যাতায়াত, ফোনের বিল, ইলেকট্রিক বিল, মুদি বাজার... সংসার খরচ বেড়েই চলেছে! প্রত্যেক মাসেই নতুন নতুন জিনিসের চাহিদা আর তা মেটাতে ব্যাঙ্কের শরণাপন্ন প্রায় সকলেই। ধারদেনা, লোনের বোঝা বেড়েই চলেছে। সংসার খরচের ডায়েটের পালা এ বার।
• খরচে লাগাম পরানোর আগে নিজেদের চাহিদায় লাগাম দিতে হবে। শপিং এখন এক ধরনের অবসরযাপন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অহেতুক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয়ে যায়, খরচও হয় বেশি। তাই দরকার ছাড়া কেনাকাটা বন্ধ করতে হবে। একান্তই শপিং করতে ভাল লাগলে, সেলের সময় বেছে নিন। অনলাইন শপিং অ্যাপেও প্রায়ই সেল বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। সেই সময়টা কাজে লাগান।
• মাসে যে সব পেমেন্ট করতেই হয় যেমন ইলেকট্রিক ও ফোন বিল, লোনের টাকা... মাসের গোড়ায় মিটিয়ে দিন। ইলেকট্রিক ও ফোন বিল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
হিসেব রাখার অ্যাপ
খরচ মনিটর করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ পেয়ে যাবেন অ্যাপস্টোরে। সেখানে কোন দিন কোন খাতে কত টাকা খরচ করছেন তা লিখে রাখুন। ধরুন রেস্তরাঁয়, ওষুধ কিনতে, যাতায়াত, শপিং, বিল পেমেন্ট বাবদ আপনার সব খরচ লিখে রাখলেন। পরে মাসিক খরচ হিসেব করার সময়ে যদি দেখেন, অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে— তা হলে বুঝতে পারবেন, কোন খাতে বেশি টাকা খরচ করেছেন। পরের মাসে সেই খরচে রাশ টানতে পারবেন।
• বাজার বা মুদিও মাসের প্রথমেই করে রাখুন। কী কী কিনতে হবে তালিকা করে নিন। আর তার পাশেই সম্ভাব্য দামটা লিখে ফেলুন। বাজারে যাওয়ার আগেই হিসেব করে দেখুন কত টাকা মোট খরচ হবে। টাকার পরিমাণটা চোখে পড়লেই দেখবেন, লিস্ট থেকে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ পড়ে যাচ্ছে। মুদির বাজারের ক্ষেত্রেও বিশেষ দিনে বড় বড় গ্রসারি স্টোরে ছাড় দেওয়া হয়। সেই দিন বেছে নিতে পারেন।
• গ্যাসের দামও যে পরিমাণে বাড়ছে, সেই খরচেও লাগাম পরানো জরুরি। গ্যাসের খরচ কমাতে আভেন, ইনডাকশন ব্যবহার করতে পারেন। তা ছাড়া রান্নার সময় কমিয়েও গ্যাসের খরচে রাশ টানা যায়। যেমন ধরুন, ভাত রান্নার সময়ে জলে চাল দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। গ্যাস বন্ধ করে ভাতে ঢাকা দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। ফ্যান ঝরানোর আগে আর একবার গ্যাস চালিয়ে মিনিট দুয়েক ফুটিয়ে নিন। ভাত হতে টানা গ্যাস ব্যবহার করলে মোটামুটি ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে ভাত রাঁধলে রোজ প্রায় ১৫ মিনিট গ্যাস বাঁচে। মাসে ৩০ দিনে হিসেব করে দেখুন কতটা সাশ্রয় হয়! রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখলেও সিদ্ধ হতে কম সময় লাগে। ডাল বা আনাজ প্রেশার কুকারে সিদ্ধ করতে পারেন।
• গ্যাস, ইলেকট্রিকের পিছনে মাসে অনেক খরচ হয়। ইলেকট্রিকের খরচ কমাতে শীতকালে রাতের দিকে ৭-৮ ঘণ্টা ফ্রিজ বন্ধ রাখতে পারেন। ঘরে এল ই ডি লাইট লাগালে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। বিদ্যুতের জায়গায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। রান্নায় সোলার কুকার, ঘরে সোলার লাইট ব্যবহার করা যায়।
• বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের নামেই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা তো রাখবেনই। বাড়িতেও একটা ছোট পিগি ব্যাঙ্ক রাখুন হাতের কাছে। বাজারফেরত টাকা, বাড়িতে কোনও কিছুর জন্য টাকা মেটাতে হলে তার ব্যালান্স ওই পিগি ব্যাঙ্কে ভরতে থাকুন। ঠিক সময়ে কাজে লাগবে।
• ধারে জিনিস কেনা কমাতে হবে। প্রয়োজন না হলে সংসারের পক্ষে বাড়তি কিছু কিনবেন না। এতে সংসারের বাজেট ছাপিয়ে যায়। বরং কিছু কেনার পরিকল্পনা করলে আগে কয়েক মাস ধরে টাকা জমান, তার পরে সেই জিনিসটি কিনুন।
• সর্বোপরি খরচ কমানোর চেয়েও আয় বাড়ানো প্রয়োজন। তাই ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট করতে পারেন।
• রিমাইন্ডার খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাসের মাঝে হাতে কত টাকা পড়ে আছে, হিসেব করে তার একটা রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন মোবাইলে। তা হলে খরচ করার আগেই ভাবতে বাধ্য হবেন।
সবচেয়ে বড় কথা হল, সাধ্যের মধ্যে সাধ বেঁধে রাখাই ভাল। বড় ফ্ল্যাট, মডিউলার কিচেন, সুন্দর গাড়ি বা বড় ফ্রিজ, এসি সকলেরই ভাল লাগে। কিন্তু কত দূর পর্যন্ত কেনার ক্ষমতা আছে, সেটা আগে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। সকলের আছে বলেই নিজের লাগবে, না কি সত্যিই আপনার সংসারে জিনিসটার প্রয়োজন, সেটা আগে বিচার করুন।