বর্ষাকালের সঙ্গে বারান্দার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অঝোরধারা দেখতে কার না ভাল লাগে! আর যদি সেই একফালি বারান্দাতেই থাকে ছোট্ট বাগান? বারান্দার রেলিং জড়িয়ে যদি বেড়ে ওঠে সবুজ ডালপালা? মনও ভাল হয়ে যায় এক লহমায়। এমন অনেক গাছ আছে, যাদের ফলন বর্ষায় বেশি। বৃষ্টির জলে সে সব গাছ বেড়ে ওঠে তরতরিয়ে। তার সঙ্গেই আরও সবুজ করে তোলে বারান্দা লাগোয়া বাগানকেও। তা হলে এই ভরা বর্ষায় কোন গাছ লাগাবেন? কেমনই বা হবে তাদের যত্নআত্তি?
কোনও কোনও বছরে বর্ষা আসতে বেশ দেরি করলেও মোটামুটি জুলাই মাসের গোড়া থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি বর্ষার সময় ধরেই নেওয়া হয়। এই সময়টা তাই বীজ পোঁতা, গাছের চারা লাগানো, একটি টব থেকে অন্য টবে পোঁতা বা রিপ্ল্যান্টিং, প্রোপ্যাগেট... সমস্ত ধরনের কাজ করাই সহজ হয়। তবে বর্ষায় বাগান তৈরির বেশ কিছু সাধারণ নিয়মকানুন মাথায় রাখা জরুরি।
• টব কিংবা বেড... যাতেই বীজ, গাছ পোঁতা হোক, নিকাশির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। মাটিতে যেন জল না দাঁড়ায়। এতে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• আবার বৃষ্টি পড়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। তাই রোজকার মতো বা নিয়ম মেনে জল দেওয়া জরুরি। কিন্তু তার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, বৃষ্টির জল ও বাইরে থেকে দেওয়া জল— দুইয়ে মিলে জল যেন গাছের জন্য অতিরিক্ত না হয়।
• ফ্লাওয়ার বেড করলে সেটি সামান্য উঁচু করে রাখাই শ্রেয়। এতে অতিরিক্ত জল ঝরে যাবে, আবার প্রয়োজনীয় ময়শ্চার থেকে যাবে মাটিতে।
• বর্ষায় আগাছা জন্মানোর প্রবণতা থাকে অনেক বেশি। তাই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
• গ্রীষ্মের সময়ে মাটি শুকিয়ে খটখটে হয়ে যায়। নিয়মিত জল দিলেও এই সময়ে মাটি শুকোনোর প্রবণতা অনেক বেশি। তাই বর্ষাকালে মাটি খুঁচিয়ে দেওয়া দরকার। এমনকি প্রয়োজন মতো ডালপালা, পাতা ছেঁটেও ফেলতে হবে।
• যে অংশ আর বাড়ছে না অথবা মৃত, সেই অংশটি অবশ্যই কেটে ফেলা দরকার। এতে কচি পাতা জন্মানোর সুযোগও করে দেওয়া হয়।
• আগাছা কাটার পাশাপাশি কীটপতঙ্গ থেকেও রেহাই দিতে হবে গাছকে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অনেক সময়েই তারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
এ বার দেখে নেওয়া যাক কোন ধরনের গাছ বর্ষাকালে তাড়াতাড়ি বাড়ে।
মানিপ্ল্যান্ট: পোথোস বা মানিপ্ল্যান্ট এমনিতেই বেশ শক্ত সমর্থ গাছ। অতিরিক্ত জল, একদম জল না দেওয়া... সব কিছুই সহ্য করে নেয় মানিপ্ল্যান্ট। বর্ষাকালে বারান্দায় মানিপ্ল্যান্ট লাগালে রেলিং ধরে তরতরিয়ে বাড়বে গাছ।
জবা: লাল টুকটুকে জবা হোক অথবা সাদা কিংবা গোলাপি... টবে জবাগাছ বেড়ে ওঠে সহজেই। জবার মাটি ভেজা থাকা প্রয়োজন। কোনও সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে অবশ্যই তিন থেকে চার বার জল দিতে হবে।
জুঁই: গরমকালে জুঁই ফুল ফুটলেও বর্ষায় গাছ বাড়ে অনেক বেশি। আর সন্ধেবেলা কুঁড়ির মনমাতানো গন্ধে মাতোয়ারা হতে কে না চায়?
সূর্যমুখী: বারান্দায় একটি মাত্র সূর্যমুখী ফুলই বদলে দিতে পারে বাগানের ভোল। উজ্জ্বল হলুদ পাপড়ির এই ফুল একটি, আবার ঝাঁকেও জন্মায়।
প্লুমেরিয়া: ক্রান্তীয় অঞ্চলে বহুল পরিমাণে পাওয়া যায় এই প্লুমেরিয়া। তবে বারান্দা নয়, এর জন্য প্রয়োজন বড় পরিসর। কাঠচাঁপা, লেই ফ্লাওয়ার্স, ফ্র্যাঞ্জিপানি নামে পরিচিত এই ফুলের সুগন্ধী।
মনসুন ক্যাসিয়া: নাম শুনেই মালুম হয় যে, এই গাছ বর্ষায় তাড়াতাড়ি বাড়ে। আর ছোট ছোট হলুদ রঙের ফুলে ভরে যায় এই গাছ।
এ ছাড়াও বালসাম, কসমস জাতীয় নানা গাছ লাগানোর জন্য বর্ষাকাল একেবারে আদর্শ। এ ধরনের গাছের পাশাপাশি বাড়িতেই অনেকে তৈরি করেন হেঁশেলের বাগান। সামান্য বুদ্ধি খাটিয়ে, অল্প যত্নআত্তিতে রোজকার রান্নার বা খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় গাছ লাগানো যায়। বর্ষায় শসা, ঢ্যাঁড়শ, টম্যাটো, কারি পাতা গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়। উপযুক্ত সার দিলে ফলন হয় ভাল।
তা হলে সময় থাকতেই বাড়িতে লাগিয়ে ফেলুন এমন গাছ, যা বেড়ে উঠবে পলক ফেলতেই। আর বৃষ্টিভেজা সবুজ গাছের পাতা যখন চকচক করবে ঔজ্জ্বল্যে, তখন নতুন করে ভালবেসে ফেলবেন গাছ, বৃষ্টি, বারান্দা... এই মরসুমটাকেই।