Art Exhibition

সৃষ্টি যখন সত্তার স্বরূপ

পারিবারিক দায়দায়িত্বের কারণে তথাকথিত শিল্পশিক্ষার সুযোগ না পেয়ে, আজীবন হাইকোর্টের দফতরে কর্মরত থেকেও, শুধু অদম্য ইচ্ছা ও ভালবাসার জোরেই ছবি এঁকেছেন ও আজও এঁকে চলেছেন মতিলাল চক্রবর্তী।

Advertisement

সোহিনী ধর

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ০৯:০৫
Share:

সারল্য: শিল্পী মতিলাল চক্রবর্তীর প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম। —ফাইল চিত্র।

মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই সৃষ্টিশীল। পিকাসো বলে গিয়েছেন, ‘এভরি চাইল্ড ইজ় অ্যান আর্টিস্ট’। সেই বিখ্যাত প্রবাদেরই প্রতিফলন হয়তো দেখা গেল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে সদ্য সমাপ্ত নবতিপর শিল্পী মতিলাল চক্রবর্তীর একক প্রদর্শনীতে। তথাকথিত কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই শিল্পী তাঁর জীবনের বাছাই করা বেশ কিছু ছবির ডালি নিয়ে সাজিয়েছিলেন প্রদর্শনীটি। পারিবারিক দায়দায়িত্বের কারণে তথাকথিত শিল্পশিক্ষার সুযোগ না পেয়ে, আজীবন হাইকোর্টের দফতরে কর্মরত থেকেও, শুধু অদম্য ইচ্ছা ও ভালবাসার জোরেই ছবি এঁকেছেন ও আজও এঁকে চলেছেন।

Advertisement

ইছাপুর নিবাসী মতিলাল চক্রবর্তী মূলত প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাঁর কর্মজীবনে ইছাপুর থেকে কলকাতায় প্রত্যহ যাতায়াতের সময়ে চারিদিকের শস্যশ্যামলা প্রকৃতি তাঁর শিল্পীমনকে সহজেই নাড়া দিয়েছে৷ ফলত বিস্তীর্ণ ধানের খেত, তালখেজুরের বাহার, আকাশে মেঘের ঘনঘটা অথবা অস্তমিত সূর্যের জাদুকরী লীলা তাঁর ছবির মূল বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। সযত্ন ধৈর্যশীলতায় সেই সব ভাললাগাকে নিয়েই সৃষ্টি করেছেন তাঁর ছবিগুলি। মাধ্যমের দিক থেকে জলরং, টেম্পারা ও ওয়াশ— তাঁর এই ভাবনাগুলিকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

তবে দু’একটি ছবির ক্ষেত্রে তেলরঙের ব্যবহারও লক্ষ করা যায়। এ পর্যন্ত এই শিল্পী তাঁর জীবনে বহু বিশিষ্ট শিল্পীর সান্নিধ্যে এসে, ছবির বহু প্রকরণগত বিদ্যা আহরণে সক্ষম হয়েছেন। যেমন বিগত দিনের শিল্পী মুকুল দে, ধীরেনকৃষ্ণ দেববর্মণ, নীরদ মজুমদার, মৃণালকান্তি দাস বা রামলাল ধর। তাঁদের কাছ থেকে তিনি বহু সময়ে নানা ভাবেই প্রশিক্ষিত ও উৎসাহিত হয়েছেন। ফলত ছবির রং, রেখা, রূপ, গঠন ও উপস্থাপন সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি বেশ স্পষ্ট। এ ছাড়াও প্রাথমিক জীবনে তিনি বিশিষ্ট সব নাট্যকার ও ব্যক্তিত্ব, যেমন রাইচাঁদ বড়াল, উৎপল দত্ত, তাপস সেন, সমরেশ বসু প্রমুখের সান্নিধ্যে এসে, স্টেজ সাজানো ও ডিজ়াইন বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ফলত সৃষ্টির বহুবিধ রূপের মধ্য দিয়ে, তিনি তাঁর অদম্য ইচ্ছাকে সর্বদা প্রতিপালন করে গিয়েছেন।

Advertisement

মতিলাল চক্রবর্তী তাঁর ছবির মধ্যে এক শান্তশ্রী পল্লিবাংলার আমেজ দর্শককে উপহার দিয়েছেন। হলুদ, সবুজ, নীলের একাধিক বিন্যাসে তাঁর ল্যান্ডস্কেপগুলি হয়ে উঠেছে সুদৃশ্য। আদিগন্ত ব্যাপ্তির ছোঁয়ায়, দর্শকের মন পায় বিস্তারের এক সুকোমল প্রতিফলন— যা শহুরে মানুষের কাছে ক্রমশই দুর্লভ হয়ে উঠছে। ল্যান্ডস্কেপ ছাড়াও তাঁর স্টিল লাইফ, ফয়েলেজ স্টাডি, পোর্ট্রেট ইত্যাদির মধ্যে এক যত্নশীল, নিষ্ঠাবান ও সৃষ্টিশীল মানুষের পরিচয় আমরা পাই। পাশ্চাত্য আধুনিকতায় নেইভ পেন্টিং বা সরল সাদাসিধে যে ধারাটি রয়েছে, সেই ধারারই অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাঁর কাজগুলি। সারল্যের মধ্য দিয়েই শিল্পীর শৈলীর সার্থকতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement