বৃষ্টির জলছবি, ছবি: শাটারস্টক
বৃষ্টি ভালবাসে না এমন মানুষ বোধ হয় নেই। তবে শিল্পীর কাছে সেই ভালবাসা হয়তো খানিকটা বেশিই। অনেকই ভাবেন, শহর ভিজলেই শিল্পীরা যেন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন! এ কথা সত্যি না মিথ্যে, তা নিয়ে তর্কে না যাওয়াই ভাল। তবে এমন বহু শিল্পী রয়েছেন, যাঁরা তুলির আঁচড়ে বৃষ্টির বিভিন্ন রঙিন মুহুর্তকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। তৈরি করেছেন ‘অমর চিত্রকথার’। কখনও তা ফুটে উঠছে শৈশবের কাগজের নৌকা হয়ে, কখনও বা বানভাসি স্মৃতিকথায়। বর্ষার মরশুমে এমনই কয়েকজন ভারতীয় শিল্পীর আঁকা ছবি নিয়ে হাজির হলাম আমরা, যেগুলির প্রেক্ষাপট কোনও বৃষ্টিভেজা দিন।
১. চন্দ্রবাবু – ‘ভারতীয় পথঘাট’
শিল্পী চন্দ্রবাবু বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। ছোটবেলায় বৃষ্টি হলে, তাঁর বাড়িতে জল জমে যেত। বর্ষায় তাঁর পরিবারের অর্ধেক সময় কেটে যেত সেই জল ঘর থেকে বের করতে। বাড়ি ভর্তি সেই জল দেখে ছোট্ট চন্দ্র যেন নিজেদের বাড়িটাকেই নৌকা ভেবে নিয়েছিলেন। বৃষ্টিকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন অপার আনন্দ। যে ছবিগুলি তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেত তাঁর শিশুবেলায়।
চন্দ্রবাবু – ‘ভারতীয় পথঘাট’
২. আনন্দ দাস – ‘কলকাতার রাস্তায় হাতে টানা রিক্সা’
শিল্পী আনন্দ দাস কলকাতার বাসিন্দা। একটা সময় তাঁর বাড়ির পাশে রিক্সা তৈরির কারখানা ছিল। বড় হয়ে ওঠার দিনগুলিতে রিক্সাওয়ালাদের জীবনযাপন খুব কাছ থেকে দেখেছেন আনন্দ। সেই সময় বর্ষা হলে কলকাতার রাস্তাঘাট ভয়ঙ্কর চেহারা নিত; কোথাও খানা-খন্দ, কোথাও বা হাঁটু-জল। সেই বর্ষাকে কার্যত উপেক্ষা করেই চলত খেটে খাওয়া মানুষের রোজনামচা। তাঁর এই ছবি সেই বক্তব্যই যেন তুলে ধরেছে।
আনন্দ দাস – ‘কলকাতার রাস্তায় হাতে টানা রিক্সা’
৩. বিজয় বিশবাল – ‘রেল স্টেশনের ব্যস্ততা’
নাগপুরের বিজয় বিশবাল পেশায় এক জন রেলকর্মী। তাঁর প্রশংসা শোনা গিয়েছে ‘মন কি বাত’-এও। বিজয়ের কাছে বৃষ্টি মানেই ভিজে যাওয়া প্ল্যাটফর্ম, অপেক্ষারত ট্রেন, মেঘলা আকাশ। তাঁর ছবিতেও ফুটে উঠেছে সেই কথাই।
বিজয় বিশবাল – ‘রেল স্টেশনের ব্যস্ততা’
৪. গণেশ পাণ্ডা – ‘বৃষ্টি ভেজা শহর’
মুম্বইয়ের বাসিন্দা গণেশের কাছে জল মানে জীবন। সেই কারণেই বর্ষার প্রতি তাঁর প্রেম বার বার ধরা পড়েছে চিত্রপটে। প্রতি বছর বর্ষার সময় চারিদিক সবুজ হয়ে থাকে। ভারতের পল্লী প্রকৃতির শোভা এই সময় বহুগুণে বেড়ে যায়। সেই রূপ মুগ্ধ করে প্রত্যেককে। সেই আনন্দের ছবিই তিনি ফুটিয়ে তোলেন ক্যানভাসে।
গণেশ পাণ্ডা – ‘বৃষ্টি ভেজা শহর’
৫. অভিজিৎ রায় – ‘শৈশব’
বর্ষা, ছেলেবেলা, আবেগ আর স্মৃতির ভিড়, এই চারের মিশেলে শিল্পী অভিজিতের ছবি যেন কথা বলে। তাঁর ছবিতে বার বার ফুটে উঠেছে শৈশবের কথা। বৃষ্টির দিন তাঁর কাছে সত্যিই যেন শৈশবের জলছবি।
অভিজিৎ রায় – ‘শৈশব’
৬. সোমনাথ বোথে – ‘বৃষ্টি ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য’
শিল্পী সোমনাথ পুণের বাসিন্দা। তাঁর বাবা কৃষক। তাঁর আঁকা এই ছবির মূল বিষয় বর্ষা ভেজা পুণের কোনও ঐতিহাসিক স্থান। আধুনিক রঙের ছোঁয়ায় তিনি এই স্থাপত্যগুলিকে দর্শকদের সামনে অন্য রূপে তুলে ধরেন।
সোমনাথ বোথে – ‘বৃষ্টি ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য’
৭. নারায়ণ কুম্বার — ‘বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি’
শিল্পী নারায়ণ কুম্বার বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। কলেজের সময়ে বৃষ্টির কারণে বহুবার তাঁকে জেলায় থেকে যেতে হয়েছে। সেই সময়েই গ্রাম্য এলাকার বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিকে প্রত্যক্ষ করেছেন শিল্পী। যা ফুটে উঠেছে তাঁর ক্যানভাসে।
নারায়ণ কুম্বার — ‘বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি’
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং ‘আষাঢ়ের গল্প’ ফিচারের একটি অংশ।