কবিতাস্কোপ অর্থাৎ কবিতার সঙ্গে নাচ, গান, যন্ত্রসঙ্গীত, কখনও বা শুধুই অঙ্গাভিনয়, আবার কখনও ভিডিও। পরিকল্পক সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই কবিতাস্কোপ পাঁচ বছরে পদার্পণ করল। সেই উপলক্ষে তিনি উত্তম মঞ্চে পঞ্চম কবিতাস্কোপ নিয়ে হাজির হলেন। সঙ্গে ছিলেন নৃত্য পরিচালক অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীত পরিচালক সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী সৌমিলি বিশ্বাস ও দেবলীনা কুমার।
এছাড়াও ছিলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। যাঁর ভূমিকা ছিল অনেকটা সূত্রধরের মতন। সুতপার কবিতাগুলি বলার আগে সুজয় খুব সুন্দরভাবে গল্প বলার ভঙ্গিতে কাহিনি সূত্রগুলি ধরিয়ে দেন – যে কারণে অনুষ্ঠানে একটা বৈচিত্র এসেছে। বিচিত্র ধরনের নানা কবিতার মধ্যে দিয়ে সুতপা সন্ধ্যাটিকে সাজিয়েছিলেন। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, কোনও কাব্যের ভিতর থেকে কী ভাবে অন্তর্নাট্যকে তৈরি করা যায়, সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন এবং সে কাজে সফলও হয়েছেন সুতপা।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সকল দেশের সেরা’ (ধনধান্য পুস্পভরা) যেটি গান রূপে ব্যবহৃত হয়, তারই আবৃত্তির সঙ্গে সমবেত নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। এর পরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’, পরেই রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’, ‘চিল্কায় সকাল’ বুদ্ধদেব বসুর। সব কবিতা পরিচিত সুতরাং বিষয়বস্তুর বর্ণনা অর্থহীন। এভাবেই কবিতাগুলি এসেছে – কখনও বিশ্বাসের, কখনও প্রেমের, কখনও ঘৃণার, আবার কখনও বা অন্তর্দ্বন্দ্বের।
এই অনুষ্ঠানে ‘চাকরি’-র নির্বাচন একটু বিসদৃশ লেগেছে। হয়তো একটু রিলিফের কথা মনে করে নির্বাচন করেছেন ধরে নেওয়া যেতে পারে। পঞ্চম কবিতাটি ছিল সুবোধ সরকার রচিত ‘আমি ফিরোজা আমি একটি ভারতীয় মেয়ে’। এই কবিতার ফিরোজা চরিত্রের অস্থিরতা ও শক্তি দুইই তিনি কণ্ঠমাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে।
মন কেড়ে নেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেজাজ’ কবিতাটিতে। তাঁর সব থেকে বড় গুণ সমস্ত কবিতার বিষয়গুলিকে অন্তর্মুখী করে রূপ দিতে পেরেছেন।