Bengali

প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ, ইতিহাসের আলোয় ভরা

সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের কাহিনির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। গল্পে যা বলা সহজ, নাটকে তা উপস্থাপন করা সহজ হয়ে ওঠে না।

Advertisement

সৌভিক সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ০৭:৩২
Share:

নাটকের একটি দৃশ্যে অভিনেতারা

সম্প্রতি একাডেমি অব ফাইন আর্টসের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল নান্দীকারের নাটক ‘রাণী কাদম্বিনী’। সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের কাহিনির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। গল্পে যা বলা সহজ, অনেক ক্ষেত্রেই নাটকে তা উপস্থাপন করা সহজ হয়ে ওঠে না। কাহিনির তাৎক্ষণিক দর্শক-মনোরঞ্জনের দায় থাকে না, কিন্তু নাটকের থাকে। একটি কাহিনিকে নাট্যসফল করে তুলতে যে সাবলীল নাট্যবিন্যাসের প্রয়োজন, নাট্যনির্মাণে সেই দক্ষতার উদাহরণ রেখে গেলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।

Advertisement

ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনকে ঘিরে এই নাটক। এই নাটকের পরতে পরতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের সমবয়সি একজন উনিশ শতকীয় নারীর ডাক্তার হয়ে ওঠার কথা। যে সময়ে নারীশিক্ষাকে নারীর বৈধব্যের কারণ বলে ধরা হত, সেই সময়কার একজন নারী কী ভাবে নিজের মনের জোরে ও প্রচেষ্টায় অসংখ্য প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে একজন অসামান্য ডাক্তার হয়ে উঠলেন, এই নাটক সেই কথা বলে। কাদম্বিনীর পাশাপাশি এই নাটক বলে তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা, যাঁর একরোখা জেদের কারণে কাদম্বিনী বিলেতে গিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। এই নাটক তুলে আনে তৎকালীন সমাজচিত্র, ছুঁয়ে যায় চিন্তার অনেক স্তর।

এই নাটকে রাণী কাদম্বিনীর ভূমিকায় সোহিনী সেনগুপ্তর অভিনয় মুগ্ধ করেছে। কাদম্বিনী চরিত্রের নানা সূক্ষ্ম জায়গা, তাঁর মানস জগতের উত্থানপতনকে দক্ষতা ও দাপটের সঙ্গে চিত্রিত করেছেন তিনি। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার এই নাটকের প্রাণ। তাঁর বাচনভঙ্গি ও উপস্থিতি প্রভূত আনন্দদান করেছে। সাহেব ডাক্তার ও অধ্যাপকের চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন সপ্তর্ষি মৌলিক। তাঁর অভিনয়ে সাহেবি মেজাজ ভাল লেগেছে। নাটকের অন্যান্য চরিত্রে নান্দীকারের প্রত্যেকেই যথাযথ ও সাবলীল অভিনয় করেছেন।

Advertisement

এই নাটকে নজর কেড়েছে সোহিনী সেনগুপ্ত ও দেবকুমার পালের কোরিয়োগ্ৰাফি, যা নাটকটিতে হিল্লোল নিয়ে এসেছে বারংবার। অয়ন ঘোষ ও দেবব্রত মাইতির মঞ্চসজ্জা পুরনো কলকাতার ‘অ্যামবিয়েন্স’ রঙ্গমঞ্চে সুষ্ঠু ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। সাধন পাড়ুইয়ের আলোকসম্পাত যথাযথ। মলয় দাসের মেকআপ উল্লেখযোগ্য। ভাল লেগেছে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ও ময়ূখ-মৈনাক সৃজিত আবহসঙ্গীত।

নির্দেশনা দিয়েছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। তিনি নাটকটিকে যে ভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তা অভিবাদনযোগ্য। নাটকটির খুঁটিনাটির প্রতি তাঁর মনোযোগ ভাল লেগেছে। উপস্থাপনার একটি বিশেষত্ব হল, এখানে ব্যবহৃত হয়েছে অডিয়ো-ভিসুয়াল মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে কাদম্বিনী সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে। নাটকে অন্য মাত্রা যোগ করেছে তা। তবে এই প্রযোজনাটিকে আমরা ডকুমেন্টারি থিয়েটারের পর্যায়ভুক্ত করতে পারব কি না, সে-কথা তাত্ত্বিকেরা বলতে পারবেন।

প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ‘রাণী কাদম্বিনী’ নাটকটি দর্শককে নিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়, যেখানে শতাধিক বছর আগের একজন বাঙালি নারী তাঁর অদম্য জেদ ও মেধার জোরে একটি পুরুষশাসিত গোঁড়া সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। এই ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই, যা জানা উচিত সকলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement