কাজে লাগুক বা না-লাগুক, বাঙালির রান্নাঘরে সরষের তেল আর নারকেল তেলের আসন পাকা। রান্নার পাশাপাশি শরীর আর চুলের পরিচর্যার জন্য এই দুটি তেলের উপযোগিতা সর্বজনবিদিত। তবে আরও কয়েকটি প্রয়োজনীয় তেল বাড়িতে সব সময় রেখে দেওয়া উচিত। পোশাকি ভাষায় যাকে বলা হয় এসেনশিয়াল অয়েল। ফুল, ফল, বীজ, গাছের শিকড় থেকে সরাসরি নিষ্কাশিত এই তেলগুলিকে তাদের বিশিষ্ট সুগন্ধ দিয়ে চিনে নেওয়া যায়। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও এসেনশিয়াল অয়েলের বহুমুখী গুণ অনস্বীকার্য। জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু উপযোগী তেলের কথা।
মাইগ্রেনের ব্যথায়
স্নায়ুতন্ত্রের আরামের জন্য ল্যাভেন্ডারের তেল বেশ উপযোগী। এর সুগন্ধে মাইগ্রেনজনিত ব্যথা, মাথাধরার অনেকটাই উপশম হয়। সেই কারণে মাসাজের জন্য এই তেল অনেকেরই পছন্দের। এ ছাড়াও কাটা, পোড়া, খুশকি, পোকার কামড়, এই সবেও ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে ল্যাভেন্ডার।
পোকামাকড় দূরে রাখতে
টি-ট্রি তেলের উপকারিতা বহুমুখী। অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল। ব্যাকটিরিয়া-পোকামাকড় মারার জন্য জলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। এ ছাড়া সাধারণ কাটা, পোড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশনেও এই তেলের পরিপূরক নেই।
অরিগ্যানো এসেনশিয়াল অয়েলও অ্যান্টিসেপটিক। তাই শরীরে এই তেল মাখা যেতে পারে। তবে জলে গুলে এই তেল ব্যবহার করা শ্রেয়। জল না মেশানো তেল বিছানার চারপাশে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে পোকামাকড় দূরে থাকবে।
মন ভাল রাখতে
ইউক্যালিপটাসের গন্ধ খুব তীব্র। সর্দি-কাশি-সাইনাসের সমস্যা দূর করতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার। পেশির ব্যথা দূর করতেও এই তেল ব্যবহার করা হয়। মূত্রথলির সংক্রমণজনিত সমস্যায়ও এটি ভাল কাজ দেয়। কোনও সমস্যা না থাকলেও শুধু মাত্র এই তেলের ঘ্রাণ নিলেও মন তরতাজা থাকে।
ঠান্ডার উপশমে
অন্য তেলের গন্ধ যদি মেয়েলি ঠেকে, তবে পুরুষের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে স্যান্ডলউড অয়েল। দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস, বিরক্তির মতো আধুনিক জীবনের অবিচ্ছিন্ন ব্যাধিগুলিকে দূরে রাখতে ঘরে চন্দনের গন্ধ ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে ঘর ও আপনার মন, দুই ভাল থাকবে। এ ছাড়া শুষ্ক ত্বকের জন্য চন্দন খুব উপযোগী। ঠান্ডা-সর্দির উপশমেও এই তেল কাজ দেয়।
শ্বাসকষ্টের সমস্যায়
শ্বাসকষ্ট ও ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স তেল। অবসাদ, ক্লান্তি দূর করতেও এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ডিওডোরেন্ট হিসেবে
বেকিং সোডা আর জলের মিশ্রণের মধ্যে এক ফোঁটা গ্রেপফ্রুট এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এর পর তুলো দিয়ে আর্মপিটে সুগন্ধি হিসেবে লাগান। খেয়াল রাখবেন, এটা লাগানোর ১২-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রোদ লাগাবেন না।
প্রথম বার এসেনশিয়াল অয়েল কেনার সময়ে কোন কোন জিনিসের উপর নজর রাখবেন,
• বড় কোনও দোকান থেকে ভাল মানের তেল কেনা উচিত। না হলে বাজারে এসেনশিয়াল অয়েলের নামে নিম্নমানের তেলও পাওয়া যায়, যার গন্ধ সিন্থেটিক।
• এসেনশিয়াল অয়েলের দামের হেরফের হয়, কাঁচা মালের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। তাই অন্য বাজারি তেলের তুলনায় এর দাম অনেকটাই বেশি।
• এসেনশিয়াল অয়েল ঠান্ডা, অন্ধকার স্থানে রাখা শ্রেয়। এই তেলের শিশির ঢাকনা যেন কখনও রবারের গ্লাস ড্রপার না হয়। তা তেলের গুণমান নষ্ট করে দেবে।
• কেনার আগে তেলের বিজ্ঞানসম্মত নাম অবশ্যই দেখে নেবেন। কারণ, একই নামের তেল অনেক সময় ভিন্ন ভেষজ থেকে তৈরি হয়। তাদের গুণ আর গন্ধও আলাদা প্রকৃতির হয়।