নকল চোখ পরেও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমনো যায়

তবে সময় মতো পালিশ জরুরি। বলছেন অপটোমেট্রিস্ট শুভাশিস চৌধুরী। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

প্র: আজকাল নকল চোখও নাকি পছন্দ মতো বানিয়ে দেওয়া যায়?

Advertisement

উ: হ্যাঁ। এক্কেবারে কাস্টমারাইজড আই।

প্র: সেটা কী ভাবে?

Advertisement

উ: রোগীর খারাপ হয়ে যাওয়া চোখের অক্ষিগোলকের মাপ নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী নকল চোখের ছাঁচ তৈরি করা হয়। তার পর অন্য সুস্থ চোখের সঙ্গে রং মিলিয়ে তৈরি করা হয় এই নকল চোখ। পুরোটাই সুস্থ চোখটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। শিরা, উপশিরা, কর্নিয়া সব হুবহু পাশের চোখের মতো হয়। ফলে পুরোপুরি আসল বোধ হয়। তবে সব কিছুই স্টেরেলাইজড করে নেওয়া হয়। তাই ইনফেকশন বা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।

প্র: কিন্তু দেখে তো বোঝাই যাবে আসল নয়। নকল চোখ তো স্থির থাকে?

উ: না। বলে না দিলে ঝট করে বুঝতে পারবেন না। রেডিমিট যে সব চোখ পাওয়া যায়, সেগুলো স্থির থাকে। নকল হলেও এই চোখকে বিভিন্ন দিকে ঘোরানো যায়। ফলে আসল-নকলের পার্থক্য চট করে বুঝতে পারবেন না।

প্র: মাপ নেওয়ার সময় চোখে কোনও অসুবিধে হয় না?

উ: না।

প্র: কিন্তু রেডিমিট পরলে অসুবিধে কী?

উ: প্রথমত চোখের আকার পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। বহু দিন পরার পর এই চোখ হয়তো খুলল না। তখন অপারেশন করে বের করতে হয়। মাপ দিয়ে করলে এ সব সমস্যা হয় না। কাস্টমারাইজড চোখে পিচুটিও কম হয়।

প্র: নকল চোখ তৈরিতে কত দিন সময় লাগে?

উ: মোটামুটি ভাবে দিন দুই সময় লাগে। তবে প্রয়োজনে এক দিনেও তৈরি করা যায়।

প্র: বাইরে থেকে একটা জিনিস লাগানো হচ্ছে। চোখে চাপ পড়বে না?

উ: না। মাপ নিয়ে তৈরি করা হয় বলে চোখে পরানোর পর বেশির ভাগ ওজনটাই ভিতরের টিসুতে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে চোখের তলায় বা পাতায় কোনও চাপ পড়ে না। রোগী সহজেই পরতে পারেন।

প্র: লাগানোর পর কি আবার খোলা যায়?

উ: হ্যাঁ। ইচ্ছে মতো খুলতে পারেন। কিন্তু যাঁদের চোখ পুরোপুরি ওঠানো হয়ে গেছে, তারা না খুলেও রাখতে পারেন।

প্র: লেন্সের মতো?

উ: অনেকটাই।

প্র: লেন্স পরে তো ঘুমনো যায় না। নকল চোখ পরে ঘুমনো যাবে?

উ: হ্যাঁ। কোনও অসুবিধে নেই।

প্র: রোজ খুলতে হবে?

উ: না। খুলে নিয়ে সপ্তাহে এক দিন পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট।

প্র: একটানা কত দিন পরে থাকা যায়?

উ: চোখ ওঠানোর পর নকল চোখ ব্যবহার করলে একটানা এক মাস পরে থাকতে পারেন। তার পর মাসে এক বার খুলে নিয়ে চোখ পরিষ্কার করলেই হয়। কিন্তু থাইসিকেলাই নামের এক ধরনের সমস্যা আছে। যাতে জন্ম থেকেই চোখ ছোট। এ রকম সমস্যার জন্য নকল চোখ ব্যবহার করলে প্রতি দিন চোখ খুলতে হবে। কাস্টমারাইজড চোখ ব্যবহার করলে পিচুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই উন্নত মানের এই চোখ একটানা এক মাস পর্যন্ত পরে থাকা যায়।

প্র: চোখ ওঠানো হয়েছে বলতে?

উ: ইনফেকশন বা আঘাত জনিত কারণে চোখ নষ্ট হয়ে গেলে সেটি তুলে ফেলতে হয়। আবার বাচ্চাদের রেটিনোব্লাস্টোমা নামের এক ধরনের চোখের ক্যানসারের জন্য চোখ তুলে ফেলতে হয়। সে সব ক্ষেত্রে এক বার নকল চোখ বসিয়ে দিলে সেটি না খুললেও চলবে।

প্র: এই চোখ পরার বাধানিষেধ আছে?

উ: পুকুরে স্নান করা যাবে না। সুইমিং পুলেও নয়। ক্লোরিন জল বার বার গেলে চোখের রং নষ্ট হয়ে যায়।

প্র: দাম কেমন?

উ: ২০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা।

প্র: কত দিন চলে নকল চোখ?

উ: কম দামের চোখ দুই-আড়াই বছর পর্যন্ত চলে। বেশি দামি চোখ দশ বছর পর্যন্ত চলে।

প্র: যত্ন করব কী করে?

উ: যতই দামি চোখ পরুন, মাসে এক বার খুলে লোশন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তার পর জল দিয়ে ধুয়ে পরবেন। এক মাস পর পর না খুললে, পিচুটি হবে, চোখ দিয়ে জল পরবে। পিচুটি জমে জমে চোখের ওপর লেয়ার পড়ে। তাই ছয় মাস পর পর পলিশিং দরকার।

প্র: চোখ বাদ দেওয়ার পর কত দিনের মধ্যে এই নকল চোখ বসাতে হবে?

উ: ছয় সপ্তাহ পর নকল চোখ বসাতে হবে। যাদের ক্যানসারে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে তাদের কৃত্রিম চোখ লাগানোর জায়গা নেই, তাদের ফেশিয়াল প্রস্থেসিস লাগিয়ে মুখের গড়ন ঠিক করা হয়। এতে চামড়া দিয়ে নকল চোখ তৈরি করে বসিয়ে দেওয়া হয়। অথবা চশমার মধ্যেই নকল চোখ লাগানো থাকে। সেটাও ব্যবহার করা যায়। যাকে বলে স্পেকটেকল প্রস্থেসিস।

যোগাযোগ-৯৮৩০০৪৬৩৩২

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement