প্রতীকী ছবি।
আপনি খুব গুছিয়ে নানা রকম স্থায়ী ও নিশ্চিত আয়ের প্রকল্পে বিনিয়োগ করে নিজের অবসরকালীন পোর্টফোলিয়ো তৈরি করেছেন। বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি কোনও দিন। বরং চেয়েছেন হালকা ঝুঁকির নিরাপত্তা যাতে বাজারে বিনিয়োগ করলেও খুব একটা ওঠাপড়ার শিকার না হতে হয়। এমন ভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর থাকার পর, অবসরের প্রাক্কালে পেলেন তীব্র আঘাত। আঘাত হয়তো এল ডেট মার্কেট থেকেই। মূলত ক্রেডিট রিস্ক ও ইন্টারেস্ট রিস্কের রূপ ধরে। ঋণপত্রের বাজার এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে অবসরকালীন দুশ্চিন্তার বোঝা বেড়ে উঠল এক নিমেষে।
এটি খুব সাধারণ এক দৃশ্য যা প্রায়শই আমরা দেখি। এর প্রধান কারণ খুঁজতে সময় লাগে না। নির্দিষ্ট আয় কিছুটা নিশ্চয়তা দেয় বলে অনেকেই গা ছেড়ে দেন এবং বিকল্প খুঁজতে দেরি করেন। বাজারের কোনও ক্ষেত্রে কিছুই যে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে এবং এখানেই আসে নতুন ধরনের বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা।
ক্রেডিট রিস্ক তৈরি হয় যখন অর্থনীতির এক বা একাধিক ক্ষেত্রে ঋণপত্র দেয় সংস্থা ‘ডিফল্ট’ করে। অর্থাৎ সুদ বা মূল অর্থ ফেরত দিতে পারে না ঠিক সময়। বড় সংস্থার ক্ষেত্রে বাজারের সবাই তা সঙ্গে সঙ্গে জেনে যান। তুলনায় ছোটগুলির কথা শীঘ্র ভুলে যান আম লগ্নিকারী। এ রকম আমাদের দেশে অনেক বার হয়েছে। রেটিং সংস্থাও চটজলদি রেটিং কমিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। আইএলঅ্যান্ডএফএস-এর কথা এই প্রসঙ্গে বলা চলে।
প্রতীকী ছবি।
সুদ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে হয় দ্বিতীয় সমস্যা। সুদ যদি বাড়ে, ঋণপত্রের দামের পক্ষে তা ভাল নয়। এখানে সুদের হার ও ঝণপত্রের দামের বিপরীতমুখী টানাপড়েন অর্থাৎ ইনভার্স রিলেশনশিপের কথা মনে রাখতে হবে। এই মুহূর্তে এ দেশের আর্থিক ব্যবস্থা সুদের হার বাড়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বলেই মনে হয়। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে রেপো বদলায়নি। তবে মুদ্রাস্ফীতির প্রবল চাপের প্রেক্ষিতে এ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট ভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রকও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভাবে অবগত।
এই দুই ধরনের ঝুঁকি নিয়েই ডেট মার্কেট সর্বদা চিন্তিত। অবসরকালীন পরিকল্পনা বিনষ্ট করে দিতে পারে এই ঝুঁকিগুলি। এই প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য সেবির গঠন করা ‘রিস্ক ক্লাসিফিকেশন’ উল্লেখ্য। ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকে এটি চালু হয়েছে। প্রতিটি ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডের নির্দিষ্ট ঝুঁকির শ্রেণি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে তাতে।
ডেট ফান্ড ঘিরেই যাঁদের পোর্টফোলিয়ো, তাঁরা সেবির এই পদ্ধতির ব্যাপারে ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছেন আশা করা যায়। এখানে বলে রাখা ভাল যে, নির্দিষ্ট আয়ের পোর্টফোলিয়ো মানে কিন্তু
কেবলমাত্র নির্দিষ্ট বিনিয়োগ সম্বলিত নয়। স্থায়ী আমানতের চলন আজকাল আদপেই সন্তোষজনক নয়। এমনিতেই ভাল রেটিং-প্রাপ্ত ডিপোজিটগুলির সুদের হার খুবই কম। নিম্নমানের রেটিংয়ে ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। এ ছাড়াও আয়কর দেওয়ার পর আর সাধারণ বিনিয়োগকারির হাতে প্রায় কিছুই থাকেনা। ‘নেগেটিভ ইলড’ নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। আর যদি মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র কেনেন, তাতেও আহামরি কিছু আয় হবে না। এই মুহূর্তে স্বল্পমেয়াদের জন্যই ঋণপত্র থাকা সমীচীন।
সুতরাং সাবেকি ঋণপত্রের বিকল্প কী হতে পারে তাও জেনে নিতে হবে। ইকুইটি ভিত্তিক বিনিয়োগে ঝুঁকির চিত্র অনেকটাই আলাদা। সময় বা উদ্যোগের অভাবে যাঁরা সরাসরি শেয়ারে লগ্নি করতে উৎসাহী নন, তারা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করা কয়েকটি ইকুইটি ফান্ড বেছে নিতে পারেন। ঝুঁকির পরিমাণ অনুযায়ী তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে ইকুইটি এবং ডেট, দুইই আছে এমন ব্যালেন্সড অথবা হাইব্রিড ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। বিশেষ ভাবে অ্যাসেট আলোকেশন শ্রেণিভূক্ত ফান্ডগুলি যাচাই করে দেখা উচিত।