অল্পবয়সি লগ্নিকারী যাঁরা অবসরের কথা মাথায় রেখে রিয়েল এস্টেট কিনতে চান, তারা এই সমস্ত ব্যাপারগুলি মাথায় রাখুন।
সাধারণ মানুষের পোর্টফোলিয়োতে রিয়েল এস্টেটের ভাগ ঠিক কতটা হওয়া উচিত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা আলাদা বলে ঠিক কী ভাবে সম্পদের বিভাজন হবে তার কোনও সর্বজনীন নিয়ম নেই। তবে সাধারণ কিছু নীতি প্রায় সবার জন্যই প্রযোজ্য।
বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ভারতীয় লগ্নিকারীরা রিয়েল এস্টেটের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক দেখিয়েছেন। অর্থাগম হলেই রিয়েল এস্টেটে লগ্নি করেন অনেকে। নিজের প্রাথমিক বাসস্থানের পরও দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা তারও বেশি জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি আকর্ষণ করেছে বিনিয়োগকারীদের। ফলত বহু পোর্টফলিয়োতে রিয়েল এস্টেট একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। ঠিক কী ভাবে তা পোর্টফোলিয়োকে সুরক্ষা দিচ্ছে অথবা সম্পদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় এসেছে।
লগ্নিকারীর ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়েও বলা যায় রিয়েল এস্টেটের রিটার্ন সর্বদা ভাল হয় না। অনেক সময়ই রিটার্ন খুব দেরি করে আসে এবং সেই কারণে সার্বিক ভাবে ইল্ড বেশ কমের দিকে হয়। যদি কেবল রেন্টাল ইল্ড দেখেন, অর্থাৎ বাড়িভাড়া় বা অফিস ইত্যাদি লিজ দিয়ে আয়, তা হলেও ঐতিহাসিক ভাবে দেখা যাবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা খুব কম সম্পদ ঘরে তুলতে পেরেছেন। মনে করুন আপনার ক্ষেত্রে ইল্ড কেবল দুই শতাংশ। তা হলে আপনি কি-ই বা করতে পারেন। মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে পারবেন কি? এই অতি জরুরী দিকটা আমরা মাঝেমধ্যে ভুলে গিয়ে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করার জন্য খুব বেশি মাত্রায় উদগ্রীব হয়ে উঠি।
রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনও রকম নালিশ না করেও বলা যায় যে সঠিক দাম নির্ধারণ (ও সেই সূত্র ধরে কেনা বা বেচা) তথা সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই অস্বচ্ছ ভাবে নেওয়া হয়ে থাকে। জমি বা ফ্লাটের একেবারে যথাযথ, একশো ভাগ ঠিক মূল্যায়ন প্রায় অসম্ভব কারণ এর জন্য একাধিক অস্বচ্ছ শর্ত পূরণ করতে হয়।
এ ছাড়াও যে অসুবিধাটি বহু বিনিয়োগকারী প্রায়শই সম্মুখীন হন তা হল লিকুইডিটির হঠাৎ অভাব, অন্তত সাময়িক ভাবে। জমি বাড়ির দাম কোনও বিশেষ কারণে কমে যেতেই পারে। সাধারণ ভাবে তার কোনও চটজলদি সুরাহা পাওয়া সম্ভব না হতেও পারে। রিয়েল এস্টেট কিনেছেন কিন্তু মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখার পরেও বিক্রি করার সময় ভাল বা মনের মতো দাম পাচ্ছেন না, এমন হামেশাই দেখবেন। এ ছাড়াও নানা রকম আইনি বা আয়করের মারপ্যাঁচে মুশকিলে পড়েছেন এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যাযও কম নয়।
প্রতীকী ছবি।
তুলনায় অল্পবয়সি লগ্নিকারী যাঁরা অবসরের কথা মাথায় রেখে রিয়েল এস্টেট কিনতে চান, তারা যেন এই সমস্ত ব্যাপারগুলি মনে রাখেন। যদি লিকুইডিটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় তা হলে পোর্টফোলিয়োতে রিয়েল এস্টেটের অংশ কমানো জরুরি। তবে এই নীতি সবার জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য নয়। তার পরিবর্তে একটু অন্য রাস্তায় হাঁটতে পারেন। অর্থাৎ আরও বাজারমুখী হতে পারেন। এখানে বাজার বলতে মূলত ইকুইটি বা ডেট-এর কথাই বলছি যেখানে লাভ-ক্ষতি নির্ধারণ করবে সিকিউরিটিজের দামের ওঠা পড়ার উপর। দেখে শুনে যদি নিজেই সরাসরি করতে পারেন তা হলে তো খুবই ভাল। তেমন সময় হাতে না থাকলে পেশাদার অ্যাসেট ম্যানেজার বেছে নিতে পারেন।
তা হলেও যদি রিয়েল এস্টেটই হয় আপনার পছন্দের অ্যাসেট ক্লাস, সে ক্ষেত্রে আপনি রিট অথবা রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে বিনিয়োগ করে এমন ফান্ড কিনতে পারেন। রিট প্রধানত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে ইদানিং কয়েকটি রিট-নির্ভর ফান্ড এ দেশের বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্যও পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশের বাড়িঘর, জমি, অফিস, স্টোরেজ, শপিং মল ইত্যাদিতে লগ্নি করে থাকে এই সংস্থাগুলির বেছে নেওয়া ব্যবসা। এ সবের অধিকাংশই কমার্শিয়াল, সংস্থার আয় আসে মূলত ভাড়া থেকে। এ রকম ফান্ড আগামী দিনে আরও আসবে বলে আশা করা যায়।