ব্যস্ততার জন্য সম্পর্কে দূরত্ব? কী ভাবে বজায় রাখবেন স্বাভাবিক ছন্দ?

পরামর্শ রইল আপনাদের জন্য কী ভাবে বজায় রাখবেন দাম্পত্যের স্বাভাবিক ছন্দ? পরামর্শ রইল আপনাদের জন্য

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৮:২০
Share:

আবির আর মোহর স্বামী-স্ত্রী। পেশায় সাংবাদিক মোহর যখন গভীর রাতে বাড়ি ফেরে, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার আবির তখন ঘুমের গভীরে। আর সকালে স্ত্রী ওঠার আগেই স্বামী বেরিয়ে যায় কাজে। একটা সময় যেখানে ওঁদের কথা ফুরোতো না, এখন একসঙ্গে ঘণ্টাখানেক কাটানোর মতোও সময় নেই। সৃজিতা-অভিজিৎও ব্যস্ত দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের সাত বছরের মেয়ে তিস্তার দায়িত্বও রয়েছে। পেশা, সংসার... সব কিছুর চাপে আলটিমেটলি জাঁতাকলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। উভয় ক্ষেত্রেই পরস্পরের মধ্যে পাক দিয়ে ওঠা সমস্যার সমাধান নেই। অল্পেই তাঁরা একে অপরের উপর বিরক্ত। অভিযোগের আঙুল ওঠে। চিৎকার-চেঁচামেচি। ক্রমশ তিক্ততার পাশে বাঁধা পড়ছে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনডোর।

Advertisement

গল্পগুলো বোধ হয় অনেকেরই চেনা। এখন তো অধিকাংশ পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মরত। আর আমরা যত ব্যস্ত হচ্ছি, তত বাড়ছে দূরত্ব। ভুলে যাচ্ছি রিলেশনশিপ বাঁচিয়ে রাখতে যোগাযোগ রাখাটা কতটা দরকারি। ফলে না-বলা কথার পাহাড় জমছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিণতি হচ্ছে ডিভোর্স। আসলে একটা সম্পর্ক গড়তে যেমন সময় লাগে, ভাঙার বেলায় হয় উল্টোটাই। আবার এমনও হয়, যখন বুঝে ওঠার আগেই ভাঙন শিকড় ছড়াতে থাকে সম্পর্কের ভিতে। তার পর যখন তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়, ততদিনে সে ঝুরঝুরে। কিন্তু যদি ছোটখাটো কয়েকটা বিষয়ে খেয়াল রাখেন, দেখবেন এড়ানো গিয়েছে অনেক সমস্যা।

• আপনি যত গুরুত্বপূর্ণ পদেই চাকরি করুন না কেন, অফিসের কাজ অফিসেই সারুন। সারাদিন অফিসের ব্যস্ততার পর যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন একটু খেয়াল করে শুধু পারিবারিক ব্যাপারেই কথা বলুন।

Advertisement

• বর্তমানে বহু সমস্যার মূলে ফোন বা ইন্টারনেট। ইদানীং আমরা এই দু’য়ের উপর যে ভাবে নির্ভরশীল, তাতে অনেক কিছুর সঙ্গে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পর্কও। তাই বাড়ি ফিরেই হোয়াট্‌স অ্যাপ বা ফেসবুকে স্ক্রল করা কিংবা মেসেজ করা থেকে বিরত থাকুন।

• দিনে অন্তত একটা মিল স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সারার চেষ্টা করুন। যখন একসঙ্গে খাবেন, তখন পার্টনারের পেশা সম্পর্কে যতই অনাগ্রহী হোন, তাঁর সারাদিন কেমন কাটল, জানতে চান। নিজের সারা দিনের জার্নিও শেয়ার করুন। এতে যেমন একে অপরের কাজের জগৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন, তেমনই কর্মক্ষেত্রে সমস্যা হলে তা বোঝার মানসিকতাও তৈরি হবে।

• যদি এমন হয়, পরপর বেশ কিছু দিন হয়তো আপনাদের মধ্যে ঠিকমতো কথা হয়নি। তখন একটা নির্দিষ্ট দিন আপনারা দু’জন বা সন্তান থাকলে তিনজনে একসঙ্গে কোথাও যান, যেখানে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব। এটা শুনতে বড্ড ‘নিয়মনিষ্ঠ’ লাগলেও, কার্যক্ষেত্রে কিন্তু ভাল ফল পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে পার্টনারকে গিফট দিন। আপনি যে কেয়ার করেন, সেই বার্তাই পৌঁছবে।

• সংসারের ছোট ছোট কাজ একসঙ্গে সারার চেষ্টা করুন। এতে যেমন একসঙ্গে সময় কাটানো হবে, তেমনই সংসারের প্রতি দু’জনেরই দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। সংসারের কাজ একা কারও উপর বর্তায় না। দু’জনের সংসারে কাজের ভাগীদারও হোন সমান ভাবে।

• একঘেয়ে জীবনে ব্রেক আনতে কখনও-সখনও পার্টনারকে রোম্যান্টিক মেসেজ বা স্মাইলিও পাঠাতে পারেন। এগুলোও সম্পর্কে অক্সিজেন জোগায়।

• দাম্পত্য সুখের জন্য একে অপরের পেশাকে সম্মান করাটাও খুব জরুরি। পার্টনারের পেশা আপনার ভাল না লাগতেই পারে। কিন্তু দিনের শেষে উপার্জনটা সংসারের জন্যই হচ্ছে।

• দু’জনের কমন শখ থাকলে, যেমন যদি বই পড়তে ভালবাসেন, একে অপরকে সন্ধান দিন নতুন বইয়ের। আবার অন্যের ভাললাগার দিকেও খেয়াল রাখুন।

আসলে ব্যস্ততার মধ্যে আলাদা করে সময় জীবনসঙ্গীকে দেওয়া হয়ে ওঠে না। খানিক অভ্যেস, খানিক অবহেলা... এতেই ডুবে থাকে ‘দাম্পত্য’। কিন্তু কথায় আছে না ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’। তাই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে একটু চেষ্টা করুন। আর জানবেন, মানুষ একে অপরকে ‘সময়’-এর চেয়ে দামি কোনও কিছু দিতে পারে না।

মডেল: এনাক্ষী, অনমিত্র মেকআপ: জিতেন্দ্র মাহাতো লোকেশন: আইভি হাউস

ছবি: দেবর্ষি সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement