ফার্স্ট স্লিপ

ভিসা ছাড়া পাকিস্তানে ঢুকেছিলাম শুধু জাহিরের অতিথি বলে

বাইশ গজের দশ বন্ধুর গল্প। আজ পর্ব ৮। লিখছেন কিশোর ভিমানীদুই প্রতিবেশী দেশের গভীর বন্ধুত্বকে চশমাপরা দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যানটি কেবলই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এর তুলনা পেতে কুটনীতিক, মিডিয়া টাইকুনদের অনেকের নাম ভাবাটা বেশ মুশকিল। এমনকী পৃথিবীর তেমন মানুষজনের মধ্যেও এমন অসংখ্য নমুনা দেখানো খুব শক্ত। এমন মানুষকে ইংরেজ ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক জন আর্লট বর্ণনা করতেন “ঈশ্বরের কৃপাধন্য মায়াবী জাদুকর” বলে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০০:১৮
Share:

নয়া দিল্লি, ২০১৩। ছবি: প্রেম সিংহ

দুই প্রতিবেশী দেশের গভীর বন্ধুত্বকে চশমাপরা দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যানটি কেবলই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এর তুলনা পেতে কুটনীতিক, মিডিয়া টাইকুনদের অনেকের নাম ভাবাটা বেশ মুশকিল। এমনকী পৃথিবীর তেমন মানুষজনের মধ্যেও এমন অসংখ্য নমুনা দেখানো খুব শক্ত। এমন মানুষকে ইংরেজ ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক জন আর্লট বর্ণনা করতেন “ঈশ্বরের কৃপাধন্য মায়াবী জাদুকর” বলে।

Advertisement

মহম্মদ আজহারউদ্দিন যে ব্যাটিং-এর রোল-মডেল হিসেবে জাহিরকে বেছে নিয়েছিল তাতে অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই। যত ইচ্ছে খুঁজুন, দেখবেন, জাহিরের পরে ওর মতো দক্ষ, আকর্ষণীয় মারকুটে ব্যাটসম্যান পাকিস্তান আর তৈরি করতে পারেনি। আশ্চর্যের নয় এও।

ইমরান ছিল অভিজাত আর মিয়াঁদাদ প্রতিটি ইঞ্চিতে হট্টগোল পাকানো একজন মানুষ। অন্য দিকে জাহির সব সময় মুগ্ধ করত। ও হচ্ছে মিডিয়ার ‘ডার্লিং’। আদ্যন্ত টিমম্যান। এই তিনজন মিলে সত্তরের শেষ আর আশির দশকের গোড়ায় পুরোপুরি রাজ করে গেছে।

Advertisement

ওই সময় পাকিস্তান যদি কোনও সিরিজ হারত, বিশেষজ্ঞরা বলত, দলটা হল ‘কালেকশন অব সুপারস্টার’, কিন্তু সত্যি করে ‘টিম’ বলতে যা বোঝায়, তেমন নয়। আর যখন জিতত, তখন ক্রিকেট-লিখিয়ে বা ধারাভাষ্যকাররা বলতেন, এরা এমনই একটা দল, যাদের নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।

এই মহাতারকায় ঠাসা দলটার সঙ্গে আমাদের মোলাকাত হল ১৯৭৮-এ। মাঠকাঁপানো সিরিজ। নামগুলো একবার ভাবুন— মজিদ খান, মুস্তাক মহম্মদ, সরফরাজ, ওয়াসিম বারি, মুদাস্সর নজর। তার সঙ্গে ওপরে যাদের নাম বললাম তারা। স্মরণীয় সফর। যেমন মাঠে, তেমনই মাঠের বাইরে।

লাহৌরে পাকিস্তান বোর্ডের রিসেপশনে জাহিরের সঙ্গে দেখা। সফরের দ্বিতীয় দিন। ও বরাবরই খুব ভাল সঙ্গী। জাহির আমাকে জাভেদ বার্কির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। তারপর একে একে অসাধারণ ধারাভাষ্যকার ওমর কুরেশি, ব্যাটিং-কিংবদন্তি হানিফ মহম্মদ, ‘পাকিস্তানের দিলীপকুমার’ ট্র্যাজিক-অভিনেতা মহম্মদ আলি আর ওদেশের ‘নাইটিঙ্গল’ নূরজাহান। পরের দিনগুলোর ভিত্তিটা বেশ পাকাপোক্ত করার জন্য সে রাতে প্রচুর আপেলের জুস আর বিরিয়ানি ছিল মেনুতে।

তখন গুলাম আলি যুবক বয়েসে। আমি ওর ব্যাপারে জাহিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। গুলাম সেই সময়কার উঠতি প্রতিভাবান একজন গজল গাইয়ে। যদিও তখনও মেহদি হাসানের ছায়ায় রয়ে গেছে। সে যাই হোক, এটা শুনে জেড (ওকে সবাই এই নামেই ডাকত) কী করল জানেন, সাততাড়াতাড়ি একটা প্রাইভেট কনসার্ট বসিয়ে দিল। সফরকারী দলের ক্রিকেট-ভ্রাতৃত্বের জন্য। ক্রিকেটার ছাড়াও সেখানে আমন্ত্রিত হলেন ভারতীয় কূটনীতিক হিমাচল সোম, এইচএমভি-র (তখন এমনই নাম) কলকাতার কর্তা অনিল সুদ।

আদ্যন্ত টিমম্যান, মিডিয়ার ডার্লিং

সে এক স্মরণীয় সন্ধ্যা। কাবাব, নিহারি, তার সঙ্গে ‘চুপকে চুপকে রাতদিন’ —সবাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল, একমাত্র আমার মতো নিরামিষাশী মানুষ ছাড়া!

পুরো ব্যাপারটা ভাবলে এত অবাক লাগে! কেন বলছি, ধরুন, কোনও একজন পাকিস্তানি ভারতে সফরে এসে আমাকে মহম্মদ রফি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমি ঠিক এমনই আয়োজন করতাম? তবে হ্যাঁ, দিলীপকুমার আর অমিতাভ বচ্চন করেছিলেন, সে কথা পরে বলছি।

আপাতত এটুকু বলাই যথেষ্ট, দেশের লোকজনদের তুলনায় জাহির বেশির ভাগ সময়ই ভারতীয় শিবিরে সময় কাটাত। সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা দিত, খেলোয়াড়দের সঙ্গে মজা করত, বিশেষ করে সদ্য দলে ঢোকা কপিলদেব আর অদম্য বিষেন সিংহ বেদীর সঙ্গে।

আমি ফজল মেহমুদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। জেড গাড়ি নিয়ে লাহৌরে ওর বাড়িতে নিয়ে গেল। ফজল তখন পুলিশ কমিশনার। সে সময় পাকিস্তানে মার্শাল ল’ চলছে।

মনে পড়ে, গভীর রাতে আমরা ফিরছি। সুটলেজ রেঞ্জার্সের কয়েকজন পুলিশ রাস্তায় আমাদের গাড়ি আটকালো। কালো পোশাক, হৃষ্টপুষ্ট চেহারা। লম্বা। জায়গাটা ম্যাল রোড। অ্যালকোহল তখন একেবারেই নিষিদ্ধ। এ দিকে গাড়িতে আমরা চারজন, প্রত্যেকেই অরেঞ্জ জুসের চেয়ে বেশি কিছু খেয়েছি! আমি, জাহির ছাড়া, গাড়িতে আর ছিলেন পিআইএ-র একজন পাইলট আর বোর্ড অব সিলেক্টর্স-এর চেয়ারম্যান।

পুলিশ দেখেই জাহির কিন্তু তক্ষুনি কাজে লেগে পড়ল। ওদের বলল, “ইয়ে হামারে মেহমান হ্যায়, হিন্দুস্তান কি কমেন্টেটর। ইনসে মিলিয়ে।” আমি গাড়ি থেকে নেমে বিশাল চেহারার পুলিশ অফিসারের সঙ্গে হাত মেলালাম। অমন একটা স্পর্শকাতর সফরে নির্দেশ ছিল অতিথিদের প্রতি সব সময় ভদ্রসভ্য থাকতে হবে। তার জন্যই ওরা আমাদের সে যাত্রায় ছেড়ে দিল।

