কর্মীর দেখা নেই। বাড়ির লোকেরাই বইছেন রোগী।—নিজস্ব চিত্র
জেলায় এসে একের পর এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অথচ, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের এমারজেন্সি থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়ার লোক মিলছে না!
দক্ষিণবঙ্গের মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অন্যতম ভরসার জায়গা বাঁকুড়া মেডিক্যাল। সেই হাসপাতালের পরিষেবা এখন গ্রুপ-ডি ও সুইপারের অভাবে প্রচণ্ড ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব শুধু রোগীদের উপরেই পড়ছে এমন নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকেও। সমস্যার জেরে নাজেহাল রোগীর আত্মীয় থেকে নার্স, এমনকী স্বাস্থ্য-কর্তারাও।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে রোগী এলে তাঁকে বেডে নিয়ে যাওয়ার লোক পাওয়া যায় না। তাঁদের ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যে সব গ্রুপ ডি কর্মীর উপরে রয়েছে, অধিকাংশ সময়ে তাঁদের খোঁজ করে পাওয়া যায় না। ওয়ার্ড থেকে রোগীকে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া কিংবা শারীরিক পরীক্ষার জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার লোক নেই। চিকিৎসক বা নার্সদের কথা মতো স্টোর্স বা সাব-স্টোর্স থেকে ওষুধ তুলে ওয়ার্ডে নিয়ে আসারও লোক পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, দরকার পড়লে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে চিকিৎসক ডেকে নিয়ে যাওয়া, রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা বা কোনও রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর শবদেহ হাসপাতালের বাইরে বের করে দেওয়ারও কথা এই গ্রুপ ডি কর্মীদের। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের পাওয়া যায় না। এ জন্য যা হ্যাপা তা রোগীর পরিজনদেরই পোহাতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাঁকুড়া মেডিক্যালে পুরুষ গ্রুপ ডি কর্মী ও মহিলা গ্রুপ ডি কর্মী যত সংখ্যায় থাকার কথা, বাস্তবে তার অনেক কম রয়েছে। নব্বুইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর থেকে নতুন করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ হয়নি এই হাসপাতালে। গ্রুপ ডি কর্মীরা শিফটিং ডিউটি করেন। এ দিকে তথ্য বলছে, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ২২টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০০ রোগী ভর্তি থাকে। প্রতিটি শিফটে যে পরিমান গ্রুপ ডি কর্মী মজুত থাকেন তাতে হাসপাতাল চালানো প্রায় অসম্ভব। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের কর্তারাও। পরিস্থিতি এমনই, গ্রুপ ডি কর্মীদের কাজ বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে নার্সদের।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, চতুর্থ শ্রেণির সাধারণ কর্মীদের মতো সাফাই কর্মীরও অভাব রয়েছে এখানে। যে সামান্য কয়েকজন কর্মী রয়েছেন, তাঁরা শিফটিং ডিউটি করেন। কিন্তু কর্মীর অভাবে সাফাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি যে ভাল নয় তা অবশ্য মানছেন হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুু। কর্মী নিয়োগ না হলে এই সমস্যার সমাধান হওয়ার নয় বলেও জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর দাবি, “আমাদের হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবের কথা স্বাস্থ্যভবন জানে। নতুন করে কর্মী নিয়োগ কবে হয় সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছি আমরা।”
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জেলার সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল বাঁকুড়া মেডিক্যালের এই হাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও বর্তমানে জেলা পরিষদের বিরোধী দল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। এমন পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের নীতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। সুব্রতবাবু বলেন, “সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কিছু জনমোহিনী নীতি গ্রহন করছে ঠিকই। কিন্তু নীতি গুলি নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।” তাঁর ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কথা ঘোষণা করছেন। কিন্তু যে সব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি রয়েছে তার পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি মেটানোর দিকে লক্ষ দিচ্ছেন না।