IPO

IPO: বাজারে ওমিক্রনের স্পষ্ট প্রভাব, তবু ডিসেম্বরেই কেন এত আইপিও?

শেয়ার বাজারের পরিসংখ্যান বলছে, আইপিও-র মাপকাঠিতে এই ডিসেম্বর মাস চলতি বছরের মার্চ আর নভেম্বরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে।

Advertisement

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:০৬
Share:

এই ডিসেম্বর মাস চলতি বছরের মার্চ আর নভেম্বরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে।

উৎসব রেশ এখন চারদিকে। এমনিতেই দিওয়ালি পরবর্তী সময়ে বড়দিন আর নববর্ষ মিলিয়ে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার তেজি থাকে। এ বার দেখা যাচ্ছে করোনার প্রকোপ যখন পড়তির দিকে, তখন শেয়ার বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। দু’এক বার পতন ছাড়া শেয়ার বাজারেও যেন উৎসবের মরসুম চলছে ডিসেম্বর মাস জুড়ে।

Advertisement

কী রকম সেই উৎসব? নয় নয় গোটা ১১ সংস্থা শেয়ার ছাড়ছে গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে। উদ্দেশ্য বাজার থেকে ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা তোলা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সংস্থাগুলো এই তেজি বাজারের সুযোগ নিয়ে আমজনতার কাছ থেকে যে টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছে, বাজারে শেয়ার ছাড়া তারই ফলশ্রুতি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সুদের বৃদ্ধি, লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি এবং করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের দাপাদাপি। বস্তুত এই সব কারণেই শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তোলার হিড়িক বলেও মনে করা হচ্ছে।

এমনিতে ডিসেম্বর মাসকে এই ধরনের ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা আইপিও-র পক্ষে খুব একটা সুবিধাজনক বলে ধরাও হয় না। কারণ পশ্চিমী বিশ্ব জুড়ে এখন ছুটি চলছে। তার প্রভাব তো দেশের শেয়ার বাজারে পড়বেই। তাই বিগত কয়েক বছর ডিসেম্বর মাসে এক থেকে বড়জোড় তিনটে করে আইপিও বাজারে এসেছে।

Advertisement

কিন্তু চলতি ডিসেম্বরের তেজি আইপিও বাজার বিগত বছরগুলোর সব হিসাব উল্টে দিয়েছে। শেয়ার বাজারের পরিসংখ্যান বলছে, আইপিও-র মাপকাঠিতে এই ডিসেম্বর মাস চলতি বছরের মার্চ আর নভেম্বরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। কারণ মার্চ আর নভেম্বর এই দুই মাসেই ন’টি করে আইপিও বাজারে এসেছিল। হিসাব মতো ডিসেম্বর মাসে ৫০০ কোটি টাকা থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার আইপিও এসেছে। এর চেয়ে বড় আইপিওগুলো অপেক্ষা করছে ২০২২ সালের জন্য।

প্রতীকী ছবি।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সাধারম ভাবে আইপিও একসঙ্গে কয়েকটা মিলে আসে। শেয়ারবাজার তেজি থাকলেই সংস্থা আইপিও ছাড়তে ভরসা করে। তবে এখন পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। পশ্চিমী বিশ্বের উপর করোনার তৃতীয় ঢেউ স্তিমিত হতে না হতেই করোনাভাইরাসের নয়া রূপ ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্রিটেনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, ১০৪ জন হাসপাতালে। ভারতেও আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকশো। ইতিমধ্যেই ৮৯টি দেশে ওমিক্রনের খোঁজ মিলেছে। ওমিক্রনের ধাক্কায় দু’দিনে সেনসেক্স ২০৭৯.১৩ পয়েন্ট পড়েছে। যার জেরে লগ্নিকারীরা প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ হারিয়েছেন।

ওমিক্রমের প্রভাব বিশ্ববাজারেও পড়তে শুরু করেছে। নেদারল্যান্ডসে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জার্মানিতেও কড়াকড়ি হচ্ছে। লন্ডন আর ওয়াশিংটনও শঙ্কায় রয়েছে। চিন্তিত ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোও।
অন্য দিকে বিশ্ব বাজারেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি রুখতে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড তো বাড়িয়েই দিয়েছে। পশ্চিমী অর্থনীতির এই দুই নেতৃস্থানীয় ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ালে তার প্রভাব ইওরোপ তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির উপরও পড়ে।

আর অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে সুদ যেখানে বেশি সেখানেই উদ্বৃত্ত অর্থের যাওয়ার কথা। ফলে ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি অন্যত্র ঘোরার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে এটা হওয়ার আগেই বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য আগ্রহ তৈরি হতেই পারে।
বিশেষজ্ঞরা ডিসেম্বর মাসের আইপিওগুলোর আরও একটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। আগেই বলা হয়েছে এই মাসের আইপিওগুলো বাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকা থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে আসছে। অর্থাৎ বিদেশি লগ্নিকারীদের সাহায্য না পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অসুবিধা হবে না আইপিওগুলোর। দেশি লগ্নিকারীরাই মূলত ত্রাতা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সেই ভরসাতেই নয় নয় করে খান এগারো আইপিও মাঠে নেমে পড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement