প্রতীকী ছবি
চাকরি জীবনের শুরু থেকেই অবসর নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, এমন মানুষ নেহাতই কম। যৌবনের অনেকটাই মানুষের কেটে যায় সাময়িক আনন্দ-ফূর্তিতে। তবে বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গেই যখন অবসর জীবন কাটানোর বিষয় হিসাব করতে হয়, তখন বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক কিছুই বাদ পড়ে গিয়েছে আপনার পরিকল্পনা থেকে।
সমীক্ষা বলছে, ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ আর্থিক সমস্যায় ভুক্তভোগী। দেশ জুড়ে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে পরিকল্পনায় এই ধরনের ফাঁক বার্ধক্যে পৌঁছনো বেশির ভাগ মানুষকেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের উপরে আর্থিক ভাবে নির্ভর করতে বাধ্য করে।
তবে সাতটি ভুল এড়িয়ে চলতে পারলেই অবসর যাপন হবে স্বস্তির এবং ঝামেলামুক্ত।
বিমার উপর অবসরের পুরো আয়ের ভরসা নয়
অনেকেরই ধারণা, নানা ধরনের মোটা টাকা রিটার্নের জীবন বিমা করিয়ে রাখলেই অবসর জীবন নিশ্চিন্ত। এই রকম ভাবনায় থাকলে আপনার অবসরের সঞ্চয় নির্ভরযোগ্য জায়গা পাবে না কোনও দিনই। এর মূল কারণ হল বিমায় রিটার্ন বাবদ যে টাকা হাতে পাবেন, তা অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করলে সমান কিংবা বেশি টাকা পাবেন না।
অবসরের ভাবনা শুরু হোক আজই
অনেকেই চাকরি পাওয়ার পরে প্রথম দিকে ভাবেন অবসর জীবনের সঞ্চয় নিয়ে এখনই পরিকল্পনা না করলেও চলে। এতে আখেরে ক্ষতিই হয় সঞ্চয়ের। এমনকি নানা সমীক্ষাতেও বলা হয় যে, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই অবসরের কথা না ভাবার কারণে আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে নানা স্তরে। চাকরি শুরু করেই হাতে টাকা থাকলে মানুষ নিজের শখ পূরণে অনেক জিনিস কিনে ফেলেন। এর ক্ষতিকর প্রভাব হাতেনাতে মেলে অবসর জীবনে দাঁড়িয়ে। তার চেয়ে পূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে সঞ্চয় শুরু করুন আজ থেকেই।
ধনী হওয়ার নেশায় ঝুঁকি নেবেন না
অনেকে আবার মনে করেন বিনিয়োগ করলেই হাতে টাকা আসবে অনেক। এই ভাবনা থেকে সঞ্চয়ের জন্য টাকা বাড়াতে শেয়ার বাজারে বা ফাটকা ফন্দিতে মেতে ওঠেন। আর্থিক উপদেষ্টাদের মতে, দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে টাকা বাড়ানোর জন্য ভাল সংস্থার ভরসাযোগ্য শেয়ারে বিনিয়োগ করা খুবই ভাল উপায়। তবে আগে নিজে যাচাই করুন ভাল ভাবে। প্রয়োজনে বন্ড, পিএফ, ফিক্সড ডিপোজিট, এমন নানা পথে ঝুঁকির আনুপাতিক বিভাজন করে সঞ্চয় বাড়ান। এতে সঞ্চয় অনেক সুরক্ষিত থাকবে।
মোটা টাকা প্রতি মাসে অবসরের জন্য জমান
মাসের মাইনে হাতে এলে শুরুতেই সঞ্চয়ের জন্য সরিয়ে ফেলতে মন চায় না কারওরই। নানা খাতে খরচের জন্য রেখে দেওয়া টাকা এই ভাবে মাসেই বেরিয়ে যায়। সঞ্চয় করা হয়ে ওঠে না। প্রতি মুহূর্তে ‘অবসরের দেরি আছে’- এই ভাবনা থেকে হয় সঞ্চয় করা হয়ে ওঠে না, নয়তো টাকা জমানোর পরেই কোনও দরকার পড়লে হাত পড়ে অবসরের সঞ্চয়ে। এ দিকে বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, অল্প বয়স থেকেই অবসরের আয়ের উপর জোর দিয়ে সঞ্চয় করুন।
সঞ্চয়ের হিসেবনিকেশ থাকুক হাতের মুঠোয়
ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানোর প্রথম শর্তই হল ভাল মানের পরিকল্পনা, আর নিয়মিত হিসেব ঝালিয়ে দেখা। পাশাপাশি চোখ কান খোলা রাখুন, বাজারে নতুন প্রকল্প কী কী আসছে, কোন প্রকল্পে সুদ বেশি, কিন্তু ঝুঁকি কম—সবেতেই নজর থাক। নতুন সঞ্চয়ের সুযোগে বিনিয়োগ করে দেখুন। তবে ঝুঁকি ও রিটার্ন, এই দুই বিষয় খুব ভাল ভাবে যাচাই করে তবেই এগোবেন।
অবসর সঞ্চয়ের চাবিকাঠি হোক স্বাস্থ্য বিমা
অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্য বিমা একটু পরের দিকে করলেও চলে। এই ভাবনা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। বিনিয়োগের সময়ে কোনও ভাবেই স্বাস্থ্য বিমার দিকটা এড়িয়ে যাবেন না। অবসর জীবনের প্রধান ভরসার জায়গা নিশ্চিন্ত স্বাস্থ্য বিমা। তাই কষ্ট করে হলেও চালিয়ে যান।
সঞ্চয় প্রকল্প হোক অবসর পেরিয়েও দীর্ঘমেয়াদী
যদি অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার অবসর প্রকল্প ম্যাচিওর করে হাতে সব টাকা এসে যায়, তা হলে ভাবনা বাড়বে বই কমবে না। তাই অবসর নেওয়ার পরপরই সব প্রকল্প গুটিয়ে যাক, এমন ব্যবস্থা কখনও যেন না হয়। যেহেতু নতুন নতুন আয়ের পথ কমে আসে অবসরের পরে, তাই দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে টাকা জমান। জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, বয়স হলে চিকিৎসার বাড়তি খরচ- সব দিক ভেবে বিনিয়োগ করুন। সঞ্চয় প্রকল্প এমন ভাবে বেছে নিতে পারেন, যাতে অবসরের পরেও নিয়মিত কিছু প্রকল্প ম্যাচিওর করে। আবার পাশাপাশি পিপিএফ-এর মতো প্রকল্পগুলো চালু রাখুন, যাতে আপনি টাকা রাখতেও পারবেন, বাজারের চলতি হারের থেকে বেশি সুদও পাবেন, আবার সময়ে সময়ে তা থেকে টাকাও তুলতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।