রবিবার কালনা হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।
রবিবারেও অচলাবস্থা কাটল না কালনা মহকুমা হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগে। অবস্থা সামাল দিতে অন্য হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নিয়ে আসার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক না থাকায় শনিবার এই হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগ নোটিশ দিয়ে বন্ধ ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক না এলে মঙ্গলবার, পরবর্তী বহির্বিভাগের দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে।
কালনার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “মহকুমা হাসপাতালে শিশু ও মেডিসিন বিভাগে সমস্যা রয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাসপাতালের অন্য বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিত্সকরা মেডিসিন বিভাগে চিকিত্সায় সাহায্য করবেন। চেষ্টা করছে দ্রুত সমস্যা মেটানোর।”
শনিবার কালনা ১ ব্লকের বিডিও অফিসে একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুন্ডু। কালনা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল সেখানে দুই জনপ্রতিনিধিকে কালনা হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। সভার শেষে স্বপনবাবু বলেন, “সুপারের থেকে বিস্তারিত রির্পোট পাওয়ার পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিশু ও মেডিসিন বিভাগের যে দুই চিকিত্সককে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তাঁদের সাময়িকভাবে কালনা হাসপাতালে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছে। সুপার জানান, ওই দুই চিকিত্সক যদি কালনা হাসপাতালে পুনরায় যোগ দেন, তাহলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বুধবার হয়ে যেতে পারে। কারণ, সোমবার তাঁদের কলকাতায় স্বাস্থ্য ভবনে দেখা করতে হবে। আপাতত, পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় একজন শিশু চিকিত্সককে হাসপাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান অভিরূপবাবু।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১১ জুন। সে দিন আগাম খবর না দিয়ে আচমকা ছুটি নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে বসে থাকায় এক শিশু বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে নিখোঁজ ডায়েরি করেন বর্ধমানের কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার। শেখ সওকত আলি নামে ওই চিকিত্সকের বাড়ি হুগলির গুড়াপে খেজুরডিহি এলাকায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বুধবার ওই শিশু চিকিত্সকের পুরো ছুটি ও বৃহস্পতিবার অর্ধেক ছুটি ছিল। উনি সুপারকে এসএমএসে জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সারা দিন তিনি কাজে যোগ দেননি, যোগাযোগও করেননি। শনিবার বিকেলে সেই চিকিত্সক থানায় দেখা করেন। পুলিশকে ওই শিশু চিকিত্সক জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন। সেই কারণেই কাজে যোগ দেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন না ধরা প্রসঙ্গে ওই শিশু চিকিত্সক পুলিশকে জানান, তাঁর ফোন সরকারি নয়। তাই হাসপাতালের ফোন ধরতে তিনি বাধ্য নন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ও রবিবার ওই চিকিত্সক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। রবিবার ওই শিশু চিকিত্সকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডু। বিধায়ক অসুস্থ শিশুদের জন্য মানবিকতার খাতিরে তাঁকে দ্রুত কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেন।
এ দিকে চিকিত্সক সঙ্কটে শনিবার ও রবিবার শিশু ও মেডিসিন বিভাগে চিকিত্সা প্রায় লাটে ওঠে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিভাগে দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ছিলেন। তার মধ্যে একজন চিকিত্সক স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী অন্য হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার সুপার নিজে শিশুবিভাগে চিকিত্সা করেন। রবিবারও তিনি ওই বিভাগে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটের অসুখ নিয়ে আসা শিশুদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির সামান্য অবনতির ঘটনা ঘটলেই তাদের বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”