পরে আরেকটা সফর। সালটা ১৯৮২-৮৩। সবে করাচির তাজমহল হোটেলে উঠেছি। ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বার করছি. তখনই রেঞ্জ রোভার হাঁকিয়ে জাহির হাজির। আমার সুটকেস-টুটকেস নিয়ে সোজা ওর গাড়িতে উঠিয়ে দিল। আমায় নিয়ে তুলল গুলশনে ওর প্রাসাদোপম বাড়িটায়। করাচির বাকি ক’টা দিন আমি ওর কাছেই থাকলাম। একবার শুধু আধা-সিরিয়াস হয়ে বলেছিলাম, এরকম ব্যক্তিগত ভাবে কারও কাছে থাকাটা কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র আইনে বাধে। শুনে জেড সাত তাড়াতাড়ি বলল, তুমি এটা বলতেই পারো যে, করাচির সাগরপারে যেখানে উঠেছি, তার নাম হোটেল জাহির!

অসাধারণ ছিল দিনগুলো। সন্ধেবেলায় আমার কারও কারও সঙ্গে দেখা করার থাকত। পিআইএ-র চেয়ারম্যান মিস্টার দাউদপোটা, নিয়াজির প্রাক্তন জেনারেল, আর্মড ফোর্সের লোকজন, এছাড়াও বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য নাগরিক। বাংলাদেশি টাইকুন সিকান্দার হালিম অভিনয় জগতের দুজনের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিলেন — বাবরা শরিফ আর নাদিম। সিকান্দারের কথায় ওঁরা হলেন পাকিস্তানের উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেন।

এর মধ্যে ১৯৭৯-তে একটা পুরোদস্তুর সফরে পাকিস্তান ভারত ঘুরে গেছে। ওটাও একটা স্মরণীয় সফর। ওই সফরে এসে জাহির, মজিদ আর সেই অসাধারণ ধারাভাষ্যকার ইফতিকার আহমেদ ম্যাচের পরে সন্ধেগুলোয় আমাদের বাড়িতে কাটাত। টি-ইন্ডাস্ট্রির আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব, সংবাদমাধ্যম আর টালিগঞ্জের লোকজনের সঙ্গে দেখা করত।

আমাদের ক্লাবগুলো জাহিরের খুব পছন্দের ছিল। বিশেষ করে সিসি অ্যান্ড এফসি। আর অবশ্যই ওর খুব প্রিয় ছিল বিরিয়ানি। ওই সফরেই মুম্বইয়ে গিয়ে জাহির আর ওর তখনকার স্ত্রী নাজমা পার্টি আর বিভিন্ন বাড়ির নেমন্তন্ন সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল — কার না কার সব ইনভিটেশন— পরমেশ্বর গোদরেজ, আশা শর্মা, অভিনেতা দিলীপ কুমার, অমিতাভ বচ্চন, মিডিয়া টাইকুন খালিদ আনসারি ... আরও অনেকের! পার্টি যতই করুক, পরদিন ক্রিকেটটা কিন্তু ওরা জমিয়ে খেলত।

১৯৮৭-র বিশ্বকাপ। আমি পাকিস্তানে গিয়ে কভার করব ঠিক করলাম। ওই সময় জাহিরের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। গাড়ি নিয়ে শিয়ালকোটে আমরা ওর দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। ছিলামও সেখানে ওদের পূর্বপুরুষদের ভিটেয়।

লাহৌরে যাঁদের কাছে উঠলাম, তাঁরা আবার জাহিরের খুব ভাল বন্ধু— আসলাম খান আর সাবিহা। ওঁরা আমার জন্য নিরামিষ খাবার রান্না করে দিতেন। সাদা ভাত আর ডাল আমার এত পছন্দের দেখে প্রচণ্ড অবাকও হয়ে যেতেন। “এগুলো তো অসুস্থ লোকজনরা খান”। আসলে পাকিস্তানের রেওয়াজই হল ডালের মধ্যে কুচি কুচি করে মাংস দিয়ে পোলাও-এর সঙ্গে পরিবেশন। তার সঙ্গে পাঁঠার কী মুরগির মাংস।

রাওয়ালপিন্ডিতে পঞ্জাবের প্রধান বিচারপতি শওকত ঘোরায়া আমাকে ডিনারে নেমন্তন্ন করলেন। জাহির আগেভাগেই ওঁদের বলে দিয়েছিল, আমি নিরামিষাশী। পার্টিতে আমরা যখন পৌঁছলাম শওকতসাহেব এগিয়ে এসে সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন, “আজকের জন্য বাজার থেকে সব রকমের আনাজপাতি এনে রেখেছি।” আসলে হয়েছে কী, নিরামিষাশি বলতে উনি ভেবেছেন, যাঁরা খুব বেশি পরিমাণে শাকসবজি খান। ফলে মাংস, মাছ, পোলট্রির যাবতীয় খাবারদাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হল প্রচুর বেগুন, ঢেঁড়শ, করলা, বিন! কোনও মতে ব্যাপারটা ম্যানেজ করেছিলাম! কিন্তু কী অসাধারণ ছিল সেই সন্ধ্যা!

শওকতসাহেব একটা প্রাইভেট মেহফিলের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে গাইতে এসেছিলেন বিখ্যাত গজল-গাইয়ে আতাউল্লা খান। আতাউল্লা ছিলেন বলিউডে কপূর পরিবারের অসম্ভব পছন্দের গায়ক।

আতাউল্লা বলছিলেন, বছর কয়েক আগে শাম্মি কপূরের জন্য একটি কনসার্টে যেতে গিয়ে লাহৌর এয়ারপোর্টের পথে তিনি ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। যে জন্য বেশ কয়েক মাস তাঁকে হাসপাতালে কাটাতে হয়। যখন জ্ঞান ফেরে, জাহির বলছিল, আতাউল্লার প্রথম কথাটাই ছিল শাম্মি সাহেবকে যেন জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি ক্ষমাপ্রার্থী! ভাবুন একবার! ভারতকে খুব ভালবাসতেন আতাউল্লা। এ ধরনের মানুষদের কি শুধু কুটনীতির ছায়ায় বিচার করা যায়!

আশির দশকের শেষাশেষি। জাহির তখন এক ভারতীয় মহিলার পাণীপ্রার্থী। পরে তাকে ও বিয়েও করে। ভদ্রমহিলার মুসলিম নাম ছিল সামিনা। অসম্ভব ভাল একজন ‘হোস্ট’। জাহিরের দুর্দান্ত সঙ্গীও। অসাধারণ একজন ইন্টিরিয়র ডেকরেটর আর আসবাব-বিশেষজ্ঞ হিসেবে করাচিতে ওর পরিচিতি।

জাহির আর সামিনার বিয়ের সময়কার কথায় ফিরে যাই। আশির শেষ। দুবাই। আমি শারজার একটা হোটেলে উঠেছি। তখন মাঝরাত। হঠাৎ একটা জরুরি ফোন পেলাম রিসেপশন থেকে। চোখ কোচলে ঘুম থেকে সবে উঠেছি, ওরা বলল, আমার জন্য একটা মার্সিডিজ অপেক্ষা করছে।

খবর নিয়ে জানলাম, মেসেজটা অনেক আগের, কিন্তু যেহেতু আমি ‘ডু নট ডিসটার্ব মি’ লাগিয়ে রেখেছিলাম, ওটা আমার কাছে পৌঁছয়নি। জাহির আমাকে ওর ম্যারেজ পার্টিতে দুবাইতে নেমন্তন্ন করেছে। মাঝরাতে, তিরিশ কিলোমিটার দূরের একটা জায়গায়। সে পার্টির ‘হোস্ট’ ছিলেন আবদুল রহমান বুখাতির। পার্টি ভাঙতে সকাল হয়ে গেল। ফিল্মস্টার, অ্যাম্বাসাডর, আন্তর্জাতিক সব প্লে-বয়। লাহৌর থেকে উড়ে এসেছিল নাচগানের মেয়ে ‘হান্নি’। দুর্ধর্ষ পার্টি!

১৯৮৭-র বিশ্বকাপ শেষের দিকে মনে পড়ে, আমি সদরবাজারে গিয়েছি দুজোড়া পেশোয়ারি চপ্পল কিনব বলে। কেনাকাটি হয়ে যাওয়ার পর দোকানি বলল, ও কোনও পয়সাকড়ি নিতে পারবে না। কেন? কেননা আমি জাহিরের অতিথি, তাই। ভাবুন অতিথিপরায়ণতা কাকে বলে!

২০০৩। পাকিস্তানে আমার ক্রিকেট-বুক লঞ্চ করবে। জাহির আমাকে আর আমার স্ত্রীকে ওর বাড়িতে ওঠার জন্য বলল। আমাদের ফ্লাইটটা করাচিতে নামতে বেশ দেরি হল। তখন মাঝরাত খানিক আগেই পেরিয়ে গেছে। তার ওপর আমাদের আরও দেরি হচ্ছিল, কেননা আমরা দুজনেই ভিসার কাগজপত্র কলকাতায় ফেলে গিয়েছিলাম। এর পরেও যে আমরা পাকিস্তানে ঢুকতে পারলাম, তার একমাত্র কারণ জাহির। ও যেহেতু আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিল, সেই কারণেই ইমিগ্রেশন অফিসার চওড়া একটা হাসি দিয়ে বললেন, “লেকিন আয়েন্দা ভিসা লেকে আয়েগা।” অর্থাৎ, পরের বার কিন্তু ভিসা নিয়ে আসবেন।

ক্রিকেট থেকে জাহির অবসর নিয়ে থাকতে পারে কিন্তু ওর ক্যারিশমা কিন্তু সেই আগের মতোই আছে। করাচির সাহিত্য উৎসবে গত বছর আমাকে ডাকা হয়েছিল, আমার উপন্যাস থেকে পাঠ করার জন্য। ব্যাপারটা খুব মজার ছিল। বিক্রম শেঠ, শোভা দে, হানিফ কুরেশির পাশাপাশি মহম্মদ হানিফ বা হুসেন নাকবির মতো অল্পবয়েসি। সঙ্গে আমিও। আমরা জাহিরের সঙ্গেই ছিলাম। ও কী মাপের ‘ন্যাশনাল আইকন’ দেখুন, জাহির যখন উৎসবের জায়গাটায় আমাদের নামাতে এল, প্রায় ‘মবড’ হয়ে যায় আর কী! মনে রাখবেন সালটা ২০১৩, ও অবসর নিয়েছে কিন্তু ১৯৮৬-তে!

পাকিস্তান মিডিয়া মোটামুটি করাচিকেই কেন্দ্র করে। ওখানকার একজন বিরল মানুষ হলেন আনোয়ার মাকসুদ। কমেডিয়ান, উপস্থাপক, অ্যাঙ্কর। রাজনৈতিক ব্যঙ্গরসের খনি। বড়সড় ক্ষমতাবান লোকের বন্ধু। ২০০৩ সালে আমি যখন পাকিস্তানে যাই, ইচ্ছে ছিল ওঁর সঙ্গে পুরনো সম্পর্কটা একটু ঝালিয়ে নেব।

ফোন করলাম। আনোয়ার তখন টিভি স্টুডিয়োয়। জাহির বলল, কোনও ব্যাপার না। তারপরই ওঁর জন্য একটা মেসেজ রেখে দিল, মাঝরাত নাগাদ উনি যেন একটা নামী রেস্তোরাঁয় চলে আসেন। আমরা গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌঁছে গেলাম। একটা এসপ্রেসো নিয়ে বসেও পড়লাম।

মাঝরাতের ঠিক পরেই মাকসুদ এলেন। শহরের দুজন বিখ্যাত মানুষকে এক টেবিলে দেখে রেস্তোরাঁ ছেড়ে কেউ আর উঠলই না। সকালবেলা মশলা চা দিয়ে আমাদের আড্ডা শেষ হল। মকসুদ তখনও দুঃখ করে চলেছেন, পরের সন্ধেয় আমাদের যে ফিরে যেতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement