শিশু উদ্ধারে গোয়েন্দা সাহায্য হাসপাতালের

তিন দিন পরেও হদিশ মিলল না পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যাওয়া সদ্যোজাতের। ওই শিশুকে উদ্ধার করার দাবি জানাতে আড়শার কালীপুর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় শখানেক মানুষ হাসপাতালে এসে বিক্ষোভ দেখালেন। সেই চাপে পড়ে শেষে শিশুটিকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ হলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩২
Share:

ভারপ্রাপ্ত সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রসূতির গ্রামের লোকজনের।—নিজস্ব চিত্র।

তিন দিন পরেও হদিশ মিলল না পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যাওয়া সদ্যোজাতের। ওই শিশুকে উদ্ধার করার দাবি জানাতে আড়শার কালীপুর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় শখানেক মানুষ হাসপাতালে এসে বিক্ষোভ দেখালেন। সেই চাপে পড়ে শেষে শিশুটিকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ হলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।”

Advertisement

গত শুক্রবার সকালে হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আড়শার কালীপুর গ্রামের মেনকা মুর্মুর ওই সদ্যোজাত ছেলে। সে দিনই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে শনিবার কালীপুর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকশো মানুষ হাসপাতালে এসে ক্ষোভ দেখিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের দাবি জানান। ওই এলাকার বাসিন্দা হাঁড়িরাম সোরেন, ধীরেন কিস্কু, পুলকেশ কুমার প্রমুখের কথায়, “জেলার প্রায় সব এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন। হাসপাতালের দরজায় কড়া নিরাপত্তা দেখি। এই নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর থেকে শিশু বিভাগ থেকে একটি বাচ্চা চুরি হয়ে যায় কী করে?” তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে। যাঁরা শিশু ওয়ার্ডে ওই সময় কাজ করছিলেন, তাঁদের সাসপেন্ড করতে হবে। হাঁড়িরামের কথায়, “আমরা পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে পুলিশকেও জানিয়েছি। মঙ্গলবার পর্যন্ত কী হয় দেখি, না হলে আমরা হাসপাতালে ধর্নায় বসব।”

মেনকাদেবী বুধবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে পুরুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার সকালে মেনকাদেবীর একটি পুত্রসন্তান হয়। চিকিত্‌সকেরা তিন তলায় নবজাত শিশু বিভাগে (নিওনেটাল ওয়ার্ড) শিশুটিকে স্থানান্তরিত করেন। মেনকাদেবী ছিলেন দোতলায় প্রসূতি বিভাগে। নবজাতকের কাছে প্রসূতির দিদি পাণি হাঁসদা ও মুকরু মাঝি নামে তাঁদের এক আত্মীয়া ছিলেন। পাণিদেবী জানান, শিশুটিকে হাসপাতালের শয্যায় শুইয়ে অল্প সময়ের জন্য তিনি ওয়ার্ডের বাইরে যান। শয্যার কাছে তাঁর বোনের শাশুড়ি ছিলেন। ওই বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, এক মহিলা এসে ওই শিশুটিকে নিয়ে যান। চিকিত্‌সার জন্যই বোধহয় হাসপাতালের কর্মী হিসেবে ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে যায় বলে তাঁর মনে হয়েছিল। পরে ফেরত না দিয়ে যাওয়ায় তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে ঘটনাটি আনেন। সেদিন হাসপাতালে তল্লাশি চালিয়েও শিশুটির খোঁজ মেলেনি। হাসপাতালে পুলিশ পিকেটও বসানো হয়।

Advertisement

এই হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত শিশু নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৭ সালে এখান থেকে এক সদ্যোজাত নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই সদ্যোজাতকে ঝাড়খণ্ড থেকে উদ্ধার করে। ২০১০ সালে একই ভাবে বীরভূমের সিউড়ি সদর হাসপাতাল থেকেও এক সদ্যোজাত শিশু সন্তান চুরি হয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তাতেই আসানসোল থেকে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই পুলিশ বা গোয়েন্দাদের উপরই নির্ভর করছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকবলেন, “পুলিশের সাহায্যে অতীতে চুরি হওয়া শিশু উদ্ধার করা হয়। তাই আমরা পুলিশের উপর ভরসা রাখছি।” হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “পুলিশকে গোয়েন্দাদের সাহায্য নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

মানবেন্দ্রবাবু জানান, নিরাপত্তা সংস্থার সুপারভাইজারকে শো-কজ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই সময় ওই বিভাগে সেবিকা-সহ যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলেন তাঁদের কাছেও এই ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের সিসিটিভিগুলি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় মাস। অনেকেই মনে করছেন, এই সিসিটিভিগুলি সচল থাকলে তদন্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলত। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “অবিলম্বে ওই সিসিটিভিগুলিকে মেরামত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি সিসিটিভি লাগানো হবে।” একই সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। জেলা চাইল্ড লাইনের তরফে সুস্মিতা সরকার জানিয়েছেন, তাঁরাও শিশুটির খোঁজ শুরু করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement