পঁচিশে পা দেওয়া মেঘমল্লারের সঙ্গে মান্না দে-র সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। ১৯৯৩ সালে মান্না দে-র সঙ্গীত জীবনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করেছিল যারা, সেই মেঘমল্লার পদ্মভূষণ পাওয়ার পর এবং দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার পর, মান্না দে-কে সংবর্ধনা দিয়েছিল। এবার সেই সংস্থা রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিল মান্না দে-র ৯৭তম জন্ম-জয়ন্তী। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অজয় চক্রবর্তী, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুজিত বসু। মান্না দে-কে উদ্দেশ করে অজয় চক্রবর্তীর গুরুপ্রণাম এবং উদাত্ত কণ্ঠে ‘যদি কণ্ঠ দাও গাহি তব গান’ সন্ধ্যার সুরটি বেঁধে দিলেন সুন্দর করে। এর পর গান গেয়ে শোনান ইন্দ্রাণী সেন, সৈকত মিত্র, হৈমন্তী শুক্ল। অরুন্ধতী হোমচৌধুরীর ‘যেতে যেতে’, অরুন্ধতী-অগ্নিভ-র ‘রং না হয়’, অরিত্র-র ‘এক চতুর’, মনোময়-সুমনার ‘চম্পা চামেলি’, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেহাগ যদি’, অন্তরা চৌধুরীর ‘তেরে গলিও’, শম্পার ‘আমি খাতার পাতায়’, পল্লব-শম্পার ‘কে প্রথম’, কৌশাম্বী-র ‘বাজে গো’, পিয়ালী-র ‘না চাহিলে’, বিশ্বজিতের ‘কফি হাউস’, রূপঙ্করের ‘বড় একা লাগে’, কুমার শানুর ‘পুছনা ক্যায়সে’ এবং বাবুল সুপ্রিয়র ‘আমি কোন পথে যে চলি’। এ দিন সংবর্ধিত হন অজয় চক্রবর্তী, সবিতা চৌধুরী, অসীমা মুখোপাধ্যায়, সুপর্ণকান্তি ঘোষ, অধীর বাগচী, শিবাজি চট্টোপাধ্যায় এবং দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী। সঞ্চালনায় ছিলেন পূর্বাশা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঝুমুর চট্টোপাধ্যায়। নজর কাড়লেন সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু বসু, ১৪ জন বাদ্যযন্ত্রীকে সমস্ত শিল্পীদের সঙ্গে যিনি বেঁধেছিলেন এক সুরে, এক তালে, এক লয়ে।
তোমার কথা ভেবে
বারীন মজুমদার
গানের তিন ধ্রুবতারা। আরতি মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, হৈমন্তী শুক্ল। সংবর্ধনা জ্ঞাপন করল ক্যালকাটা সিনে মিউজিশিয়ানস অ্যাসোসিয়েসনস। সংস্থার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে। এ দিন সব শিল্পীরই তিনটি করে গান নির্ধারিত ছিল।
রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের গানগুলির মধ্যে ভাল লাগে ‘তোমার কথা ভেবে আমার’। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ভাললাগা কখন যে ভালবাসা হয়ে গেল’ দিয়ে শুরু করলেন। তিনটি গানের চয়নেই ভালবাসার ছবি আঁকলেন। যার শেষে ছিল ‘ভালবাসা ছাড়া আর আছে কি’? চমৎকার নির্বাচন এবং সুরেলা পরিবেশন। লোপামুদ্রা মিত্র নতুন কোনও গান শোনাতে চাইলেও শ্রোতাদের অনুরোধে ‘বেণীমাধব’ই গাইলেন। অন্য দুটি গানও বহুশ্রুত। অমলেন্দুবিকাশ কর চৌধুরীর একটি রাগপ্রধান গান ‘সবাই আমরা তোমার বাগানে’ দিয়ে শুরু করলেন অজয় চক্রবর্তী। পরে গাইলেন কিরবানি রাগাশ্রিত ‘ঘুম আসে না’। দুটি গানই যেন সুরের তুলি দিয়ে আঁকা ছবি। তবে মনে রাখার মতো ছিল ‘ওঁ শান্তি’ শ্লোকটি। কনিষ্ঠ শিল্পী অন্বেষা দত্তগুপ্তর গানগুলির মধ্যে উজ্জ্বলতর ছিল ‘বড় ইচ্ছে করছে’ গানটি। শ্রীকান্ত আচার্যর গান শুনে মনে হয় অনেক পথ পার হয়ে এসেও তিনি যে ভাবে স্বর লাগান, শব্দ উচ্চারণ করেন তা নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয়। এই কারণেই তাঁর গান শোনা আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় শ্রোতাদের কাছে। শেষে এলেন শুভমিতা ‘সারাদিন ভেবে তোমার কথা’। কিন্তু জগজিৎ সিংহর গীত গজল ও অন্য গানটিও সেভাবে মনে রাখার মতো হল না।
দেখা হবে
রবীন্দ্রসদনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল ঈশিতা দাস অধিকারীর একক কবিতার আসর। শুরুতেই শিল্পী শোনালেন রবীন্দ্রনাথের ‘প্রথম পূজা’। এর পর জয় গোস্বামীর ‘নিজের রবীন্দ্রনাথ’। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘ঝুলন’ শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে ছিল সুবোধ সরকারের ‘কাদম্বরী দেবী আপনাকে’, মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘কন্যাশ্লোক’ ও ‘ভোটার মেয়ের বারমাস্যা’। অনামিকা সাহা ও অনন্যা প্রধানের ‘তোমার মেয়েরা হার মানছি না মোটে’, দেবব্রত সিংহের ‘তেজ’, মধুমিতা চক্রবর্তীর ‘নির্ভয়া’, রবীন্দ্রনাথের ‘স্ত্রীর পত্র’। স্বপ্ন থেকে অতি বাস্তবের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঈশিতা। তাঁর সঙ্গে আমরাও সেই চেনা বাস্তবকে উপলদ্ধি করছিলাম এক অনন্ত আগ্রহের মধ্য দিয়ে।
ফেলে আসা দিনগুলির প্রতি আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস আমাদের চিরকালের। ঈশিতার সঙ্গে আমরা প্রবেশ করলাম সেই মনোরম দিনগুলিতে। তৃতীয় পর্বে তিনি শোনালেন অপূর্ব দত্তের ‘বালকবেলা’, শরৎ কুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘মণিমালা’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘যার যা হারিয়ে গেছে’, বুদ্ধদেব বসুর ‘জোনাকি’ প্রমুখ। মনে থাকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দেখা হবে’।
গজল-সন্ধ্যায়
মেহেদি হাসানকে সম্প্রতি স্মরণ করে বিভিন্ন গজল শোনালেন কয়েক জন শিল্পী। তার মধ্যে নজর কাড়লেন জেনিভা রায়। কলামন্দিরে আয়োজিত ‘ট্রিবিউট টু মেহেদি হাসান’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানে। মেহেদি হাসানের কিছু গজলকে একত্র করে শ্রোতাদের তা শোনালেন জেনিভা ও অন্যান্য শিল্পীরা। ‘জিন্দেগী ম্যায় রাফতা রাফতা’, ‘নওয়াজ ইশক্ কা’, ‘হ্যামে কোই গম নেহি’, ‘প্যায়ার ভরে দো শর্মিলে’ সহ বহু জনপ্রিয় গজল। জেনিভার কণ্ঠমাধুর্য্য ও গায়কির মুনশিয়ানায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন শ্রোতারা। এ দিন তিনি আরও শোনালেন নিজের সংকলন ‘অর্শ’, ‘মেরে স্বপ্নে’ ‘এহেসাস প্যায়ার কা’ এবং ‘সচতে সচতে’ থেকে বেশ কয়েকটি গজল। এর পর গজল শিল্পী সোহেল রানা শোনালেন ‘দো পিয়াসী দিল’, ‘দুনিয়া কিসি কি’ সহ বিভিন্ন গজল। বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন দেবাশিস, সুজন এবং গোপাল।
নবরূপী তুমি
চৈতি ঘোষ
জি জি ডি বিড়লা সভাগৃহে ঝিনুক মুখোপাধ্যায় সিংহের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হল নৃত্যানুষ্ঠান ‘নবরূপী’। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন সুভেন চট্টোপাধ্যায়। ভাষ্যপাঠে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রায়া ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন আঙ্গিকে সফল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষ্যে যেমন গভীর মননের ছায়া ফেলেছে তেমনই রায়ার সুরেলা চর্চিত কণ্ঠে নারীর বিভিন্ন রূপের সুস্পষ্ট ছায়া প্রতিফলিত। নবরসের আধারে ৯ জন পৌরাণিক ঐতিহাসিক নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে ঝিনুক অভিনব ভাবধারার পরিচয় দিয়েছেন সাউথ কলকাতা নৃত্যাঙ্গনের ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে। তাঁর সুদক্ষ নৃত্যশৈলী মনে রাখার মতো। ঝিনুকের সীতা, রাধা, রানি লক্ষ্মীবাঈ ও মা দুর্গা চরিত্রের নৃত্যগুলি হৃদয়গ্রাহী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন থাঙ্কমণি কুট্টি ও মমতাশঙ্কর। শৈশব থেকে ঝিনুক এঁদের কাছেই তালিম নিয়েছেন।
নারী-জীবন
সুলগ্না বসু
সম্প্রতি ম্যাক্সমুলার ভবনে আয়োজিত হল দু’ দিনের অনুষ্ঠান ‘জেন্ডার ইজ অ্যাবাভ জেনিটালস’। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। মঞ্চসজ্জায় ছিল অভিনবত্ব। নারীমুক্তির ভাবনাকে কেন্দ্র করে শুরুতেই প্রদর্শিত হল ‘ছ’জন নারীর জীবনকথা’। নীপবীথি অপূর্ব গাইলেন ‘এই আকাশে’, ‘এ মোহ আবরণ’। কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে শোনালেন অমৃতা প্রীতম-এর মর্মস্পর্শী রচনা।
সোহিনী সেনগুপ্তের নিবেদনে রবীন্দ্রনাথের ‘সুয়োরাণীর সাধ’ তাঁর নিজস্ব বাচন ও অভিনয় দক্ষতায় অসামান্য হয়ে উঠল। সুদীপা বসু’র কণ্ঠে ‘মারী ফারার’ শোনা সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রূপান্তরিত নারী তনুশ্রীর নিবেদন যন্ত্রণাময় আর্তি আর উত্তরণের প্রত্যয়ে সমুজ্জ্বল। নিজস্বতায় মনে ছাপ রেখে গেলেন স্বস্তিকা ও স্বাতীলেখাও। দ্বিতীয় দিনের উল্লেখযোগ্য কৌন্তেয় সিংহর ছবি— যার মূল বিষয় মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর অঞ্চল— যেখানে সবাই কন্যা সন্তানই আশা করে। এ ছাড়া ছিল দেবলীনা মজুমদারের ‘তিন সত্যি’ এবং প্রণতি ঠাকুরের কবিতা নিবেদন। এ দিনের একটি বড় আকর্ষণ ছিল চপল ভাদুড়ির কথোপকথন। এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে এ সব শিল্পীর কথোপকথন সরাসরি মঞ্চে শোনা বিরল অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বেশ উপভোগ্য।
ওই মহামানব আসে
চা রুকৃতি আবৃত্তি পরিষদের দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেল বাংলা অ্যাকাডেমি সভাঘরে। শুরুতেই সম্মেলক সঙ্গীত ‘ওই মহামানব আসে’ গাইলেন সংস্থার সব বয়সি সদস্যরা। আসলে এই সম্মেলকের মূল ভাবনায় ছিল ‘প্রভু যিশু’। অনুষ্ঠানটি নানা আঙ্গিকে সাজানো হয়েছিল। একক আবৃত্তিতে নির্বাচিত কবিতা পাঠে সুনাম বজায় রাখলেন কৃষ্ণপদ দাস, পুরবী মণ্ডল, প্রিয়াঙ্কা রায়, কাকলি দত্ত প্রমুখ।
এ দিন নজর কেড়েছে রবীন্দ্র-কবিতা ও গানের সংকলন ‘পূর্ণ প্রকাশিছে’। পাঠে নজর কেড়েছেন কৃষ্ণপদ দাস ও সুস্মিতা দাস। গানের অংশে ছিলেন চন্দ্রা মহালনবীশ। তবে অনুষ্ঠান শেষ হয় বাচিক অভিনয়ের মাধ্যমে। শিরোনাম ছিল ‘মহাদেবের সহজপাঠ’।
আজি দখিন দুয়ার
সম্প্রতি সুরঙ্গমা কলাকেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরু সমবেত কণ্ঠে ‘ওরে গৃহবাসী’। পরে সুচিন সিংহ শোনালেন ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’। গায়কি মন্দ নয়। তবে যন্ত্রানুষঙ্গের মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজ গানের ভাবকে ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ছাড়াও গান শোনালেন সুস্মিতা সাহা, সুপর্ণা ঘোষ, মধুমিতা ঘোষ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সুন্দর গাইলেন মৌসুমী কর্মকার ‘পিঁউ পিঁউ’। এরই পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় বাংলা গান শোনালেন অন্যান্য শিল্পীরা। শেষে মহুয়া দাসের ‘কাদম্বরী দেবী’ আবৃত্তি আবেদনময়। তবে অনুষ্ঠানে কারও কারও গানে সুর ও তালের হেরফের ছন্দপতন ঘটিয়েছে।