পিয়ালী দাস
সম্প্রতি উত্তম মঞ্চে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় শুরুতেই ছিল ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ আমরা’ সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত। গাইলেন ‘মাটির গান’ সংস্থার শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে এ বারের আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত কবি সুধীর দত্ত স্বরচিত কবিতা পাঠ করলেন। দেবাশিস কুমারকে এ দিন পাওয়া গেল বাচিক শিল্পী হিসেবে। তাঁর কণ্ঠে ‘সোনার তরী’ কবিতাটির পরিবেশন অন্য মাত্রা পায়।
অনুষ্ঠানের শেষে বিশেষ আকর্ষণ ছিল মনোময় ভট্টাচার্যের গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক সহ তাঁর নিজস্ব অ্যালবামেরও নানা স্বাদের গান শোনালেন তিনি। ‘মনের মানুষ চিনলি না রে’ গানটি গাইতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়লেন শিল্পী। বললেন, এত বছর পরেও এই গানটি মানুষ শুনতে চায়, যা শিল্পী জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি। ‘আকাশ জুড়ে শুনিনু’, ‘চেয়ে দেখ মেঘেরা ছুঁয়েছে’, ‘আমার বেরঙিন এ জীবন’ গানগুলি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এ দিন শিবানী কুণ্ডু পরিবেশন করলেন দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘বাদল ধারা হল সারা’ এবং ‘তোমরা যা বল তাই বল’। শ্রুতিমধুর পরিবেশন। অনুপম গুহ গাইলেন ‘তোরা যে যা বলিস ভাই’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি। রিঙ্কু দত্তের সুরেলা কণ্ঠে পরিবেশিত হল ‘ওই সুর ভরা দূর নীলিমায়’। সঞ্চালনায় ছিলেন সুদীপ্তা মুখোপাধ্যায়। আয়োজক ‘মাটির গান’।
হৃদয় আমার
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ডাইমেনশন্ ফোর আয়োজিত ‘আজি এসেছো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল ‘দেশ আমার’ নামে একটি সিডি প্রকাশ। অপর্ণা সেন ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে প্রথমে দ্বিজেন্দ্র, রজনী ও অতুলপ্রসাদের কবিতা ও গান। নূপুরছন্দা ঘোষের স্বদেশ পর্যায়ের কিছু অশ্রুত গান।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় প্রতাপ রায়ের পিয়ানো অ্যাকোর্ডিয়ানে দেশপ্রেমের মধুর সুরে। দ্বিতীয়ার্ধে নূপুরছন্দা শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও দিলীপ রায়ের একক গান। এই কবিদের গানের যে বৈশিষ্ট তিনি তাঁর গায়কীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন যা প্রশংসনীয়। রজনীকান্তের গানে ভক্তি ভাবটি ফুটেছে নিখুঁত ভাবে। তেমনই অতুলপ্রসাদের গানে যে ঠুংরী ও টপ্পার ছোঁয়া, সেটিকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে। বিশেষ করে টপ্পায় ‘কে যেন আমারে বারে বারে চায়’ গানটি। আবার দ্বিজেন্দ্রলালের বিদেশি সুরে ‘বেলা বয়ে যায়’ তার অনায়াস স্বচ্ছন্দ গায়কি লক্ষণীয়। তবে দুর্গাদাস নাটকের ‘হৃদয় আমার গোপন করে’ শ্রেষ্ঠ নিবেদন। তবলায় ছিলেন দীপঙ্কর আচার্য। শেষে নূপুরছন্দা তাঁর শতাধিক ছাত্রছাত্রীসহ স্বদেশ পর্যায়ের গানের একটি কোলাজ পরিবেশন করেন। শুরু হয় প্রতাপ রায়ের সুরে। নূপুরছন্দা শেষ করেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক-এর মতো তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে।
মনে পড়ে আজ
বারীন মজুমদার
সুপ্রতীক দাস-এর একক অনুষ্ঠান হল ‘সঙ্গীতের উপর রাগের প্রভাব’ শিরোনামে। দশটি গানই ছিল সুরে তালে সুগীত। সুপ্রতীক এদিন নির্বাচন করেছিলেন সর্বজনবিদিত রাগ ইমন। তিনি শুরু করলেন একটি বন্দিশ ‘কল নহি আয়ে মরি’ দিয়ে। পরেই গাইলেন দুটি গজল ও চতুর্থ গানটি ছিল ভজন। প্রত্যেকটিরই রূপারোপে রাগের প্রাধান্য রেখেও সুরকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুললেন আন্তরিক নিবেদনের মাধ্যমে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘দাঁড়িয়ে আছ’ স্বরলিপির কাঠামোতে মোটামুটি ঠিক থাকলেও ভাবের ঘাটতি ছিল। ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’ গানটি বেশ দরদ দিয়ে গেয়েছেন। ন’ নম্বর গানটির শুরুটা যন্ত্রসঙ্গীতের আধিক্যের কারণে কথা অপরিষ্কার থেকে যায়। পরে ‘শিশিরে ভেজা ঘাস’ থেকে কথা পরিষ্কার হলেও এই গানটিতে যন্ত্রসঙ্গীতের প্রাধান্যই বেশি মনে হয়। নজরুলগীতি ‘মনে পড়ে আজ’ সুপ্রতীকের এদিনের সর্বোত্তম নিবেদন। তাঁর এদিনের সহযোগী শিল্পীরা ছিলেন ইন্দ্র (কিবোর্ড), সুমন, উদয় (তবলা) ও ভাস্কর (সেতার)।
হরি প্রেমগগনে
বাংলা অ্যাকাডেমিতে কুহুতান এর অনুষ্ঠানে দ্বিজেন্দ্রলাল ও রজনীকান্তর জন্মজয়ন্তীতে শুরুতেই বক্তব্য রাখলেন সুশোভন মুখোপাধ্যায়।
এর পর সংযুক্তা ভাদুড়ি ৯টি রজনীকান্তের গান শোনালেন। ‘বেলা যায় বহু দূরে’, ‘হরি প্রেমগগনে’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে অতুলপ্রসাদের ‘ওঠো গো ভারতলক্ষ্মী’ এবং রজনীকান্তের ‘আকুল কাতর কণ্ঠে’ গান দুটি মনে থাকবে বহু দিন। শেষে সংযুক্তা একটি হাসির গানও শুনিয়েছেন ‘আমরা দু’ বেলা হেঁশেলে’। পরে সুকন্যা নাথ শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলালের ‘আমরা এমনি এসে’ গানটি। মধুমিতা বসু পাঠ করলেন ‘নন্দলাল’ কবিতাটি। অঞ্জন চন্দ শোনালেন ‘হোলো কি’। সঞ্চালনায় ছিলেন মধুমিতা বসু।