ষাটের দশকের গোড়ার দিক। এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আশ্চর্য এক রেকর্ড হয়েছিল, যা আজও অক্ষত। সেরা অভিনেত্রী ক্যাটিগরিতে সব ক’টি নমিনেশন পেয়েছিলেন একজনই। তিনি ট্র্যাজেডি কুইন মীনাকুমারী!
সে সময়ে দিকপাল অভিনেত্রী কম ছিলেন না বলিউডে। নূতন, নার্গিস, মধুবালা, বৈজয়ন্তীমালা, ওয়াহিদা রহমান, আশা পারেখ... কিন্তু এই তারকারা নিজেরাই বলতেন, কষ্টের দৃশ্যে মীনাজির মতো এমন আবেগের বন্যা বইয়ে দেওয়া তাঁদের সাধ্য নয়। এই অসম্ভব সম্ভবে মীনাকুমারী এমন পারদর্শী হলেন কী ভাবে, তা যদি জানতে হয়, তবে প্রথমেই ফিরতে হবে গত শতকের তিরিশের দশকের গোড়ায়। সেখানেও এক ভারী করুণ দৃশ্য দেখা যাবে। কিন্তু তা অবিকল সিনেমার মতো মনে হলেও আসলে বিশ্রী রকমের এক কঠিন বাস্তব।
স্বার্থপর দৈত্যের দেখা, আরব সাগর পাড়ে আলি বক্স থিয়েটারে হারমোনিয়াম বাজাতেন। সামান্য আয়। তাঁর দ্বিতীয় সন্তানটিও মেয়ে হতে, খুব বিরক্ত হয়েছিলেন। ছেলে হলে তাও দু’পয়সা রোজগারের আশা থাকত। একে দিয়ে কী হবে! হাসপাতালের খরচেই হন্যে হচ্ছেন। মেয়েকে প্রতিপালন করার কথা ভাবতেও তাঁর ভয় করে। তাই সাত দিনের শিশুকে তিনি এতিমখানার বারান্দায় রেখে দিয়ে এলেন। বেশ কিছুটা রাস্তা চলে আসার পরে খারাপ লাগল। যতই হোক নিজের সন্তান। তার উপরে তিনি ধর্মভীরু মুসলমান। এমন ভাবে ছোট শিশুকে রাস্তায় ফেলে দিলে আল্লার কোপে পড়তে হতে পারে। সাতপাঁচ ভেবে আবার হাঁটা লাগালেন অনাথ আশ্রমের দিকে। গিয়ে দেখেন, এই ক’ঘণ্টাতেই লাল পিঁপড়ে ছেঁকে ধরেছে বাচ্চাটাকে।
অশোককুমার ও মীনাকুমারী
আলি বক্সের স্ত্রী দিনে হেঁশেল ঠেলেন, বাচ্চা সামলান আর রাতে নাটকের স্টেজে নাচগান করেন। এত পরিশ্রমে তাঁর শরীর ভাঙলেও এখনও বোঝা যায় তিনি ঠিক যে-সে মহিলা নন। তাঁর মা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী, হেমসুন্দরী দেবী। বাল্যবিধবা হেম নিজের জীবনে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই কিশোরীবেলায় মেরঠে এসে খ্রিস্টধর্ম নিয়ে নার্সের কাজে যোগ দেন। সেখানেই তাঁর পরিণয় জনৈক পেয়ারেলালের সঙ্গে। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে এক জন প্রভাবতী দেবী। নির্বাক ছবির দু’-একটায় নায়িকাও হয়েছেন তিনি। সে দিকে বেশি এগোতে না পারায়, কামিনী নামে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করতেন। সেখানেই হারমোনিয়াম বাজাতেন আলি বক্স। কড়া ধাতের, গোঁড়া সুন্নি, এক কন্যার পিতা আলি বক্স এই তন্বীর মন জেতায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু তত দিনে আলি বক্সকে বিয়ে করে ইকবাল বানু নামে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন প্রভাবতী। সংসারের হাল ঠেলতে গিয়ে নিজেকে ক্ষয়ে ফেলছেন। অনটনে বেড়ে উঠছিলেন আলি বক্সের কন্যারা।
সে দিন বাবুজি মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিলেন ঠিকই, কিন্তু তাকে দুধটা ফলটা জোগাতেই হিমশিম। স্কুলে ভর্তি করলেন, বেশি দিন মাইনেই দিতে পারলেন না। কোলের খুকি অন্যদের ফুল-পরি আঁকা বই দেখে হাপুস নয়নে কাঁদে। কিন্তু কে মুছবে তার চোখের জল? বাড়িতে মায়ের তখন ফুসফুসের রোগ। ও দিকে কাজের সূত্রে সিনে দুনিয়ার কিছু মানুষকে চিনতেন আলি বক্সরা, তাঁদের বলেকয়ে বড় মেয়ে খুরশিদের জন্য ছোটখাটো পার্ট জুটে গেল। দ্বিতীয় কন্যাটি বছর চারেকের হতেই তাকে নিয়েও স্টুডিয়োর দরজায় দরজায় হত্যে দিলেন আলি বক্স। ‘আমার এই মেজ মেয়েটা নাচগান চটপট তুলে নেয়। যা শোনে মনে রাখে। আপনাদের সিনেমায় শিশু অভিনেতা তো কত লাগে। একটু দেখুন না এই বদনসিবের দিকে…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রকাশ স্টুডিয়োর মালিক বিজয় ভট্টেরও কানে গেল আলি বক্সের অনুনয়। কিন্তু অন্যদের মতো তাঁকে তাড়ালেন না তিনি। বরং দৈত্যদেহী পিতার পাশে চাঁপা কুড়ির মতো সিঁটিয়ে থাকা বাচ্চাটিকে ঠাহর করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাম কী?’ সে আস্তে আস্তে বলল, ‘মেহজবিন।’ কাঠখোট্টা আলির তাপ্পি-জামা মেয়ের এমন আরব্য রাজকন্যের মতো নামে হেসেই ফেললেন ভট্টমশাই। বললেন, আমি পশ্চিমের জংলি সিনেমার আদলে সাধারণ স্টান্ট ফিল্ম বানাই। সমালোচকে গুণ গায় না ঠিকই, কিন্তু হলে দর্শক আসে। আমার পরের সিনেমায় মুখোশ পরা এক নায়ক আর তার বাঘা কুকুরের কাণ্ড দেখাব। সিনেমার নাম ‘ফরজান-এ-হিন্দ’ বা ‘লেদার ফেস’। মেহজবিন নামের মেয়েকে এমন সিনেমায় দিতে তোমাদের আপত্তি হবে না তো? আলি বক্স অতশত বুঝলেন না, মেয়ের পারিশ্রমিকের পঁচিশ টাকাই তাঁর কাছে অনেক। তিনি কেবল ‘বহুত আচ্ছা, বহুত বড়িয়া’ বলতে লাগলেন।
‘বন্ধন’ ছবিতে প্রদীপকুমারের সঙ্গে
১৯৩৯ সালে ‘লেদার ফেস’ দিয়েই বেবি মেহজবিনের পথ চলা শুরু। তার পরে এন্তার সিনেমায় তাকে দেখা যেতে লাগল। ‘অধুরি কহানি’, ‘পূজা’, ‘নয়ি রোশনি’... সকালবেলায় শুটিং কোম্পানির গাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে যেত। আর সূর্য ডোবার একটু পরে সে গাড়ি আবার এসে হর্ন দিত আলি বক্সের দরজায়। গাড়ির কাচ নামিয়ে গলা বাড়িয়ে চেঁচাত ছোট-বড়র দল— ‘মেহজবিনকে একটু পড়াশোনা করান না মেহেরবানি করে। ওর কিন্তু লেখাপড়ায় খুব মাথা। শুটিংয়ে অন্য বাচ্চাদের স্কুলের বই চেয়ে চেয়ে পড়ে।’ সে সব কলরব ঢাকা পড়ে যেত পয়সার ঝনঝনানিতে। পরে নায়িকা মীনাকুমারী তাঁর বিখ্যাত কান্নাভাঙা গলায় বলেছেন, ‘‘আমি রূপকথা পড়তে চাইতাম। কিন্তু আমাকে রূপকথার দৃশ্যে নাচগান করতে হত। আমার বন্ধু ছিল বেবি মুমতাজ (পরে মধুবালা)। ওর বাবাও তো রাশভারী ছিলেন, তবু ওর ব্যাগে কত পুতুল, খেলনা থাকত। সে সময়ের সব বাচ্চারা রঙিন মার্বেল জমাত। আমার তেমন একটাও গুলি ছিল না। বাবুজি আমাকে একটা রাংতা মোড়া মেঠাইও কিনে দিতেন না।’’ তার পরেই গলায় তীব্র উচ্ছ্বাস এনেছেন অভিনেত্রী, ‘‘স্টুডিয়োর রাইটাররা উর্দু, ইংরেজি বই দিতেন। আমাকে ‘পড়াকু মুন্না’ বলে ডাকতেন। আমার জমানো পয়সায় সংসারটা একটু একটু করে সুখের আলো দেখছিল, দিদি-বোনরা ভাল খেতে-পরতে পারছিল, তাতেই আমার তৃপ্তি।’’
ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিজয় ভট্ট সাহেবের মনে হল, এই মেয়ের যুগোপযোগী নাম দরকার। তাই ‘এক হি ভুল’ সিনেমায় তিনি ‘মেহজবিন’ নামটা আরব সাগরে ফেলে দিলেন। পর্দায় মেয়েটির নাম লেখা হল ‘বেবি মীনা’। শিশুশিল্পী হিসেবে আরও কয়েকটি ছবি করার পরে কিদার শর্মা, হোমি ওয়াদিয়ার মতো ছবিওয়ালাদেরও নজরে পড়ল সে। ফলে তিন-চার বছরের মধ্যেই বেবি মীনা ‘মীনাকুমারী’ হয়ে নায়িকার রোলে নেমে গেলেন। সিনেমার নাম ‘বচ্চোঁ কা খেল’। শুটিং শুরুর সময়ে নায়িকার বয়স তেরোও হয়নি।
কবি-গীতিকার জাভেদ আখতারের খেদ, মেহজবিনের মতো এমন অপার্থিব নাম, বদলে হল কিনা মীনাকুমারী! এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে!
মহলের স্বর্ণপিঞ্জরে
সেই পোকায় কাটা শৈশব, মেহজবিনের অসুখী আত্মা ও অন্যের ফেলে দেওয়া বইয়ের হলদেটে মলিন পাতারাই মীনাকুমারীর জটিল চরিত্রের জন্য দায়ী। তারাই তাঁকে কবিতা লেখার প্রেরণা দিত। তারাই তাঁর অভিনয়ের অসামান্য দ্যুতি ফুটিয়েছিল। আবার তারাই তাঁকে অসময়ে ফুরিয়ে দিয়েছিল।
ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে
তাই যখন তাঁর বছর ষোলো বয়স, তখনই তিনি ব্যস্ত নায়িকা। পুরাণকেন্দ্রিক সি গ্রেড সিনেমায় মা লক্ষ্মী কিংবা পাতালকন্যা সাজেন। ‘বীর ঘটোৎকচ’, ‘শ্রী গণেশ মহিমা’, ‘আলাদিন অউর জাদুই চিরাগ’ ধরনের ছবিতে অভিনয় করে পরিবারটির অবস্থা কিছুটা ফিরল। বান্দ্রায় বাড়ি হল, এ দিক-ও দিক যাওয়ার জন্য গাড়ি হল। কিন্তু ফুসফুসের ক্যানসারে ইকবাল বানু গত হলেন। পরিবারের লাগাম আরও জোরে চেপে ধরলেন আলি বক্স। মেয়ের উপরে খবরদারি বাড়ল। ষোড়শীর অবশ্য সে দিকে হুঁশ নেই। তিনি গুনগুন করছেন সে কালের সুপারহিট সিনেমা ‘মহল’-এর গান। ‘আয়েগা আনেওয়ালা, আয়েগা।’ বান্ধবীদের বলছেন, ‘‘এই সিনেমাটির পরিচালক কে জানো? তিনি কামাল আমরোহি। তাঁর সঙ্গে ছবি করতে সব নায়িকা উতলা। কিন্তু তিনি শুধু আমার খোঁজ করেছেন। নায়িকা আনারকলি চরিত্রে আমাকেই পছন্দ। দেখবে, উনি আমাকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যাবেন। আয়েগা আনেওয়ালা, আয়েগা...’’
ফের পথের মাঝে এসে দাঁড়াল ভাগ্য। গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মীনা হাসপাতালে ভর্তি হলেন। দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী, বাঁ হাতটা প্রায় পঙ্গু। শুনে কামাল আমরোহি দেখতে এলেন। তাঁর ‘আনারকলি’ ছবিটি তোলা হল না বটে, কিন্তু পরিচালকের আসা-যাওয়া বাড়ল। ক’মাস পরে মীনা বাড়ি ফিরলেন, দুর্ঘটনার জেরে তাঁর কড়ে আঙুলটি বিকৃত হল। নায়িকা ভেঙে পড়লেন, সামাল দিলেন কামাল। অভিনয়ের কৌশলে, ক্যামেরার কারসাজিতে এই খুঁত ঢাকা কী এমন! তখন চিঠিতে, রাতভর ফোনালাপে দু’জনে স্থির করেছেন, আপাতত গোপনে নিকাহটা সেরে ফেলা যাক। মীনা কয়েকটি ভাল সিনেমা করছেন, লাখ দুয়েক টাকা হলেই আলি বক্সের নামে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখবেন। তা হলেই এই পরিবারের দায় থেকে আজ়াদি! তার পরে একসঙ্গে থাকবেন দু’জনে।
কিন্তু আব্বা হুজুরের নজর এড়ানো অত সহজ নয়। তিনি মীনা-কামােলর ফোনে আড়ি পাতলেন। একদিন কামাল নিজের বাড়িতে ফিরে দেখেন, মীনা পাথরের মতো বসে আছেন। পাশে একটি ছোট সুটকেস মাত্র।
‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবিতে গুরু দত্তের সঙ্গে
কামাল আমরোহি এর আগেই তিন সন্তান সহ বিবাহিত ছিলেন। আমরোহির খানদানি পরিবারও নায়িকার সঙ্গে এই বিয়ের খবরে ফুঁসে উঠেছিল। কামালের প্রথম পক্ষের ছেলে তাজদার আমরোহি খুব ক্লান্ত স্বরে বললেন, ‘‘আর কত বার আমরা এই কৈফিয়ত দেব? কামাল আমরোহি অন্য দুনিয়ার লোক ছিলেন। তাঁর তল পাওয়া সহজ নয়। মোহব্বত অত ভেবেচিন্তে আসে না।’’
আলি বক্সের শর্ত ছিল, মেয়েকে সিনেমায় চাইলে আগে তাঁর কাছে এসে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাতে হবে। পাওনাগণ্ডা নিয়েও কথা হবে তাঁর সঙ্গে। এ বার কামাল আমরোহি বললেন, ‘‘মীনার ভালমন্দ, ওকে গড়েপিটে নেওয়ার দায়িত্ব আমার। ও আমার ঘরের ইজ্জত। তাই সন্ধের পর শুটিং করবে না। আমাকে ছাড়া কোনও প্রিমিয়ার, ফিল্মি অনুষ্ঠানে যাবে না। আমার গাড়ি ছাড়া অন্য কারও গাড়ির আসনে বসবে না। আর হ্যাঁ, ওর মেকআপ রুমে যেন কোনও পুরুষ না ঢোকে। ওই ঘরটিতেই ইন্ডাস্ট্রির যত ঘর ভাঙে। আমার সহায়ক বাকর মীনার সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী, মানে ওর সেক্রেটারি হয়ে সঙ্গে সঙ্গে থাকবে।’’
অন্নু কপূর মীনাচরিত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘কেয়া বাত! এক কয়েদ থেকে অন্য কারাগারে।’
ফুল, পাথর এবং মৌমাছির ঝাঁক
সব অভিযোগ নস্যাৎ করলেন কামালের আত্মজ, মীনাকুমারীর পালিত সন্তান তাজদার। ‘‘আমার বাবা না থাকলে ছোটি আম্মির এত বড় লেজেন্ড হওয়াই হত না। বাবার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে কেমন সিনেমায় নামতেন তিনি, সকলে জানে। বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি ছবি সই করার আগে আমার পরামর্শ নেবে। তোমার চেহারায়, মুখের আদলে কোন চরিত্র মানাবে, কী ধরনের অভিনয় ভাল পারবে, আমি বলে দেব।’ প্রথম দিকে ছোটি আম্মি সেই কথা শুনতেন। বাবার কথা শুনেই তিনি ‘বৈজু বাওরা’ ছবিতে মনপ্রাণ ঢেলে দেন ও ইন্ডাস্ট্রির প্রথম তিনে উঠে আসেন। ছোটি আম্মিই বাবার কাছে আবদার করেন, নার্গিসের যেমন ‘মাদার ইন্ডিয়া’, মধুবালার যেমন ‘মুঘল-এ-আজ়ম’, সে রকম শুধু তাঁর জন্য একটি ছবি বানিয়ে দিতে হবে, যা তাঁকে অমর করবে। ঠিক এই জন্যই বাবা দিনান্ত পরিশ্রম করে তিলে তিলে ‘পাকিজ়া’ বানিয়েছিলেন। আর ছোটি আম্মির এই সেলফ অবসেশনই বাবার ও তাঁর মধ্যে দেওয়াল তুলে দেয়।’’
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে মীনাকুমারী অন্যতম সফল অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। ‘পরিণীতা’, ‘ফুটপাথ’, ‘এক হি রাস্তা’, ‘শারদা’, ‘ইহুদি’ প্রভৃতি সিনেমায় তিনি দুঃখিনী যুবতী, বাল্যবিধবা, বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা, প্রান্তবাসিনীর চরিত্র নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে দেশের ‘ট্র্যাজেডি কুইন’-এর খেতাব জিতে নিলেন। তাঁর যশ-খ্যাতি কালেভদ্রে ছবি-করিয়ে, অন্তর্মুখী স্বামীকে ছাপিয়ে যেতে লাগল। মীনার নিজস্ব বৃত্তও তৈরি হল। সুনীল দত্ত-নার্গিসের সঙ্গে খুব মেলামেশা করতেন। ছোট বোন মধুর বিয়ে হল কৌতুকাভিনেতা মেহমুদের সঙ্গে। সেখানেও বন্ধুবান্ধব হল। তাঁর কবিমন, শৌখিন স্বভাবের দরুন ইন্ডাস্ট্রির সমবয়স্কদের সঙ্গেও ভাব জমে গেল। প্রদীপকুমার নতুন বিদেশি গাড়ি কিনতেই মীনাকুমারী তাঁর পাশে বসে গোটা বম্বে ঘুরে এলেন। বিমল রায়ের সহকারী, ছোকরা গীতিকার গুলজ়ারের সঙ্গে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাব্যচর্চা করছেন, এ সব কামাল আমরোহির আর সহ্য হল না। তাঁর সঙ্গে মীনার বয়সের ফারাক, দু’জনের মনের পরিণতির পার্থক্যও তখন বিভেদ বাড়াচ্ছে। সেই সময়ে সকলে মীনাকুমারীকে দেখলে উঠে দাঁড়ায়, চেয়ার এগিয়ে দেয়। এক দিন কামাল-মীনা কোথাও গিয়েছেন, নায়িকার ব্যাগটি হাত থেকে পড়ে গেল। মীনার কাঙ্ক্ষিত চাউনি এড়িয়ে কামাল হনহন করে এগিয়ে গেলেন। ‘সাহেব বিবি গুলাম’-এর বিশেষ প্রদর্শনীতে রাজ্যের গভর্নর স্বামী-স্ত্রীকে দেখেই অভিবাদন করে বিদেশি অতিথিদের বললেন, ভারতের গডেস অব ট্র্যাজেডি মীনাকুমারী আর তাঁর স্বামী কামাল আমরোহি। কামাল চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘‘আমি মিস্টার মীনাকুমারী নই। আমি ‘মহল’ ফিল্মের পরিচালক কামাল আমরোহি।’’ বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বললেন, ‘‘কত বার বললাম, এই সিনেমার বাংলা ভার্শনটা ভাল করে দেখো। সেখানে ছোট বউ যখন প্রথম পান করছেন, তখন তার অভিনয় এক, দ্বিতীয় বার যখন বোতল ধরছেন, তখন আলাদা এক এক্সপ্রেশন। তুমি এই নুয়ান্সগুলোই ধরতে পারোনি। ওখানেই চরিত্রটা শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
কিছু দিন পরে মীনাকুমারীর মেকআপ রুমে ঢোকেন গুলজ়ার। কামালের নির্দেশমতো দৌড়ে এলেন বাকর। ঠাস করে চড় কষিয়ে দিলেন মীনাকে। সে দিন আর কামালের বাড়ি ফেরেননি মীনা। ভগ্নিপতি মেহমুদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন। ঠিক গুরু দত্তের সিনেমা ‘ছোটি বহু’র মতোই হিস্টিরিয়ায় ডুকরে উঠে বলেছিলেন, ‘‘উসনে মুঝে ছুঁয়া ক্যায়সে? বাকর একজন মাইনে করা লোক। কেন তাকে এক্ষুনি জবাব দিয়ে আমাকে নিতে আসছে না কামাল?’’ তাজদার আমরোহি বললেন, ‘‘এ দিকে বাবাকে ছোটি আম্মির আত্মীয়রা বলেছিলেন, মীনা তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে চান না। বাবার আঁতে লেগে গেল। ছোটি আম্মি লোকের কথায় কান দিয়েই তো কাল করেছেন।’’
তখন একা হয়ে পড়া মীনাকুমারীর সঙ্গে ঘুরতে শুরু করেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত ধর্মেন্দ্র। মীনা বলতেন ধরম সাদাসিধে, বাধ্য ছেলে, শিখতে খুব উৎসাহ। কামালের কাছ থেকে যে ছেলেমানুষসুলভ সঙ্গ, যত্নআত্তি মীনা চাইতেন, কুড়ির কোঠার ধরমের কাছ থেকে তিনি সেটাই পেয়েছিলেন বলে ধারণা তাঁর ছোট বোন মধুর। ধর্মেন্দ্রকে ছবিতে সুযোগ দিতে তদ্বির করতেন আর ধরমও হৃদয়-উচ্ছ্বাস সামলাতে না পেরে সকলের সামনেই তাঁর প্রায় পায়ে পড়ে যেতেন। ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন ছিল, মীনাকুমারী একটু মুখমিষ্টি, কমবয়সি ভক্তপরিবৃত হয়ে থাকতে ভালবাসেন। লোকে বলছিল, কামাল আমরোহি তাঁকে তালাক দিতে নির্মম সব শর্ত রাখছেন। তাই নাকি মীনাকুমারী এমন গভীর অবসাদে। সে সময়ে ঘুমের জন্য ডাক্তার তাঁকে দু’চামচ ব্র্যান্ডি পান করতে বলেছিলেন। সেটাই পরিমাণে বাড়িয়ে মদিরাসক্ত হয়ে পড়েন মীনা। এর এক দশক বাদে কামাল মুখ খোলেন, ‘‘কোনও দিন তালাক হয়নি আমাদের। ওরই আপনজনরা এ সব রটিয়েছিল। ওরাই ওকে শুষছিল। সেটা যাতে ও বুঝতে না পারে, তার জন্য নানা কিসিমের ভাল-মন্দ পানীয় ধরিয়ে দিত হাতে। কত তাড়াতাড়ি চেহারাটা খারাপ হয়ে গেল, সে প্রমাণ তো পর্দাতেই রয়ে গিয়েছে।’’
সে সময়ে বলিউডের অন্যতম স্ক্যান্ডাল ছিল ধর্মেন্দ্র-মীনাকুমারী। তিন বছর পরে আলাদা হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু ঘনিষ্ঠ জন বলেন, অন্তরঙ্গতা ছিল বড়জোর ছ’মাস। আসলে সে সময়ের নায়ক-নায়িকারা, বিশেষত বিবাহিত হলে, লুকিয়েচুরিয়ে সম্পর্ক রাখতেন। এই দু’জনের মতো এ ভাবে প্রকাশ্যে ধরা দিতেন না। তাই ধরম-মীনা জুটির কথা ফলাও করে ছাপা হত। আসল কথা হল, ‘ফুল অউর পাত্থর’ সুপারহিট হতেই মাচো হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান ধর্মেন্দ্র। এর পরে আর মীনাজির জন্য সময়ই বার করতে পারেননি তিনি। অথচ সাক্ষাৎকারে মীনাজির প্রসঙ্গ উঠলেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেলতেন। ফল যা হওয়ার তাই হল।
ধর্মেন্দ্রর পরেও দু’-একজন স্ট্রাগলিং নায়ক এবং এক নবীন প্রযোজকের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। আমরোহি পরিবার থেকেও তখন বলা হয়েছিল, ‘এই জন্যই মা হতে রাজি হননি এই মহিলা।’ অথচ নার্গিস বলেছেন, ‘‘কে বলে ও কেবল হুল্লোড়ে? আমরা একসঙ্গে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। সঞ্জয় তখন ছোট্ট। দত্ত সাহাব আর আমি নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, সঞ্জু পরম নিশ্চিন্তে ওর কোলে গুটিসুটি হয়ে ঘুমোচ্ছে। ও হয়তো ভীষণ ভাল মা হত। সে সুখও পেল না।’’ তাঁর মমত্বের ভাগ পেয়েছেন সৎ ছেলে তাজদারও। ‘‘আমাকে তো পালন করবেন বলেই চেয়ে নিয়েছিলেন ছোটি আম্মি। আমার সব খুঁটিনাটি জানতেন। স্কুল থেকে এসে দেখতাম, পছন্দের খাবার সাজিয়ে রাখা। অদ্ভুত বাঁধনে জড়িয়ে নিয়েছিলেন আমাকে। উনি মেকআপ করতেন আর আমি আবোলতাবোল বকে যেতাম পাশে বসে। বলতাম, ছোটি আম্মি আমি যদি একটু বড় হতাম, আমিই তোমাকে বিয়ে করতাম। তোমার আর কোনও কষ্ট থাকত না।’’ হেসে গড়িয়ে যেতেন মীনাকুমারী। তাঁর আর এক পুষ্যিপুত্তুর ছিলেন মেহমুদ-তনয় লাকি আলি। ‘‘মীনা খালা আমারও মা। কী ভাবে জানেন? ওঁর রক্তে যা ছিল কবিতা, তা-ই আমার গলায় গান হয়ে ধরা দিয়েছে। শিল্পের অ-আ-ক-খ ওঁর কাছেই শেখা। উনিই আমাকে প্রথম বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখিয়েছিলেন। বেশি দিন তো পাইনি ওঁকে,’’ সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে ভেসে এল লাকির দীর্ঘশ্বাস!
চলো দিলদার চলো
সে সময়েই কোনও কোনও সমালোচক লিখেছিলেন, মীনাকুমারীর বিবিধ রূপ। পুতুল পুতুল গড়ন এই নায়িকার মধ্যে অনেক রকম মানুষ একসঙ্গে বাস করতেন। তাই তিনি কারও কাছে কোমলমতি ‘বচ্চোঁ জ্যায়সি’, আবার কারও কাছে মোহময়ী। ধর্মেন্দ্র তাঁকে এক ভাবে চিনেছিলেন, গুলজ়ার আর এক ভাবে মনে রেখেছেন। এই বহু সত্তা অভিনয়ের সময়ে খুব কাজে লেগেছিল। মেকআপ নিয়ে নিজের ভিতর থেকেই এক এক জনকে ডাক দিতেন মাত্র। ‘দায়েরা’-য় তিনি এক প্রৌঢ়ের স্ত্রী সাজলেন, বাস্তবেও তো তাই। ফলে সে চরিত্রে মিশতে অসুবিধে হল না। ‘বহু বেগম’-এ একটি দৃশ্যে আছে, প্রচণ্ড বদমেজাজি বাবা মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। দৃশ্যটি তিনি একটি টেক-এ ‘ওকে’ করলেন, তার পরে মাথা ঘুরে সেটের মধ্যেই পড়ে গেলেন। এ-ও যে তাঁর নিজের জীবনেরই অংশ! সেই যে বহুচর্চিত বাৎসল্য, হুবহু সেটাই দেখা গিয়েছে ‘মজলি দিদি’ সিনেমায়। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য বশত বারবার রিল আর রিয়্যাল জড়িয়ে যেত তাঁর জীবনে। তাজদার স্বীকার করলেন, ‘‘জীবদ্দশাতেই মিথ হয়ে গিয়েছিলেন। নিজেও জানতেন। আর স্টুডিয়োর বাইরেও সেই ‘মিথ মীনাকুমারী’কে বহন করেই বাঁচছিলেন তিনি। লোকে বলে, ‘পাকিজ়া’ অত বক্সঅফিস হিট, অথচ হিরোইনকেই সেই সাফল্যের কণামাত্র ভাগ দেওয়া হয়নি। আরে, উনি নিজেই তো এক গিনি পারিশ্রমিক চাইলেন ছবির জন্য। আমিই তো গিয়েছিলাম তাঁকে রাজি করাতে।’’
‘পাকিজ়া’-র কয়েকটি দৃশ্য তোলার পরেই কামাল-মীনা আলাদা হয়ে যান। এই সিনেমাও বারো বছর ধরে ক্যানবন্দি হয়ে যায়। মীনার শরীরে যখন সিরোসিস অব লিভার থাবা বসিয়েছে, সব জেনে তখন কামালেরও রাগ একটু স্তিমিত। সকলের অনুরোধে আর একবার সিনেমার রিলগুলো নিয়ে বসা হল। ‘পাকিজ়া’র সেট তৈরি, তার আবহ, সঙ্গীত নির্মাণে জলের মতো টাকা বেরিয়েছিল। এক একটা গালিচাই ছিল লাখ টাকার। সে জন্য তো বটেই, তা ছাড়াও সিনেমার এই রিলগুলো দেখে কয়েক জন কামালকে বলেছিলেন, ‘নিজেদের অভিমানের জন্য ভারতীয় সিনেমার এত বড় ক্ষতি কোরো না। এই ছবি শেষ করো।’ তাই কামালের দূত হয়ে মীনাকুমারীর কাছে গিয়েছিলেন ছেলে তাজদার।
দু’জনেই দু’জনের নানা শর্তে রাজি হয়ে যখন শুটিং শুরু করলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মীনার স্বাস্থ্য। বারো বছর আগের মীনার ফ্রেশ লুক আর এখনকার ভারী চেহারা, চোখের কালি— কী ভাবে তা ছবিতে মেলানো যাবে? কামাল আবারও মীনাকে বললেন, ‘‘সিনেম্যাটিক মিডিয়ামে তোমাকে কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। কাজেই ও সব ভাবনা আমার উপরে ছাড়ো।’’ ‘পাকিজ়া’র কস্টিউম ডিজাইনিংয়ের কৃতিত্বও নায়িকার। শরীরে বয়স ও অত্যাচারের ছাপ লুকোতে তিনি নিজেই ওই বিশেষ কাটের পোশাকের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর সেই ফতুয়া-লুঙ্গি পরার ধরন এর পরেও বলিউডে দীর্ঘ দিন চলেছিল। কিন্তু নাচ-গানের ধকলটা বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছিল। তাই কোথাও কোথাও লং শটে পদ্মা খন্নাকে বডি ডাবল করতে হয়েছিল। শরীরের প্রয়োজনেই এই সিনেমার অনেকখানিই মীনা শুয়ে শুয়েই অভিনয় করেছেন!
১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘পাকিজ়া’ মুক্তি পেতে, প্রথমে তাকে পরিচালকের আত্মম্ভরিতা, বিলাসী, খেয়ালি কল্পনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এপিক, ক্লাসিক ইত্যাদি শব্দবন্ধ শোনা যেতে লাগল। দর্শক ভিড় করতে লাগল তখন, যখন খবরে ছাপা হল, মাত্র চল্লিশেই এই সিনেমার নাম-অভিনেত্রী মরো মরো। শেষ বার পর্দায় নায়িকা হিসেবে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। বলাবলি হল, নিজেদের কাহিনিই রূপকের আশ্রয়ে পর্দায় মেলে ধরেছেন দম্পতি। মীনাকুমারীর শেষ সময়ে কি তাঁর মৃত্যুর ধুয়ো তুলে হিট ছিনিয়ে নিতে সিনেমাটি রিলিজ় করে দেওয়া হল? কে মানুষ আর কে সেই রাক্ষস, সেই প্রশ্ন উঠেছিল।
২৫ মার্চ মীনার পেট থেকে তিন বালতি লিকুইড বার করেছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের কথাতেও কিছুতে বিশ্রাম নিলেন না নায়িকা। যাওয়ার দিনেও সেই আসার দুর্দিনের পুনরাবৃত্তি। কাছের লোকরা বলছিলেন, ‘হাসপাতালের বিলটা মেটানো যাচ্ছে না। দিদি খুব বেহিসেবি ভাবে বেঁচেছেন!’
তাঁর খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে, পা ফুটো করে গ্লুকোজ় ইঞ্জেকশন দেওয়া হল। মরাঠা মন্দিরের ভরা প্রেক্ষাগৃহে অবশ্য তখনও তিনি গজ়লের তালে পা মেলাচ্ছেন নিখুঁত, ‘চলতে চলতে, ইয়ুহি কোই মিল গয়া থা...’ উপচে পড়ছে নির্মাতাদের কোষাগার। এ দিকে হাসপাতালের সিঁড়িতে এসে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে গোটা বলিউড।
৩১ মার্চ সূর্য আরব সাগরে ডোবার আগেই অস্ত গেলেন মীনাকুমারী। ধর্মেন্দ্র তাঁর জনাজার সামনে ফুল রেখে দোয়া করলেন, অক্ষয় শান্তি দাও। গুলজ়ার এসে কবরে ছড়িয়ে দিলেন কয়েক রকমের নুড়ি-পাথর। নায়িকা নতুন জায়গায় গেলে সেখান থেকে মাটি আনতেন। নিজের কবিতার খাতার সঙ্গে সেগুলোও নাকি এক দিন রাখতে দিয়েছিলেন তাঁকে। আমরোহিদের তরফে দাবি করা হল, এটি তাঁদেরই পরিবারের জন্য নির্ধারিত কবরখানা। সেখানেই ঘুমোতে চেয়েছিলেন তিনি। তা হলে কেন বলা হচ্ছে যে, বিচ্ছেদ হয়েছিল?
পরের সকালেই নার্গিস কাগজে সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তিটি লিখলেন, ‘মওত মুবারক হো। আর কখনও এই দুনিয়ায় জন্ম নিয়ো না মেহজবিন।’
ঋণ: মীনাকুমারী, দ্য ক্লাসিক বায়োগ্রাফি, বিনোদ মেটা