দু’এক পশলা বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে জল পড়ে জলবন্দি অপারেশন থিয়েটার। জলে দাঁড়িয়েই দু’একদিন অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে চিকিৎসকদের। যে কোনও সময় বিদ্যুৎ লাইনে শটসার্কিট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছিল। এর জেরেই বন্ধ করে দেওয়া হল কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের ওটি। গত ২৮ জুন নোটিস ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওটি বন্ধের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এখন কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে হয় তাঁকে যেতে হচ্ছে ৫০ কিলোমিটার দূরের মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে নতুবা জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে আটটি অস্ত্রোপচার হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, যে কেন মেরামতির বদলে বন্ধ করে দেওয়া হল অপারেশন থিয়েটার? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রায় পনেরো দিন আগে ছাদ দিয়ে জল পড়ার ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নজরে আসে। কিন্তু তার পরেও সমস্যার কথা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে বিশদ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পূর্ত দফতর থেকে অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে টাকা মিললে স্থায়ীভাবে কাজ হবে।
হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশ অধিকারির অভিযোগ, পূর্ত দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরের টানাপড়েনে ওটি মেরামতির কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ওই ওটিতে কাজ করলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সে জন্যই চিকিৎসকরা অপারেশন করবেন না বলে জানিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, পূর্ত দফতরের বাস্তুকাররা ওটি ঘুরে দেখে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। যোগাযোগ করা যায়নি হাসপাতালের সুপার কাশীনাথ পাঁজার সঙ্গে।
সদর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল। ১২০ শয্যার এই হাসপাতালের উপর মেখলিগঞ্জ এলাকার মানুষ তো বটেই জলপাইগুড়ি জেলার হেলা পাকড়ি, জোর পাকড়ির মতো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু বাসিন্দাও নির্ভরশীল। মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে রেডিওলজিস্ট না থাকায় আলট্রাসানোগ্রাফির যন্ত্রপাতি বর্তমানে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও। এই ‘নেই রাজ্যে’ নতুন মাত্রা যোগ করল বৃষ্টির কারণে ওটি বন্ধের সিদ্ধান্ত।