প্রতীকী ছবি।
“আমার যা রোজগার মশাই, তাতে ট্যাক্স-ফ্যাক্স দিতে হয় না। তাহলে কী হবে খামোখা জীবন বিমা কিনে?” ঠিক। কিনবেন না। সত্যিই তো বিমা কিনে কী হবে? দুদিন বাদে চোখ বুজলে ওই টাকা নিয়ে কী করবেন? অবিবাহিতরা আবার ভাবছেন, “আরে বাবা, বিয়ে-থা করিনি। তো কার জন্য রেখে যাব মরার পরের টাকা?” পকেটে জোর টানাটানি আছে এমন মানুষের যুক্তি আবার আরেক রকম- “মাস গেলে যা হাতে পাই তাতে সংসারই চলে না, তার উপর আবার বিমা!”
সব সত্যি। আবার এটাও সত্যি যে মরে গেলে বা না গেলে, ট্যাক্স থাকল বা না-থাকল, পরিবার আছে কি নেই, তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ বিমা আপনার সঞ্চয় নয়। বিমা হল আপনার জীবনের ঝুঁকির উপর ছাতা। তবে আপনি যদি আপনার আর্থিক দায়, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া, বকেয়া ঋণ- সব অন্যের ঘাড়ে চালান করতে চান এমনকী পরিবারকে পথে বসিয়েও, তাহলে আর বিমার কথা ভাববেনই না।
কিন্তু ভাবুন তো, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আপনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাসপাতালে আপনার চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবারকে আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততে হল, আর আপনি মারা গেলেন! এবার কে চোকাবে এই দায়? পরিবারে স্ত্রী-সন্তানদের ধার-দেনায় ডুবিয়ে আপনি বিদায় নিলেন। এটাও তো কাম্য নয়।
অতএব, এটা মাথায় রাখুন যে বিমা কিন্তু সঞ্চয় নয়। এটাই আপনার প্রথম পাঠ। জীবন বিমা হল আপনার জীবনের ঝুঁকির ছাতা। আর এটাই আমরা বুঝতে চাই না। বিমাকে সঞ্চয় হিসাবে দেখা কিংবা আয়কর থেকে বাঁচার রাস্তা হিসাবে দেখাটাই মস্ত ভুল।
ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা আইআরডিআই আমাদের দেশে বিমার সংস্থা ও বিমার নানান ধরনগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আমাদের দেশে মাত্র ২.৭৪ শতাংশ মানুষের বিমা আছে। উল্লেখ্য, বিশ্বে আর কোনও দেশে বিমার বিস্তারের হার এতখানি কম নয়। শুধু তাই নয়, যাঁরা বিমার আওতায় আছেন তাঁদের যদি ১০০ টাকার বিমার প্রযোজন থাকে তাহলে তাঁরা মাত্র সাত টাকা আশি পয়সার ব্যবস্থা করেছেন বিমার পথে! আমাদের দেশে তাই রোজগেরে মানুষটি চলে গেলে এত বেশি সংখ্যক পরিবার পথে বসে যায়!
মনে রাখবেন, জীবন বিমা করা থাকলে আপনার হঠাৎ করে ভাল-মন্দ কিছু একটা হয়ে গেল আপনার পরিবারটি অন্তত পথে বসবে না। গোটা পাঁচটা কারণ তো হাতে গুনেই বলে দেওয়া যায়। মাথায় রাখুন-
ক) আপনার অবর্তমানে আপনার রোজগার থাকবে না, কিন্তু থেকে যাবে কিছু দায়, বাজারের ধার ইত্যাদি। বিমা করা থাকলে এই নিয়ে আপনার রেখে যাওয়া মানুষদের ভাবতে হবে না।
খ) পাশাপাশি, বিমা আপনার সঞ্চয়ের রাস্তাও হতে পারে। যা থেকে আপনার পরিবার আপনার অবর্তমানে খানিকটা হলেও আর্থিক স্বস্তি খুঁজে পাবে।
গ) এমন কিছু বিমা আছে যা আপনার জীবদ্দশাতেই আয়ের উৎস হয়ে উঠতে পারে এবং আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের।
ঘ) বিমা তো অবশ্যই কর বাঁচানোর একটা উপযুক্ত রাস্তা।
ঙ) ধার করলে আপনার অবর্তমানে তা শোধ করতে তো বটেই, এমনকী ঋণ নিতেও সাহায্য করতে পারে বিমা।
তাই আর না ভেবে, জীবনের ঝুঁকি ও পরিবারের কথা ভেবে জীবন বিমার কথা ভাবুন। কিন্তু বিমা কেনার সিদ্ধান্ত নিলে কথা বলুন দক্ষ কোনও উপদেষ্টার সঙ্গে। কারণ, জীবন বিমা নানা রকমের হয়। কী কী বিমা আপনার কেনা উচিত, কোনটা আপনার চাহিদার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে তা বেছে নিতে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারেন একজন উপদেষ্টাই।