প্রতীকী ছবি।
সঞ্চয়ের জন্য কোথায় টাকা রাখবেন? এটা এখন শুধু চিন্তা নিয়ে প্রায় দুশ্চিন্তার জায়গা নিয়েছে। কোথায় বিনিয়োগ করবেন? ব্যাঙ্কে না শেয়ারে? যদি মিউচুয়াল ফান্ডে করতে হয়, তা হলে কী জাতীয় ফান্ডে? ঋণপত্রে না শেয়ারে?
সে দিন এখন আর নেই যখন সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত ছিল সোজা সাপ্টা। কারণ হাতের কাছে সুযোগও ছিল মাপা। জীবনের চাহিদা মেটানোর রাস্তাও ছিল হাতে গোনা। কিন্তু আজ আগের তুলনায় জীবনও যেমন জটিল. তেমনই তা যাপনের পদ্ধতিও হয়ে উঠেছে জটিলতর। তাই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত শুধু ঝুঁকির অঙ্কেই ঠিক করা যায় না। কত দিনের জন্য সঞ্চয় করব তাও সিদ্ধান্তের একটা বড় অংশ হয়ে উঠেছে।
বাড়ি করলে ধার নিতে হবে। কিন্তু বাড়ির আসবাবপত্র কেনা? কিনলেই তো হবে না। তা নষ্টও হবে। নষ্ট না হলে কিছু সময় বাদে হয়তো বদলাতে মন চাইবে। বাড়িতে বৈদ্যুতিন যন্ত্র রয়েছে। সেগুলোর দামও অনেক। তাও বদলাতে হতে পারে। হঠাৎ খারাপ হলেই বা কোথা থেকে টাকা আসবে? মাথায় রাখতে হবে তা-ও।
প্রতীকী ছবি।
তাই ঠিক করুন, কেন সঞ্চয় করছেন। বলতেই পারেন, এ আবার কেমন কখা। সঞ্চয় করতেই হবে, না হলে প্রয়োজনে টাকা কোথায় পাব? ঠিকই। কিন্তু প্রয়োজনগুলো জানেন কি? আর এই প্রয়োজনগুলোকে ঠিক মতো খাতায়কলমে গেঁথে তুলতে না পারলে কিন্তু আপনি আজকে দাঁড়িয়ে কতদিন বাদে কী অঙ্কের থোক টাকার দরকার পড়তে হতে পারে সে অঙ্ক কষে উঠতে পারবেন না।
একটা উদাহরণ নেওয়া যাক। আমরা যখন গাড়ি কিনি তখন কিন্তু টায়ারের দামের হিসাব রাখি না। মাথায় রাখি না, কয়েক বছর বাদেই টায়ার বদলাতে হবে। আর তা বদলানোর সময় যখন আসে তখন দেখা যায় চট করে খরচ করার মতো অত টাকা নেই! কারণ, গাড়ি যখন কিনেছিলেন তখন মাথায় ছিল না যে একটা চাকার দাম কত হতে পারে। তাই গাড়ি কিনলে তার টায়ারের মতো যন্ত্রাংশ বদলের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সেটা একটা উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যটা ঠিক হয়ে গেলে, বছরে ১০ হাজার কিমি গাড়ি চললে, ৫০ হাজার কিমি বা পাঁচ বছর বাদে আপনার টায়ার বদলাতে একটা থোক টাকা লাগবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্যটা ঠিক হয়ে গেলে সময়টাও ঠিক করা সহজ হয়ে গেল। আর সঞ্চয়ের অঙ্কটাও একই সঙ্গে ঠিক করা গেল।
প্রতীকী ছবি।
মজার ব্যাপার হল আগে থেকে লক্ষ্যটা ঠিক করে ফেলতে পারলে, নিজের পকেট থেকে কিন্তু টায়ারের দামের থেকে কম টাকা খরচ হবে। কারণ নিয়মিত যে টাকা আপনি জমাচ্ছেন, সে টাকা তো আয়ও হচ্ছে। আর তাই টায়ারের দাম যদি ৫০ হাজার হয়, তা হলে নিজের পকেট থেকে কিন্তু খরচ অনেক কম হবে। কতটা কম? এটা নির্ভর করবে আপনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কতটা বিচক্ষণ এবং অবশ্যই বাজারের অবস্থার উপরে।
আপনার লক্ষ্যের সময়কাল যদি তিন বছর হয়, তা হলে আপনার যে ধরনের সঞ্চয় করতে হবে, তা ২০ বছর হলে হলে সঞ্চয় নিশ্চয়ই এক রকম হবে না। যে ফান্ডে ২০ বছরের জন্য টাকা রাখলে আপনার লক্ষ্য পূরণ হবে সে ফান্ডে রাখা টাকায় আপনার তিন বছরের লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। কারণ, তাতে আশানুরূপ লাভ পাবেন না।
আপনি যদি চাকরির মাধ্যমে পেনশনের অধিকারী হন, তা হলে আপনার অবসরের পরে আয়ের জন্য টাকা সঞ্চয় করতে হবে না। যদি করেন তা হলে তা হবে সেই পেনশন খাতে যে আয় হবে তার সংযোজক হিসাবে। তাই আপনার দীর্ঘকালীন সঞ্চয়ের লক্ষ্যে বেড়াতে যাওয়া, সন্তানের বিবাহ এসবের উপরেই লক্ষ্য থাকবে বেশি।
কিন্তু যাঁর পেনশন নেই তাঁকে তো অবসরের কথা ভেবে সঞ্চয়ের একটা বড় অংশ সেই লক্ষ্যে সরিয়ে তার পরে অন্য সব কিছুর কথা ভাবতে হবে। আর তাতে বদলে যাবে সঞ্চয়ের পরিমাণও।
তাই প্রথমেই মাথায় রাখুন:
ক) সম্ভাব্য বিপদের কথা
খ) সঞ্চয়ের কারণ বা লক্ষ্য
গ) প্রতিটি লক্ষ্যকে প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকার দেওয়া
ঘ) লক্ষ্যই বলে দেব কত সময়ের জন্য সঞ্চয়। তাই সময়টাও পাশে রাখুন