এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতে নেতা, সাংসদ, বিধায়কের আনাগোনা চলছেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আজ বুধবার মানস ভুঁইয়া-সহ কংগ্রেসের ৭ জন বিধায়কের একটি প্রতিনিধি দল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে খোঁজখবর নিতে। ওই দিনই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে আর একটি প্রতিনিধি দল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবে। বৃহস্পতি বার তিনি জলপাইগুড়ি যাবেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু জানান, বুধবার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের মধ্যে মশারি বিলি করার কর্মসূচিতে রাহুলবাবু থাকবেন।
হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো এবং পরিষেবার মান নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা ওয়ার্ডে পানীয় জল পরিষেবা পান না। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস বিধায়করা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি এবং চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে তাঁরা খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রয়োজনে ওই সমস্ত এলাকাতেও যাবেন।
জেলাগুলিতে বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। ৫-৭ দিন ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শেষ পর্যায়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত শতাধিক রোগী মারা গিয়েছেন। শুধু জুলাই মাসেই মারা গিয়েছেন ৮৯ জন। যদিও সরকারি হিসাবে সংখ্যাটা ৭৪ জন।
দলীয় কার্যালয়ে এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকার এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই পরিস্থিতিতে অন্তত ২০ টি ভেন্টিলেটর দরকার। সেই ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি। রক্ত পরীক্ষার কাজে কর্মীর অভাব রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নজরদারি এখনও নেই।” তা ছাড়া অন্যান্য জায়গায় রক্ত পরীক্ষার আর কোনও ব্যবস্থা এখনও চালুই করা যায়নি বলে কড়া সমালোচনা করেন তিনি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা মোহন বসু। দলের তরফে রোগীদের সহায়তা করতে যে শিবির মেডিসিন বিভাগের কাছে খোলা হয়েছে সেখানে তাঁকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।
এ দিন মালবাজার মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন নাগরাকাটার বিধায়ক জোশেফ মুন্ডা। রাজ্য সরকার এনসেফ্যালাইটিস দমনে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন তিনি। এলাকার এনসেফ্যালাইটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা ঘুরপথে জলপাইগুড়ি হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছচ্ছে বলে পরীক্ষা করাতে দেরি হওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাগরাকাটা ব্লকের সরোজিনী ওঁরাও (২৮) নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মালবাজার মহকুমায় ১১ জন এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন। আজ বুধবার জোশেফ মুণ্ডা মানসবাবুর সঙ্গে দেখা করে ডুয়ার্সের বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কথা জানাবেন।
মশা মারতে শহর জুড়ে তেল স্প্রে এবং শুয়োর পালন নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন বালুরঘাট পুরসভা। এ দিন থেকে ওই কাজের জন্য ৫ জন সাফাই কর্মীকে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান চয়নিকা লাহা। পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্রামস্তরে তেমন প্রশাসনিক তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ কালীপদ সরকার জানান, শীঘ্রই পিএইচই-র সঙ্গে বসে এলাকাগুলিতে পানীয় জল সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। সামসির এক ব্যবসায়ী একই রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাসিন্দাদের সচেতন করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লকে ব্লকে প্রচার শুরু করেছেন। চাঁচলের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, মহকুমার প্রতিটি হাসপাতালেই ফিভার ক্লিনিক করা হয়েছে। রোগের উপসর্গ নজরে এলে কী করতে হবে, কী ভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। জমা জল মশার আঁতুড়ঘর বলে স্বাস্থ্য দফতর জানালেও মহকুমার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় দিনের পর দিন জল জমে থাকছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, হাসপাতালে যাতে জল না জমে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য দফতর নয় পঞ্চায়েত-প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।