Health News

ডায়রিয়া থেকে দূরে

বাচ্চার ডায়রিয়া হলে অহেতুক ভয় পাবেন না। বরং বাড়িতে বাচ্চার যত্ন নিতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে দিকে নজর রাখুনবাচ্চার ডায়রিয়া হলে অহেতুক ভয় পাবেন না। বরং বাড়িতে বাচ্চার যত্ন নিতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে দিকে নজর রাখুন

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ২১:৪০
Share:

বাচ্চাদের একটু শরীর খারাপ হলেই মা-বাবা বিচলিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে সন্তান যদি ঘন ঘন জলের মতো মলত্যাগ করে, তখন চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মোটামুটি ১ থেকে ৮ বছর বয়সি বাচ্চাদের বার বার মলত্যাগ করা মানেই এই নয় যে, তার ডায়রিয়া হয়েছে। বাচ্চারা দিনে দু’-তিন বার মলত্যাগ করতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সংখ্যাটাই যদি বেড়ে দিনে আট-দশ বার হয়, তখন প্রথমে বাচ্চার মল পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে, তাতে স্টুল ম্যাটার আছে কি না। স্টুলে যদি জলের পরিমাণ বেশি থাকে আর মলের রং (অনেক সময় সবজেটে হয়) যদি পাল্টাতে থাকে, তখন বুঝতে হবে যে ডায়রিয়া হতে পারে। আর দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ওষুধে যেমন কাজ হবে, বাড়িতেও বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। বাচ্চাকে কী খাবার খাওয়াবেন, কী বাদ দেবেন, সেগুলো মাথায় রাখবেন।

Advertisement

ডায়রিয়া কেন হয়?

Advertisement

বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে বাতাসে ভাইরাস বেড়ে যায়, তখনও ভাইরাল ডায়রিয়া হতে পারে। আবার কোনও খাবার থেকে ইনফেকশন হলেও ডায়রিয়া হয়। আর অনেক সময় ব্যাখ্যা করা যায় না, এমন অনেক কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। যেমন গরমে হিট ডায়রিয়া। কারণ যা-ই হোক, সমস্যা হবে মলত্যাগে। ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বর বা বমি হলে বুঝতে হবে যে, পেটে ইনফেকশন হয়েছে।

ঘরোয়া উপশম

• চিঁড়ে সিদ্ধ করে খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি কাজে দেয়। বাচ্চা যদি সলিড খাবার খেতে না পারে, সে ক্ষেত্রে চিঁড়ে সিদ্ধ জলও নুন, চিনি দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

• ভাতও খুব ভাল বাইন্ডিং এজেন্ট। তাই নুন, লেবুর রস ও চিনি দিয়ে ভাত চটকে মেখে সেই ক্বাথটা বাচ্চাকে খাওয়ালে উপকার পাবেন।

• ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ এই অসুখে যেহেতু শরীর থেকে অনেক পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়, তাই ডিহাইড্রেশন শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। বাড়িতে বানানো নুন-চিনির জল বা ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে।

• ডায়রিয়ায় প্রোবায়োটিক্‌স খুব ভাল কাজে দেয়। তাই টক দই দেওয়া যেতে পারে। কারণ এতে ল্যাক্টোব্যাসিলি নামক ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইন ট্র্যাকের খারাপ ব্যাকটেরিয়াদের সরিয়ে নিজেরা জায়গা করে নেয়। তাই ডায়রিয়া হলে দইয়ের ঘোল দিতে পারেন। তবে ডেয়ারি অ্যালার্জি থাকলে দই না দেওয়াই ভাল।

• অনেক বাচ্চাই ল্যাক্টোস সহ্য করতে পারে না, ফলে তার থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে সবচেয়ে আগে দুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। আর এক বছরের ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ল্যাক্টোস-ফ্রি ফর্মুলা দিন বা ব্রেস্টফিড করান।

• যদি হাসপাতালে ভর্তি করার মতো অবস্থা হয়, তা হলে ভয় পাবেন না। অনেক সময় পেটের ইনফেকশন হওয়ায়, চিকিৎসকেরা বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ড্রিপ চালু করে দেন। ফলে পেটটা একটু বিশ্রাম পায়। এতে দু’-িতন দিনের মধ্যেই বাচ্চা সুস্থ হয়ে ওঠে।

মনে রাখবেন

• বাচ্চাদের ফল, আনাজ খাওয়ানোর আগে বা রান্নার আগে ভাল করে ধুয়ে নেবেন। অন্তত মিনিট দশেক জলে ডুবিয়ে রেখে ঘষে ধুতে হবে।

• ঋতু বদলের সময়ে পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চাদের ফুটিয়ে জল খাওয়ানোই ভাল।

• রাস্তার খাবার, বিশেষত কাটা ফল বা লস্যি, ফলের রস জাতীয় খাবার বাচ্চাদের একদম দেবেন না।

• বাড়িতে দুটো বাচ্চা থাকলে, এক জনের ডায়রিয়া হলে আর এক জনের খাওয়ার বাসন বা খাবার, অসুস্থ বাচ্চার থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। ভাইরাল ডায়রিয়ায় সুস্থ বাচ্চাও আক্রান্ত হতে পারে।

• ডাক্তার না দেখিয়ে বাড়িতে ওষুধ খাওয়াবেন না। আগে এক দিন ঘরোয়া উপায়ে বাচ্চাটিকে সুস্থ করা যায় কি না দেখে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। নিজের সন্তান যে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়েছে, সেটা অন্য বাচ্চাকে দিতে যাবেন না।

• প্রথমেই অ্যান্টি বায়োটিক্‌স দেবেন না। শুরুতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস গ্রুপের ওষুধেই কাজ হয় কি না দেখতে হবে।

• বার বার মলত্যাগ করায় বাচ্চাদের পশ্চাৎদ্বারে স্কিন র‌্যাশ হতে পারে। তাই প্রত্যেক বার পটি করার পরে সেই জায়গা ভাল করে ধুয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম লাগিয়ে দিতে পারেন।

তথ্য সহায়তা: ডা. চয়ন গঙ্গোপাধ্যায়। মডেল: অলিভিয়া এবং ঈশান। মেকআপ: সুবীর মণ্ডল। হেয়ার: সুরজিৎ দাশগুপ্ত। ছবি: আশিস সাহা। লোকেশন: দ্য সনেট, সল্টলেক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement