Art exhibition

সরলীকরণের তারুণ্যে উজ্জীবিত ছবি

বেশির ভাগ কাজই অ্যাক্রিলিক, মিশ্র মাধ্যম, কালি ও তুলি মাধ্যমে রচিত। বিষয়গত দিক থেকে নেহাতই দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সুখদুঃখের তহবিল থেকে আহরিত ছবির সব কম্পোজ়িশন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৯
Share:

আঁকিবুকি: তরুণ ঘোষের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

বেশ কয়েক বছর পরে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে সম্প্রতি সম্পন্ন হল শিল্পী তরুণ ঘোষের একক চিত্র প্রদর্শনী। শিল্পীর নিজের নামের সঙ্গে চিত্রের পরিভাষা যেন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। তবে ‘আনসেফ ল্যান্ডিং’ নামাঙ্কিত প্রদর্শনীটির নামকরণে হঠাৎই মনে হতে পারে, হয়তো বা কোনও তরুণ, অপরিপক্ব শিল্পীর দ্বিধাময় কোনও অবতরণ। কিন্তু বাস্তবে তার একেবারেই বিপরীত। কারণ শিল্পী তরুণ ঘোষ তাঁর দীর্ঘ শিল্পচর্চার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অতীব সুপরিচিত।

Advertisement

প্রদর্শনীটিতে মোট ৩৮টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল। বেশির ভাগ কাজই অ্যাক্রিলিক, মিশ্র মাধ্যম, কালি ও তুলি মাধ্যমে রচিত। বিষয়গত দিক থেকে নেহাতই দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সুখদুঃখের তহবিল থেকে আহরিত ছবির সব কম্পোজ়িশন। যেমন ‘পরিবার’, ‘বাগান’, ‘রাস্তা’ অথবা ‘প্রতিবেশী’ নামে চিহ্নিত হয়েছে বহু কাজ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিষয় যত সহজই মনে হোক না কেন, চিত্রের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে শিল্পী যে তাঁর অভ্যন্তরীণ বৃহত্তর মানসিক সত্তাকে তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছেন, তা বেশ বোঝা যায়। মানুষের একক ব্যক্তিসত্তা বা আমিত্বের আড়ালে যে সামগ্রিকতার এক পূর্ণতা লুকিয়ে থাকে, সেই হোলনেস বা পরিপূর্ণতার সৃজনোন্মুখ আস্বাদকে প্রকাশ করাই ছবিগুলির মূল প্রতিপাদ্য বলে মনে হয়।

শিল্পীমাত্রই গড়ে তোলেন তাঁর নিজের এক জগৎ। যে জগতে শিল্পীর থাকে অনায়াস বিচরণ, সেখানে হতাশা, ক্ষোভ, দুঃখের সাথে সহবাস করে উৎসাহ, আনন্দ ও বিস্ময়। এ ক্ষেত্রেও শিল্পী তরুণ ঘোষ সেই সব দৈনন্দিন শখ, আহ্লাদ, বিষাদ, বিস্ময়কে নিজের মতো করে চিহ্নিত করে তাতে রূপ, রং, আকার সংযোজন করে সাজিয়েছেন তাঁর চিত্রমালা। জীবনমাত্রই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সংশয় ও দ্বিধার যে টানাপড়েন, চড়াই-উৎরাইয়ের ঘূর্ণাবর্ত, ঠিক-বেঠিকের অহর্নিশি এক প্রশ্নোত্তর, সেই সব অন্তর্নিহিত অনুভব, অনুভূতি, ভাবনার সংশ্লেষে রচিত তাঁর সব ছবি।

Advertisement

প্রখ্যাত শিল্পী প্রয়াত বিকাশ ভট্টাচার্যের কাছে জাতীয় বৃত্তি পেয়ে কাজ করার সুবাদে, হয়তো বা ফিগারেটিভ আর্টের প্রতি তরুণ ঘোষের আকর্ষণটি বিশেষভাবে প্রতীয়মান। কারণ শিল্পরচক ভাবনার গভীরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংলাপের যে ক্রিয়াকরণ, হতাশা ও অনিশ্চয়তার যে বিষাদ, সেগুলিকে অতি নান্দনিকভাবে তাঁর নিজস্ব চিত্রভাষার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। কিন্তু সেই সংলাপগুলি সৃষ্টি করতে গিয়ে প্রচলিত ধ্রুপদী ধারাকে বেছে না নিয়ে, কোনও ছায়াতপের ছলনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে, শিল্পী বরঞ্চ এক লৌকিক মাধুর্যের আবরণে তাঁর মানবিক অবয়বগুলিকে মুড়ে দিয়েছেন। ফলত সরলীকৃত রেখা ও গঠনের মাধ্যমে তাঁর ভাবনাগুলি অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে ফুটে উঠেছে।

চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে আমরা জানি, তা কয়েকটি প্রথাগত মাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু মাধ্যমগুলির বিবিধ উপস্থাপনা ও ব্যবহারিক তারতম্যের ভিত্তিতে শিল্পকর্মগুলি অর্জন করে তার বিশিষ্টতা। এ ক্ষেত্রেও তা-ই দেখা যায়। উপযুক্ত বর্ণমালা চয়নে যেমন উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি হয়, তেমনই মুষ্টিমেয় মাধ্যমের বহুবিধ ব্যবহারে সৃষ্টি হয় নিজস্ব চিত্রের ভাষা। এবং সেই ভাষার নিজস্বতাই জন্ম দেয় তার বিশেষ আঙ্গিক। এ ক্ষেত্রেও পাশ্চাত্যের আধুনিক পয়েন্টিলিজ়ম ধারার সমতুল্য রং ও তার বিন্যাস তরুণ ঘোষের চিত্রপটগুলিতে এক ঘনত্ব ও গভীরতা প্রদান করেছে। সুতরাং বহু রঙের এই বিন্দুভিত্তিক বুনট ছবির তলকে এক স্বপ্নময় জগৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

শিল্পীর মনন, তাঁর শিল্পসত্তা ও সৃষ্টিময়তা যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখনই সেই সব কাজে এই একত্বের ছোঁয়া, তারুণ্যের স্পন্দন ও সজীবতা উপলব্ধ হয়।

সোহিনী ধর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement