• ছ’বছর আগে আমার দাদুর মৃত্যু হয়। তার পর দাদুর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে এবং দাদুর শ্যালিকা (যিনি গত ছাব্বিশ বছর ধরে আমাদের বাড়িতে বাস করছেন)— এই সাত জনের মধ্যে আমার দাদুর সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ হয়।
আমার প্রথম প্রশ্ন: দাদুর শ্যালিকা, যিনি বহু বছর ধরে আমাদের ওই বাড়িতে আছেন ও ভোটার-পরিচয়পত্রে যিনি দাদুর স্ত্রী হিসেবে পরিচিত, তিনি দাদুর সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারী কি না?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: সম্পত্তি সাত ভাগ হওয়ার পরেও কাকুরা আমার বাবাকে প্রাপ্য সম্পত্তির ভাগ দিতে রাজি নন। বিষয়টি নিকটবর্তী থানায় জানিয়েও লাভ হয়নি। বাবা কী ভাবে দাদুর সম্পত্তির ভাগ পাবেন? শুনেছি কেস-কাছারি, আইন-আদালত খুব ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এমন কিছু পরামর্শ চাই যাতে বাবা, দাদুর সম্পত্তির অংশ তাড়াতাড়ি পান।
অনুপম গিরি, পশ্চিম মেদিনীপুর
আপনার দাদুর মৃত্যুর পর সম্পত্তি সাত জনের মধ্যে সমান সাত ভাগে ভাগ হয়। মানে, তাঁদের মধ্যে একটি ‘মিউচুয়াল পার্টিশান’ হয়। নিশ্চয়ই, এ ক্ষেত্রে ‘রেজিস্টার্ড পাটির্শান ডিড’-এর মাধ্যমেই তা হয়েছিল। কিন্তু তখন দাদুর শ্যালিকাকেও (অথবা স্ত্রী) একটা অংশ দেওয়া হয়েছিল। কেন? কাকারা আপনার বাবার অংশ স্বীকার না-করলেও ওই ভদ্রমহিলাকে অংশ দিলেন কেন?
আপনি বলছেন, ওই ভদ্রমহিলা ছাব্বিশ বছর ধরে আপনাদের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। শুধু কি এই অধিকারে তিনি আপনার দাদুর সম্পত্তির ১/৭ অংশ পেলেন আপনার বাবার অন্য ভাই বোনদের কাছ থেকে? না কি অন্য কোনও অধিকার রয়েছে?
আমার সন্দেহ খুব জোরদার হচ্ছে, যখন আপনি বলছেন যে ভোটার আইডেন্টিটি কার্ডে ওই ভদ্রমহিলাকে আপনার দাদুর স্ত্রী হিসেবে দেখানো আছে। কেন? তা হলে কি তাঁকে (যাঁকে আপনি দাদুর শ্যালিকা বলছেন) দাদু আবার বিবাহ করেছিলেন? আচ্ছা, আপনার ঠাকুরমা কোথায়? এমনও তো হতে পারে যে, ঠাকুরমার মৃত্যুর পর তাঁর বোনকে দাদু বিয়ে করেন। তাই ভোটার আইডেন্টিটি কার্ডে দেখানো আছে দাদুর স্ত্রী হিসেবে। আর এটা নিশ্চয়ই আপনার বাবার সব ভাই-বোনদের জানা। সেই জন্যই ওই কার্ডে নাম তোলার সময়ে তাঁরা কেউই বিষয়টিতে আপত্তি করেননি।
আর যদি সত্যিই আপনার দাদু তাঁর স্ত্রী, মানে আপনার ঠাকুরমার মৃত্যুর পরে তাঁর বোনকে বিয়ে করে থাকেন, তা হলে হিন্দু আইনে তিনি স্ত্রীর মর্যাদাই পাবেন এবং সম্পত্তির দাবিদারও হবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর দাদুর সম্পত্তির অংশ পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আপনার বাবার অন্য ভাই-বোনেরা তা মেনেও নিয়েছেন। আর সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল, সাত জনের মধ্যে সমস্ত সম্পত্তির সমান ভাগ হয়েছে। এমন নয় যে, তিনি নিছক দাবি করেছেন এবং সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু সবাই একমত হয়েই তাঁকে ভাগ দিয়েছেন। হিন্দু আইনে প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়া স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির অংশ পেতেই পারেন। যদি আপনার কথা অনুযায়ী ওই ভদ্রমহিলা আপনার দাদুর দ্বিতীয়া স্ত্রী না-ও হন, তবুও তাঁর অধিকার মেনে তাঁকে সম্পত্তির অংশ দেওয়া হয়েছে। বরং এ নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি।
এ বার দ্বিতীয় প্রশ্নের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলি, বিষয়টি খুব পরিষ্কার নয় আমার কাছে। আপনার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে না আপনার বাবারা ক’ভাইবোন। এবং যে সাত ভাগে সম্পত্তি ভাগ হয়েছে, আপনার বাবা তাঁর অংশ পেয়েছেন কি না। যদি এমন হয়, আপনার বাবা একটি অংশ পেয়েছেন কিন্তু তিনি দখল পাচ্ছেন না, মানে তাঁকে দখল দেওয়া হচ্ছে না, তা হলে দেওয়ানি আদালতে দখল বুঝে নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন। কারণ আপনার দাদু কোনও উইল, দানপত্র, ফ্যামিলি সেটেলমেন্ট ডিড ইত্যাদি রেখে মারা না-গেলে, স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দু আইনে আপনার বাবাও আপনার দাদুর সম্পত্তির একটি অংশের অধিকারী।
অন্য দিকে, যদি এমন হয় অন্য ভাই বোনেরা আপনার বাবাকে তাঁর অংশ না দিয়ে নিজেরাই ভাগাভাগি করে তা নিয়ে নিয়েছেন, তা হলে সে ক্ষেত্রেও এখনই বাবাকে বলুন নিজের অংশ দাবি করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে। এক ভাইকে অংশ না-দিয়ে তাঁরা নিজেরা ভাগাভাগি করলেন কী করে? আচ্ছা, এই ভাগাভাগির বিষয়টি আপনারা জানলেন কবে? আপনি বলছেন, সম্পত্তি ভাগ হয়েছে ছ’বছর আগে। এত দিন আপনারা কি কোনও আপত্তি দাখিল করেননি? যদি না-করে থাকেন, তা হলে বলব একটু দেরি হয়েছে। ছ’বছর ধরে কেন আপনি অপেক্ষা করছিলেন, এ প্রশ্ন আদালতেও উঠবে। তবে বাবা তাঁর বক্তব্য ঠিকঠাক আদালতে পেশ করতে পারলে নিশ্চয়ই তিনি তাঁর অংশ পাবেন।
এই বিষয়টি থানায় জানিয়ে লাভ নেই। থানা কিছু করতে পারবে না। সম্পত্তি দাবি করতে চাইলে দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হতেই হবে।
আপনাকে জানাই, এই ধরনের মামলা একটু সময়সাপেক্ষ হলেও, ব্যয়বহুল নয়। প্রতিটি জেলায় জেলা জজের আদালতেও লিগাল এইড-এর অফিস আছে। আপনি বাবাকে সেখানে যোগাযোগ করতে বলতে পারেন। লিগাল এইড থেকে আপনি নিখরচায় আইনি সাহায্য পাবেন।
***
• আমার জমিটি এগরা পুরসভার অন্তর্গত। প্রায় ৬০ বছর আগে সেটি ভরাট ও উঁচু করার জন্য ওই জমির কিছুটা অংশ থেকে মাটি কাটা হয়েছিল। ফলে, ওই অংশে একটা পুকুর তৈরি হয়ে গেছে। যদিও এল আর পরচায় পুরো জমিটাই বাস্তু জমি হিসেবে রেকর্ড করা আছে এবং সেই মতো খাজনাও দেওয়া হচ্ছে।
এখন ওই পুকুর হয়ে যাওয়া বাস্তু অংশটিকে ভরাট করতে চাই। এতে কি বিএলআরও, মৎস্য দফতর বা পুরসভা থেকে কোনও আইনগত বাধা আসতে পারে?
চন্দনকুমার পাত্র, এগরা
আপনি পুকুর হয়ে যাওয়া অংশটি ভরাট করতে চান, এটা বোঝাতে গিয়ে আপনি সেটিকে ‘পুকুর কাম বাস্তু’ বলে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে এল আর পরচায় এটি বাস্তু জমি হিসেবে রেকর্ড করা আছে ঠিকই। তবে একই সঙ্গে কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, গত ৬০ বছর ধরে এটি একটি পুকুর। পুকুর মানে নিশ্চয়ই এখানে সারা বছর জলও থাকে। হয়তো বা মাছের চাষও হয় বা মাছ থাকে। এই অবস্থায় পুকুরটিকে ভরাট করতে গেলে আপনি আইনগত বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। জলাভূমি ভরাট সংক্রান্ত যে বিশেষ আইন রয়েছে, সেই অনুযায়ীই বাধার মুখে পড়বেন। বিশেষত, পঃ বঃ ইনল্যান্ড ফিশারিজ অ্যাক্ট, ১৯৮৪, যা ২০০৮ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ১৭-এ নম্বর ধারায় পরিষ্কার বলা আছে যে, এই ধরনের পুকুর বা জলাভূমি যা বছরের বেশির ভাগ সময় জলে ভরা থাকে, (হয়তো সেটি পুকুর নয়) সেটিও ভরাট করা যাবে না। আর আপনার ক্ষেত্রে তো গত ৬০ বছর ধরে এটি একটি পুকুর হয়ে রয়েছে। আপনি অবশ্যই আইনি বাধার সম্মুখীন হবেন। পুরসভাও আপত্তি করতে পারে।
তবে যেহেতু আপনি বলছেন যে, পরচায় এটি বাস্তু জমি বলেই রেকর্ড করা আছে এবং আপনি তার জন্য যথাযোগ্য খাজনাও দিচ্ছেন, তাই আপনি পুকুর ভরাটের জন্য আবেদন করলে হয়তো অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা সহায়ক হতে পারে।
***
• সম্প্রতি আমার জ্ঞাতিদাদা নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গিয়েছেন। স্ত্রী ছাড়া তাঁর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে রয়েছেন এক ভাইপো, এক ভাগ্নে এবং এক অবিবাহিতা বোন। আমি জানতে চাই
১) প্রয়াতের বিধবা স্ত্রী-ই কি প্রয়াতের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী?
২) প্রয়াতের স্ত্রীর মৃত্যুর পর, স্বামীর উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে কে/কারা? আমার ওই দাদার ভাইপো ও ভাগ্নে ? না কি স্ত্রীর ভাইপো ও ভাইঝিরা?
সামান্য রায়, কলকাতা
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলি, আপনার জ্ঞাতিদাদার সম্পত্তি পাওয়ার হকদার তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ আপনার বৌদি। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী, উত্তরাধিকার সম্পর্কিত যে ‘শিডিউল’ বা ‘তালিকা’ রয়েছে, তাতে এ সম্পর্কে বলা আছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে প্রয়াতের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির অধিকারিণী হবেন বিধবা স্ত্রী-ই।
আবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলব, আপনার বৌদির মৃত্যুর পর ওই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন আপনার দাদার ভাইপো ও ভাগ্নেরা। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, যদি কোনও সম্পত্তি স্বামীর কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর স্ত্রী পান, তা হলে ওই স্ত্রীর মৃত্যুর পর (নিঃসন্তান অবস্থায়) ওই সম্পত্তি আবার তাঁর স্বামীর তরফের আত্মীয়দের কাছে ফিরে আসবে।
(পরামর্শদাতা: আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়)