বৈচিত্রময়, বর্ণময়, নানা নৃত্যশৈলীর আঙ্গিকের সংমিশ্রণে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করল ‘ইন্দ্রাণী দত্ত কলানিকেতন’। সংস্থার দ্বাদশবর্ষীয় জন্মদিন উপলক্ষে, জি.ডি.বিড়লা সভাঘরে। ‘মধুর ধ্বনি বাজে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে ইন্দ্রাণী দত্ত এবং তাঁর সম্প্রদায় ‘সৃষ্টি’র প্রথম নিবেদন। অনুষ্ঠানের বড় চমক ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় সংস্থার তরফে ভূষিত হলেন ইন্দ্রাণী দত্ত কলানিকেতন প্রদত্ত ‘সৃষ্টিরত্ন’ পুরস্কারে। সব মিলিয়ে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় নিবেদিতা চক্রবর্তীর পরিচালনায় কত্থকের দলগত নৃত্যে। খুবই সুন্দর নিবেদন। বাইরে দাবদাহ অন্তরে ‘প্রেম’। অনুষ্ঠানের এই অংশে চিরন্তন প্রেমের কিছু রবীন্দ্রগানের সঙ্গে ইন্দ্রাণী দত্ত, কৃশ এবং অন্যান্য শিল্পীর মনোরম নৃত্যবিভঙ্গ শরীর ও মনকে সিক্ত করে। দর্শকরা পৌঁছে যান এক অন্য অনুভূতির জগতে। এখানেই শিল্পী ও শিল্পের সার্থকতা। সেই সঙ্গে আবার অতিরিক্ত প্রাপ্তি সুকল্যাণ ভট্টাচার্যের কোরিওগ্রাফি। পরবর্তী নিবেদন ছিল ‘ফ্যাশন শো’। রাজনন্দিনী পালের সুরেলা কণ্ঠে হিন্দি, বাংলা, রকমারি গানের সঙ্গে অনুষ্ঠানটির সামগ্রিক পরিচালনা করেন ইন্দ্রাণী দত্ত। সুতপা মারিকের শিক্ষাধীনে ভরতনাট্যমের প্রদর্শন ছিল প্রশংসনীয়। ইন্দ্রাণী দত্ত এবং তাঁর সম্প্রদায় সুন্দর নৃত্যাভিনয়ের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন মান্না দে, ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং সুচিত্রা সেনকে। ‘বাজে গো বীণা’, ‘এ শুধু গানের দিন’ প্রভৃতি বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। একই ভাবে পরের নিবেদনটি উত্সর্গ করলেন রাহুল দেব বর্মন এবং আশা ভোঁসলেকে, তাঁদেরই নির্বাচিত কিছু জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। পাশ্চাত্য নৃত্যের বিভিন্ন শৈলী দক্ষতার সঙ্গে মঞ্চস্থ করলেন কৃশ এবং তাঁর সহযোগীরা। অনুষ্ঠানের শেষে কলানিকেতনের যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্বে স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন সিলভিয়া, স্নেহা, শতাব্দী, বিনীতা, সায়ন্তিকা, অলিভিয়া, দেবস্মিতা, রাজনন্দিনী।
নীতিকথা ছাড়িয়ে যায়
লং মার্চ নাটকে
স্লো ব্যাট স্টেডি উইনস দ্য রেস’। ছোটবেলা থেকে কত বারই না শুনেছেন খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড়ের গল্প। অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভুগে কী ভাবে খরগোশ সেই দৌড়ে হেরে যায়। এই দৌড়কেই ভিন্ন পটভূমিকায় কাজে লাগালেন নাট্যকার প্রবীর গুহ। তাঁর ‘লং মার্চ’ নাটকে তুলে আনলেন এক দেশের কথা। এখানেও প্রধান শ্রেণি দু’টি-শোষক ও শাসিত। খরগোশরা শোষকের দল। আর কচ্ছপেরা শাসিতের প্রতিনিধি। প্রতি বছর এই দেশে এক দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই দৌড়ের জন্য একটি খরগোশ আর একটি কচ্ছপকে বেছে নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী শেষ বিশ্রামাগারে খরগোশ ঘুমিয়ে পড়বে আর দৌড়ে জিতবে কচ্ছপ। কিন্তু এ বার গোল বেঁধেছে। খরগোশ আর ঘুমিয়ে পড়তে রাজি নয়। কী হবে? উত্তর খুঁজলেন পরিচালক শুভদীপ গুহ। রাজেন্দ্রর ভূমিকায় অভিজিত্ বিশ্বাস আর রোহিতাশ্বের ভূমিকায় আফতার আলি প্রশংসার দাবি রাখে। নজর কেড়েছেন অরূপ মুখোপাধ্যায়, তপন দাসও। বরুণ করের আলোও ছিল যথাযথ।
এখনও বসন্ত
শতরূপা চক্রবর্তী
রামমোহন মঞ্চে ‘আনন্দধারা’র অনুষ্ঠানে ছিল গান, কবিতা ও নৃত্যের কোলাজ। মৈনাক পালধি ও আশিস সরকারের গাওয়া গানগুলিতে যেন বসন্তের রেশ। আবৃত্তিতে কৃষ্ণকলি বসু ছিলেন সহজ ও সাবলীল। রবীন্দ্রনাথের ‘পরিচয়’ কবিতাটিতে প্রতিটি শব্দের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ অনুভব করা যায়। পরে ঋষি গুপ্তের নৃত্য নির্দেশনায় শিশুশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের ভাল লেগেছে। গানে ছিলেন বন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়, শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় ও রাখী চট্টোপাধ্যায়। ভাল লাগে বন্দনা সিংহ ও শ্যামলী মজুমদারকে।
ছন্দবৈচিত্র
বারীন মজুমদার
‘ক্ল্যাসিক’ দু’দিন ধরে যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তার শিল্পী তালিকায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম না থাকলেও সামগ্রিক রসাস্বাদনে ব্যাঘাত ঘটেনি। প্রথম অধিবেশনের শুরুতে কিরানা ঘরানার শিল্পী শাশ্বতী বাগচি পুরিয়া ধ্যানেশ্রী রাগে খেয়াল শোনালেন। মধ্য সপ্তকে তাঁর কণ্ঠ স্বচ্ছন্দে চললেও তার সপ্তকে ধ্বনির মিষ্টতা ক্ষুণ্ণ হয়। বিশ্বজিত্ দেব ছিলেন তবলা সহযোগিতায়। দ্বিতীয় দিনের শেষ শিল্পী মোহন লাল মিশ্রের সঙ্গে ইনিই সহযোগিতা করেন। তাঁর বাদন সুসংযত। পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের পুত্র মল্লার ঘোষ ও তাঁর সতীর্থ ও শিষ্যরা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে তবলা লহরার যে অনুষ্ঠানটি উপহার দিলেন ছন্দবৈচিত্রে তা বেশ আকর্ষণীয় হয়। পণ্ডিত ভোলানাথ মিশ্রের আভোগী রাগে খেয়াল দিয়ে প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি। দ্বিতীয় দিনে স্বর্ণিমা রায়ের ভজন কোনও ভাবেই মন ভরায় না। স্বামী স্ত্রী সুদীপ ও মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনে ছিল ঠুমরি ও বাঁশির যুগলবন্দি। মধুমিতা বেনারস ঘরানার ঠুমরিতে বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন। এর পরে সেতারে যুগলবন্দি পিতা হরশংকর ও পুত্র দীপশঙ্কর ভট্টাচার্য বাজালেন রাগ শুদ্ধ কল্যাণ। উদাত্ত ভরাট কণ্ঠে গোরখ কল্যাণ রাগে খেয়াল শোনালেন বেনারস ঘরানার বর্ষীয়ান শিল্পী মোহনলাল মিশ্র।
আলোর উদ্ভাস
বারীন মজুমদার
দুই কিশোর শিল্পী রূপশীর্ষ ও রাজশীর্ষ দাসের দ্বৈত রবীন্দ্রগানের পর রবীন্দ্রনাথের আলো বিষয়ক গান ও কবিতা অবলম্বনে পরিবেশিত ‘উত্সারিত আলো’তে গাইলেন বিভিন্ন শিল্পী। সুছন্দা ঘোষের ভাবগভীর কণ্ঠে ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’, ‘যে রাতে মোর’, ‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি’, মর্মস্পর্শী নিবেদন। চন্দ্রা মহলানবীশের উদাত্ত কণ্ঠে ‘কোন আলোতে’, ‘সুখের মাঝে’ পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনা। দীপান্বিতা সেনের ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’, ‘পূর্ণ চাঁদের’ চিত্তাকর্ষক নিবেদন। বিবেকানন্দ হাজরার ভাষ্যপাঠে নাটক ও ভাবের মিলন ঘটেছে। আয়োজক বাণী বিতান।