ভোর হতেই নার্সিংহোম কিংবা ওষুধের দোকান লাগোয়া ডাক্তারের চেম্বারে লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে দেখা মেলে ডাক্তারের। আবার আর এক দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও সার সার দাঁড়িয়ে রোগীরা। একই অপেক্ষায়। কিন্তু দিন শেষে সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ছবিটা ক্রমশ বদলে যেতে থাকে। বাইরে থেকে আসা চিকিত্সকদের বেশির ভাগই ফিরে যান। তার উপর রাতের হাসপাতালেও মেডিসিন, সার্জারি বা শিশু বিভাগে মেলে না চিকিত্সক। সব মিলিয়ে রাত নামলেই চিকিত্সকের অভাবে ভুগছে কালনা।
কালনা মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া জেলার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। কিন্তু রাতের দিকে হাসপাতালের পরিষেবা একেবারে শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কয়েকদিন আগে কালনা ১ ব্লকের কৃষক উদয়চাঁদ মণ্ডল বুকে ব্যাথা নিয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় কোনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় কার্যত বিনা চিকিত্সায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা খোকন ঘোষের ক্ষোভ, “রাতের দিকে মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া মানেই সময় নষ্ট।” হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, চিকিত্সা পরিষেবা ঠিকঠাক না মেলায় মাঝেমধ্যেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। গত বছর সুপারকে মারধরের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
কালনা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৮০ জন রোগী ভর্তি হন। তিন জন স্থায়ী চিকিত্সক থাকার কথা থাকলেও দু’বছর ধরে রয়েছেন দু’জন। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আরও একজন চিকিত্সককে তুুলে নেওয়ায় মেডিসিন বিভাগের চিকিত্সকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক জনে। টানা কাজের চাপে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়ায় সপ্তাহ দু’য়েক ধরে বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ। তবু দিনের বেলায় কোনওরকমে কাজ চালানো হলেও রাতে হাসপাতাল কার্যত চিকিত্সক শূন্য হয়ে পড়ে বলে রোগীদের অভিযোগ। রাতে রোগী আনলেই ৭০ কিলোমিটার দূরের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা কলকাতায় স্থানান্তর করা হয় বলেও তাঁদের দাবি। কালনার বাসিন্দা অর্পিতা মল্লিক নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আমার ভাইকে রাত ৯টার সময় মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। জানানো হল, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই। ফলে ভাইকে তখনই কলকাতা নিয়ে যেতে হয়।”
শুধু চিকিত্সকের অভাবই নয়, হাসপাতালের অন্যান্য পরিষেবাও বেহাল। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ব্ল্যাড-ব্যাঙ্কে রক্ত থাকলেও, রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কিট নেই। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র কেনার টাকাও নেই তহবিলে। হাসপাতালের অন্যান্য পরিষেবার কাজ চলছে রোগী কল্যাণ তহবিলের টাকায়। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই বলেন, “সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে অন্তত একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের জন্য আবেদন জানিয়ে এসেছি।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষও জানান হাসপাতালের হাল ফেরানোর জন্য মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সুরাহার আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুন্ডুও।