হাল ফিরছে মেডিক্যালের হতশ্রী পুকুরের

এতদিন যে কাজে কোনও গতি ছিল না বললেই চলে, হঠাৎই তাতে জোয়ার এসেছে। দিনরাত এক করে চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সৌন্দর্যায়নের কাজ। দু’-চার জনের বদলে কাজ করছেন ৩৫- ৪০ জন। মাঝেমধ্যে কাজ দেখতে আসছেন মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)-এর চেয়ারম্যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে জোরকদমে (বাঁ দিকে)। আগের অপরিচ্ছন্ন পুকুর (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

এতদিন যে কাজে কোনও গতি ছিল না বললেই চলে, হঠাৎই তাতে জোয়ার এসেছে। দিনরাত এক করে চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সৌন্দর্যায়নের কাজ। দু’-চার জনের বদলে কাজ করছেন ৩৫- ৪০ জন। মাঝেমধ্যে কাজ দেখতে আসছেন মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)-এর চেয়ারম্যান।

Advertisement

আগামী বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায় সৌন্দর্যায়নের ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। তাই দ্রুত কাজ এগোনো হচ্ছে। এত দিন কাজ এগোয়নি কেন? সদুত্তর এড়িয়ে এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির জবাব, “কাজটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে!” এমকেডিএ’রই অন্য এক কর্তা অবশ্য মানছেন, “মাঝে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছিল বলে নালিশ এসেছিল। তখন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।”

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছেই রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরের একদিকে হাসপাতালের নতুন ভবন। সেখানে বেশ কিছু ওয়ার্ড ও ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। আর জরুরি বিভাগের পাশে রয়েছে বহির্বিভাগ। অদূরে হাসপাতাল সুপারের দফতর। তার পাশে এত গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগ থাকা সত্ত্বেও পুকুরটি ছিল অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন। চারপাশে ঝোপঝাড় আর জমা জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াত। হতশ্রী এই পুকুরের দৌলতে নষ্ট হত হাসপাতালের পরিবেশ।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালের এই চত্বরের সৌন্দর্যায়নে উদ্যোগী হয় এমকেডিএ। ২০১২ সালে ঠিক হয়, পর্ষদের উদ্যোগে এলাকা সাজিয়ে তোলা হবে। সেই মতো ২০১৩ সালে কাজ শুরু হয়। গোড়ায় পুকুরের পাশে পাঁচিল হয়। সেখানে রেলিং লাগানো হয়। সে জন্য গাছের ডাল কাটতে হয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পুকুরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। দিন কয়েক আগেও তা ফের পরিষ্কার করা হয়। পুকুরের পাড় বাঁধানো হয়েছে। পাশে টালি বিছানো হয়েছে। বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকবে আলো এবং ঝর্নাও। মৃগেনবাবুর কথায়, “এলাকার পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই কাজ হচ্ছে। পুকুরের পাশে বসার ব্যবস্থা থাকছে। রোগীর পরিজনেরা এখানে এসে বসতে পারবেন।” পুকুরের পাশে যে উদ্যান হবে, সেখানে দু’টি মূর্তিও থাকবে। একটি মাদার টেরিজার, অন্যটি বিধানচন্দ্র রায়ের।

কিন্তু, হঠাৎ রাতদিন এক করে কাজ করতে হচ্ছে কেন? জানা গিয়েছে, এই সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এখনই হওয়ার কথা ছিল না। পুজোর পরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগামী বৃহস্পতিবার সাংসদ সন্ধ্যা রায় মেদিনীপুরে আসছেন জেনে এমকেডিএ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, সন্ধ্যাদেবীর হাত দিয়েই প্রকল্পের উদ্বোধন করানো হবে। গত সপ্তাহে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই জোরকদমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতদিন যেখানে দু’-চারজন, কোনও দিন পাঁচ-ছ’জন মিলে কাজ করতেন, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সেখানেই ৩৫-৪০ জনকে কাজে লাগানো হয়। মূর্তি তৈরির বরাত পাওয়া মৃৎশিল্পীকেও এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। অল্প সময়ে পুরো কাজ শেষ করা যে কঠিন, তা বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় এমকেডিএ-র চেয়ারম্যানের। সম্ভবত তাই যাতায়াতের পথে সময় পেলেই প্রকল্প এলাকায় ঢুঁ মারছেন মৃগেনবাবু। দেখে নিচ্ছেন, কাজের হালহকিকত। সোমবার দুপুরেও কাজ দেখতে এসেছিলেন তিনি। মৃগেনবাবুর আশ্বাস, “সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প এলাকার দেখভালের জন্য কর্মী থাকবেন। রাতেও কর্মী রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।” আর পুকুরের জল? এমকেডিএ’র চেয়ারম্যান বলছেন, “জলও নিয়মিত পরিষ্কার করা হবে। আমরা পুকুরে মাছ ছাড়ারও ব্যবস্থা করছি!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement