আমি ও আমার ছেলে গত ১৭ বছর ধরে সরকারি চাকুরে স্বামীর কাছ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারায় খোরপোষ পাচ্ছি। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ১৮ বছর পূর্ণ হলেও কি সে খোরপোষ পাবে?
রিনা রায়, বাঁকুড়া
খোরপোষ সংক্রান্ত ধারাগুলি প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হল, সেই সমস্ত মহিলাকে সুরক্ষা দেওয়া, যাঁদের নিজের ও সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য নিজস্ব আয় নেই। স্ত্রী বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরে (কোথাও স্ত্রী-কে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, আবার কোথাও তিনি পরিস্থিতির কারণে সন্তান কোলে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন) তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে যেন অভুক্ত থাকতে না-হয় বা ভবঘুরের জীবন না-কাটাতে হয়, সেটাই নিশ্চিত করার জন্য এই আইন। শুধু স্ত্রী-সন্তানই নয়, বাবা-মায়ের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য করাও এই আইনের লক্ষ্য।
সাধারণত ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১২৫ নং ধারা অনুযায়ী, একজন মহিলা (স্ত্রী) আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। ওই কার্যবিধির ১২৫ নং ধারার ৪ নং উপধারাতে বলা আছে, যদি কোনও মহিলা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে না-পড়েন বা কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার না-করেন, তা হলে তিনি ওই ১২৫ নং ধারায় খোরপোষ পাবেন।
কিন্তু এই আইনের (১) নং উপধারার (বি) অংশে পরিষ্কার বলা আছে, একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান খোরপোষ পেতে পারে, বৈধ বা অবৈধ সন্তান হলেও, যে নিজেকে প্রতিপালনে অক্ষম। কথাটা ঘুরিয়ে আরও সহজ করে বলার চেষ্টা করলে এ রকম দাঁড়ায় নিজেকে প্রতিপালনে অক্ষম বৈধ বা অবৈধ কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান খোরপোষ পাবেন। আবার ওই (১) নং উপধারার (সি) অংশে বলা আছে, যদি সন্তান শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে অক্ষম হন বা দুর্ঘটনার কারণে শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে অক্ষম হন, তা হলে তিনি খোরপোষ পাবেন। মেয়েরা বিয়ে না-হওয়া পর্যন্ত খোরপোষ পাবেন। আইনে ‘মাইনর’ বা অপ্রাপ্তবয়স্ক বোঝাতে ‘ইন্ডিয়ান মেজরিটি অ্যাক্ট ১৮৭৫’ আইনের অধীনে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ শব্দটির সংজ্ঞাকেই মানা হয়েছে। ১৮ বছর বয়সকে প্রামাণ্য ধরা হয়েছে। তাই আপনার ছেলে খোরপোষ পাবে না।