মনীষা বসু দীর্ঘকাল সুচিত্রা মিত্রের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করলেও খুব বেশি অনুষ্ঠানে তাঁর গান শোনা যায় না। সম্প্রতি ‘রবি ভৈরবী’র আয়োজনে আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে এক গুচ্ছ ভালবাসার গানে তিনি গুরুকে প্রণাম জানালেন। সঙ্গে ছিল সুবীর মিত্র ও রত্না মিত্রের পাঠ ও কবিতা। তাঁদের কণ্ঠ চমৎকৃত করলেও মনীষার ভাষ্য রচনা ও ভাবনাও ছিল গানের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। যে গানগুলি তিনি নির্বাচন করেছিলেন সেই গানগুলির ভিতরের সঠিক অর্থকে বিচার করে ভাষ্য রচনা করলে অনুষ্ঠানটি আরও মনোগ্রাহী হতে পারত। তাঁর অনুষ্ঠান শুরুর আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সহজাত ভঙ্গিতে বেশ কয়েকটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
মনীষা কিছু কথার পরে গাইলেন ‘তোমারে জানিনে হে’, ‘আমার একটি কথা’, ‘আমার মাঝে তোমারি মায়া’ ও ‘আমার রাত পোহালো’ গানগুলি। এই চারটি গানের মধ্যে প্রথম গানটিতে বেশ স্নায়ুর চাপ ছিল আর শেষের গানটির ‘শারদপ্রাতে’ যথাযথ সুর প্রয়োগ হয়নি। দু’বার দু’রকম সুর লাগল। এর পরেই সুবীর ও রত্না মিত্রের পাঠ শ্রোতাদের প্রস্তুত করে দিল পরবর্তী গানগুলির জন্য। যেগুলি ছিল, ‘মালা হতে খসে পড়া’ (ওই মাধুরী সরোবরে ঠিক মতন সুর লাগেনি), ‘যদি প্রেম দিলেনা প্রাণে’ (চমৎকার গাইলেন), ‘কি সুর বাজে’, ‘আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা’ প্রভৃতি। তাঁর গায়নে সার্বিক শিক্ষার ছাপ ছিল স্পষ্ট ও তিনি বুঝে ধীর স্থির হয়ে গান করেন। তবুও বলতেই হচ্ছে সব গানে তিনি সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কণ্ঠে তাঁর গুরুর প্রভাব খুব বেশি। এটি পরিত্যাগ করলে দিনে দিনে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতে এক স্বকীয় পরিচয় চিহ্নিত করতে পারবেন, এ আশা করা যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে একটা কথা বলতেই হবে ত্রুটি বিচ্যুতি সত্ত্বেও তিনি আত্মমগ্ন ভাবেই গান করেছেন। শেষ গান ছিল বহুশ্রুত ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’। তার ঠিক আগেই তিনি গাইলেন ‘অন্ধজনে দেহ আলো’। এই গানটির রূপসৃষ্টিতে যে আর্তি প্রত্যাশিত ছিল মনীষা তাই ছড়িয়ে দিয়ে শ্রোতৃমণ্ডলীকে তৃপ্ত করলেন।