Bengali

Theater: একরাশ ঝিরঝিরে বাতাসের মতো নাটক

টাইপিস্ট নাটকটি মন ভাল করে, ভাবায়। একটা আয়না তুলে ধরে সামনে। আমরা নিজেদের দেখি।

Advertisement

সৌভিক সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২০
Share:

নাটকের একটি দৃশ্যে অভিনেতারা।

মিনার্ভার নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে মঞ্চায়িত হল শ্যামবাজার মুখোমুখির ‘টাইপিস্ট’ নাটকটি। মূল নাটক আমেরিকান নাট্যকার মারে শিসগাল-এর। নাটকটি অনুবাদ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

একটি অফিস আর দু’জন টাইপিস্ট। ইন্দ্রাণী আর অনিরুদ্ধ। অভিজ্ঞতায় আর পদমর্যাদায় ইন্দ্রাণী সিনিয়র। অনিরুদ্ধ নতুন ঢুকেছে। শুরু হয় তাদের মধ্যে আলাপ-পরিচয়, কথোপকথন। জীবনের দরজা খুলে উঠে আসে ব্যক্তিগত জীবনের টুকিটাকি গল্পরা। ইন্দ্রাণীর ভাল লাগে অনিরুদ্ধকে। অনিরুদ্ধর ভাল লাগে ইন্দ্রাণীকে। তারা একে অপরের সঙ্গে কাজের মাঝে খুনসুটি করে। অনিরুদ্ধকে নিয়ে সংসারের স্বপ্নও দেখে ফেলে ইন্দ্রাণী। অথচ হঠাৎ একদিন সে জানতে পারে যে অনিরুদ্ধ বিবাহিত! ঝাঁকুনি খায় সে। দূরত্ব তৈরি হয়। কাজ চলে, অফিস চলে নিয়মমাফিক। টাইপরাইটারের শব্দে ভরে ওঠে দূরত্বের দুপুর।

একসময়ে এ সব পেরিয়ে আবার কথা বলে ওঠে তারা। বন্ধুত্ব ফিরে আসে হাসিতে, খুনসুটিতে। অথচ আমরা দেখি বয়স বেড়ে গিয়েছে দু’জনের। পুরো নাটকটির কোনও পটপরিবর্তন হয় না, শুধু এগিয়ে চলে আয়ু। এক অফিস, এক ডেস্ক, এক কাজ আর দু’টি মানুষ। এর কোনও হেরফের নেই। শুধু বদলে চলে সময়। কালো চুলে পাক ধরে। টানটান শরীর শিথিল হয় ক্রমশ। গ‍রম রক্ত শীতল হয়ে আসে। বুকে হাঁফ ধরে। ধারালো ইচ্ছেগুলো নীরব হয়ে পড়ে।

Advertisement

টাইপিস্ট নাটকটি হয়ে ওঠে মধ্যবিত্ত মানবজীবনের আখ্যান। যেখানে একটি চাকরিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন। তার সাধ-আহ্লাদ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা, বিদ্রোহ সবকিছুই বড় নিরীহ। সে যা চায়, সে জানে হয়তো তা সে পাবে না। কিন্তু চেয়ে বসে। না পেয়ে হতাশ হয়। আবার এইসবের ভিতরেই ছিটকে ওঠে প্রেম, বন্ধুত্ব, মধুর রসিকতা। এ তো আমাদের জীবনের চিত্র।

টাইপিস্ট নাটকটিতে অনিরুদ্ধর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবশঙ্কর হালদার ও ইন্দ্রাণীর চরিত্রে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। গোটা নাটক জুড়ে এঁদের দু’জনের অভিনয় দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। দেবশঙ্কর হালদারের অভিনয় সরসতায় টইটম্বুর। এক মুহূর্তে হাস্যরসের অবতারণা করেই, পরমুহূর্তে নিয়ে যাচ্ছেন গাম্ভীর্যের দিকে। একই সঙ্গে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের ভিতরে অপরূপ সাবলীলতা আর মেধার প্রকাশ ঘটেছে। এঁদের দু’জনের অভিনয়ের ভিতর যে অসাধারণ কেমিস্ট্রি ফুটে উঠেছে তা ভীষণই উপভোগ্য। এ নাটকে বিলু দত্তর মঞ্চসজ্জা ছিমছাম ও যথাযথ। দিশারী চক্রবর্তীর আবহসঙ্গীত, মনোজ প্রসাদ ও মানস মুখোপাধ্যায়ের আলোক সংযোজনা ভাল লেগেছে। নজর কেড়েছে মহম্মদ আলির মেকআপ। যেহেতু এই নাটকটির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানুষের আয়ু ও সময়ের চলাচল, তাই ইন্দ্রাণী ও অনিরুদ্ধর মেকআপে বারংবার পরিবর্তন আনতে হয়েছে। কাজটি সুন্দর করেছেন মহম্মদ আলি।

নাটকটি পরিচালনা করেছেন পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। পরিচালক হিসেবে নাটকের এইরকম উপভোগ্য উপস্থাপনা দর্শকদের অবশ্যই আনন্দদান করেছে। পিতার অনূদিত নাটকে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। খুঁটিনাটির প্রতি তাঁর বিশেষ নজর লক্ষ করা যায়। সমস্ত নাটকটি জুড়ে একটি পরিমিতিবোধ আমরা দেখতে পাই। সেটা মঞ্চসজ্জা হোক বা অভিনয়। সবটাই খুব স্বাভাবিক, খুব সাবলীল।

টাইপিস্ট নাটকটি মন ভাল করে, ভাবায়। একটা আয়না তুলে ধরে সামনে। আমরা নিজেদের দেখি। ওই অফিসটায় আমরা সকলেই কাজ করেছি। আমরা জানি জীবন কেটে যায় কী ভাবে, কতটা হাসিতে, কতটা লুকিয়ে রাখা অশ্রুর ভিতর দিয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement