প্রতীকী চিত্র
যদি সঞ্চয় করতে হয়, তবে কিছু ঝুঁকি তো থাকবেই। সে’দিন আর নেই, যে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা রেখে নিশ্চিন্তে রইলেন। ঝুঁকি কিন্তু কম-বেশি থাকবেই, সে আপনি যেখানেই টাকা রাখুন না কেন। সুদের হারও তো আর এখন এক জায়গায় থাকে না। আপনার লক্ষ্য তো জমানো টাকায় যতখানি পারা সম্ভব লাভ করে নেওয়া। তাই না?
সেক্ষেত্রে আপনার সমাধান হল বিনিয়োগ। একজন ব্যবসায়ী ঠিক যেমন ভাবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন রোজগারের জন্য, আপনিও কিন্তু সঞ্চয় করেন সেই একই কারণে। শুধু তফাৎটা হল, আপনি আপনার টাকা অন্যকে দিচ্ছেন ব্যবসা করতে আর সেখান থেকে পাচ্ছেন লাভের টাকার ভাগ।
আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন এ কেমন কথা? তাই তো? ভাবুন ব্যাঙ্কের কথা। আপনি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলেন। তার উপর সুদ পেলেন। কিন্তু ভেবেছেন কি সেই সুদ কোথা থেকে এল? ব্যাঙ্ক আপনার টাকা অন্যকে ধার দিয়ে রোজগার করল ঋণের উপর সুদ হিসাবে। আর সেই সুদের টাকা থেকেই আপনাকে ভাগ দিল আপনার সঞ্চয়ের উপর সুদ বলে। তাহলে ব্যাপারটা কি রকম দাঁড়াল? এক ভাবে দেখলে ব্যাঙ্কে আপনি টাকা রাখলেন যাতে ব্যাঙ্ক সেই টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। আর আপনি সেই বিনিয়োগের লাভের ভাগীদার হয়ে হাতে পেয়ে গেলেন সুদের টাকা।
লক্ষ্য করুন, এক্ষেত্রেও আপনি কিন্তু বিনিয়োগই করছেন। টাকা খাটাচ্ছেন অন্যের ব্যবসাতেই।কম-বেশি ঝুঁকি নিয়েই তা করছেন। তবে আপনার দিক দিয়ে অনেকটাই নিরাপদ। যেহেতু আপনার সঞ্চয়ের উপর বিমা করা থাকে তাই ব্যাঙ্কের সঞ্চয় তুলনামূলক ভাবে কম ঝুঁকির। ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ে ঝুঁকি এড়ানোর আরও নানান বর্ম আছে। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, যেখানে ঝুঁকি কম সেখানে আয়ও কম। তাই মোদ্দা কথাটা হল, আপনি যদি সত্যিই আয় বাড়াতে চান, তবে তা করতে হবে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের মাধ্যমেই। তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে বরং আমরা দেখে নি মিউচুয়াল ফান্ড ব্যাপারটা কী।
শেয়ার আপনি সরাসরি কিনতেই পারেন। কিন্তু সেই পথে চলে সঞ্চয় বাড়াতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত শেয়ার বাজারের খবরও রাখতে হবে। জানতে হবে বাজারের অবস্থা। আরও অনেক কিছুর হাল-হকিকত। আমরা সবাই সেটায় অভ্যস্ত নই, তাই পারিও না। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে বিশেষজ্ঞ থাকেন। তাঁরাই আপনার হয়ে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। আপনার হয়ে শেয়ার কেনা-বেচা করেন। তাই অনভিজ্ঞ অবস্থায় শেয়ার বাজারে ঢুকে পড়ার চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমেই বিনিয়োগের বাজারে পা রাখা ভাল।
এভাবে শুরু করতে চাইলেও মিউচুয়াল ফান্ড কী ভাবে কাজ করে তা বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের কাছ থেকে টাকা তুলে একটা সাধারণ তহবিল তৈরি করে। আর সেই তহবিলের টাকাই মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য এই তহবিল তৈরি করা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে -- উদাহরণ, ইক্যুইটি বা কম্পানির শেয়ারে, তারা এই তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করে। মুল তহবিল যা তোলা হল -- ধরা যাক ১০০০ টাকা -- সেই তহবিল মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারে বিনিয়োগ করে। সেটাকে ১০ টাকার শেয়ারে ভাগ করা হল। এবার ধরা যাক আপনি যদি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে আপনি ১০ টা শেয়ারের অধিকারী। এবার আমরা পর পর এগোতে থাকি।
• শুরুতে তাহলে শেয়ার পিছু দাম দাঁড়াল ১০ টাকা।
• একেই আমরা প্রাথমিক নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা এনএভি (ন্যাভ) অর্থাৎ শেয়ার পিছু তহবিল মূল্য বলি।
• এবার দেখা গেল এই তহবিল বিনিয়োগের আয়ের কারণে বেড়ে ২ হাজার টাকায় দাঁড়াল।
• তাহলে আপনার শেয়ারের মূল্য গিয়ে দাঁড়াল ২ হাজার টাকায়
• সেই হিসেব শেয়ার পিছু ন্যাভ দাঁড়াল ২০ টাকায়।
• কারণ আপনার হাতে রয়েছে ১০০ টি শেয়ার।
আমরা এগোব এই অঙ্ক মাথায় রেখেই।মাথায় রাখবেন মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে শেয়ার না বলে ইউনিট বলাটাই দস্তুর এবং আমরা তাই বলব।
বিনিয়োগ করতে গেলে কিন্তু বাজারের উপর নিয়মিত নজর রাখতে হয়। সেটা কিন্তু সহজ নয়। মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখার যুক্তিটা আসলে এই খানেই। এই তহবিলের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হবে, কী ভাবে তা দেখার জন্য সংস্থাগুলিতে বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরাই আমাদের হয়ে বাজারে শেয়ার কেনা-বেচা করে তহবিলের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। তার জন্য আমাদের বিনিয়োগ থেকে একটা ছোট্ট অংশ কেটে নেওয়া হয়। এই হল ন্যাভের গল্প।যখন ইউনিট বিক্রি করবেন, তখন আপনি যা পাবেন তা হল সেই দিনের ইউনিটের ন্যাভ। অর্থাৎ, আপনি আপনার হাতে থাকা ১০০ ইউনিট বিক্রি করলেন। সেদিন হয়ত ন্যাভ ৩০ টাকা। তাহলে আপনি ফেরৎ পাবেন ৩০০০ টাকা। মোটের উপর আপনার ২ হাজার টাকা লাভ হল।