০০ কোটির বাজেটের সে ছবির আয় নাকি মোটে ৩৩৫ কোটিতে গিয়ে ঠেকে।
আমিরের আগেও ব্যর্থতার গ্লানির স্বাদ পেয়েছিলেন শাহরুখ। ১৯৯৫ সালে বড়দিনের মরসুমে ‘ত্রিমূর্তি’ ঘিরে বেশ শোরগোল হয়েছিল। মুকুল আনন্দের সে ছবির প্রযোজক ছিলেন সুভাষ ঘাই। শাহরুখ ছাড়াও তাতে জ্যাকি শ্রফ এবং অনিল কপূরের জুটির উপর ভরসা ছিল প্রযোজকের।
প্রথম দিনে নজির গড়েছিল ‘ত্রিমূর্তি’। সেটিই প্রথম হিন্দি ছবি, যা মুক্তির দিনে ১ কোটির ব্যবসা করেছিল। নব্বইয়ের দশকের সেই ছবিটি সব মিলিয়ে সাড়ে ১৩ কোটি টাকার ব্যবসা করলেও ‘ফ্লপ’ তকমা পেয়েছিল। কারণ ‘ত্রিমূর্তি’ তৈরি করতেই নাকি ১১ কোটি বেরিয়ে গিয়েছিল সুভাষের।
বলিউডে অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসাবে এক সময় বীরু দেবগণের ধারেকাছে কেউ ছিলেন না। অজয় দেবগণের বাবা ছবি পরিচালনাও করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ নামে ওই ছবিতে ছেলের পাশে বীরু এনেছিলেন অমিতাভকে। সুস্মিতা সেন এবং মনীষা কৈরালা জমিয়ে অভিনয় করেছিলেন।
অমিতাভ-অজয়ের জুটিতে ‘মেজর সাব’-এর সাফল্য দেখাতে পারেনি বীরুর ছবি। যদিও প্রথম দিনে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছিল ‘হিন্দুস্তান...’। তবে শেষমেশ নাকি প্রায় ১৪ কোটির ব্যবসা করে থমকায় ছবিটি।
বক্স অফিসে আলোড়ন তুললেও জে পি দত্তর ‘রিফিউজি’ শেষ পর্যন্ত দর্শকদের টানতে পারেনি। সীমান্ত রক্ষায় ভারতীয় সেনাদের জীবনের ঝলক দেখা গিয়েছিল সে ছবিতে। ছিল এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শরণার্থীর কাহিনিও। ২০০০ সালের ‘রিফিউজি’তে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে করিনা কপূরের উপস্থিতি ঘিরে তুমুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। দু’জনেরই সেটি প্রথম ছবি।
‘রিফিউজি’-তে অভিষেক-করিনার পাশে ছিলেন জ্যাকি শ্রফ এবং সুনীল শেট্টিও। প্রথম দিনে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার ব্যবসা করলেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি অভিষেকরা। বলিউডের অন্দরের খবর, সব মিলিয়ে ১৭ কোটির বেশি ব্যবসা করেছিল ওই ছবি।
চরিত্রের খাতিরে নানা রূপেই পর্দায় হাজির হয়েছেন আমির। ‘মঙ্গল পাণ্ডে: দ্য রাইজিং’ ছবির জন্য চুল বাড়াতে শুরু করেছিলেন। একটি পুরুষ্টু গোঁফও দেখা গিয়েছিল আমিরের মুখাবয়বে। তবে ভোলবদল করলেও ছবির ভাগ্য ফেরেনি।
যদিও প্রথম দিনে ৩ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা আয় করেছিল ‘মঙ্গল পাণ্ডে... ’, তবু কেতন মেহতার মতো দক্ষ পরিচালকও সে ছবিকে বাঁচাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নাকি প্রায় ২৮ কোটির ব্যবসা করে মুখ থুবড়ে পড়ে এই বড় বাজেটের ছবি।