আজ বিশ্ব এডস্‌ দিবস

প্রচারই সার, বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমিত

বছর ঘুরে ফের হাজির বিশ্ব এড্স দিবস। আজ, সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও ঘটা করে দিনটি পালন হবে। সচেতনতায় পদযাত্রা বেরোবে, হবে সভা-ম্যাজিক শো। এডস্‌ সচেতনতায় প্রচার হামেশাই হয়। তা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। এডস্‌ প্রতিরোধে গত অক্টোবরে জেলায় বেশ কয়েকটি এইচআইভি শনাক্তকরণ শিবির হয়। সেখানে মোট ১০ জন নতুন এইচআইভি সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে। সকলেরই বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

বছর ঘুরে ফের হাজির বিশ্ব এড্স দিবস। আজ, সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও ঘটা করে দিনটি পালন হবে। সচেতনতায় পদযাত্রা বেরোবে, হবে সভা-ম্যাজিক শো। এডস্‌ সচেতনতায় প্রচার হামেশাই হয়। তা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। এডস্‌ প্রতিরোধে গত অক্টোবরে জেলায় বেশ কয়েকটি এইচআইভি শনাক্তকরণ শিবির হয়। সেখানে মোট ১০ জন নতুন এইচআইভি সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে। সকলেরই বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “শিবিরে পরীক্ষার পরে যাঁদের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণ মিলেছে, কাউন্সেলিং করে গোপনে তাঁদের চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” সেই সঙ্গে এই স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, “এডস্‌ নিয়ে সর্বত্র সমান সচেতনতা নেই। এ নিয়ে সবস্তরে সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।’’

Advertisement

জেলার মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা সব থেকে বেশি ঘাটাল মহকুমায়। ২০১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৬৫০ জন। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ৯০০, ২০১২ সালে ১২০০, ২০১৩ সালে প্রায় ১৪০০। ২০১৪ সালে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬০০। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ জনই ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দা। দাসপুর-১, দাসপুর-২, ঘাটাল ব্লকে বেশিরভাগ এইচআইভি সংক্রমিত বসবাস করেন।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা জানান, যে সব এলাকার যুবকেরা কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে যান, মাস কয়েক পরে আবার ঘরে ফেরেন, সেই সব এলাকাতেই এইচআইভি সংক্রমিত সংখ্যায় বেশি। অর্থাত্‌ কাজের খোঁজে যাঁরা ঘর ছাড়েন, তাঁদেরই কয়েক জন এইচআইভি-র বাহক হয়ে ঘিরে আসেন। ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ১, দাসপুর ২, ঘাটাল ব্লকের প্রচুর মানুষ যেহেতু ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যান, তাই এই এলাকায় এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “একজন নানা কারণে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারেন। এর মধ্যে যৌনপল্লিতে যাতায়াতও অন্যতম কারণ।” এই জেলায় যে সংখ্যক এইচআইভি সংক্রমিত রয়েছে, তাদের একাংশ আবার কিশোর-কিশোরীও! তাদের বয়স ১৫ বছর বা তারও কম। এটাও জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের চিন্তার বিষয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফের সচেতনতাতেই জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার ওই স্বাস্থ্য-কর্তার কথায়, “নতুন করে এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা এড়াতে সবস্তরে আরও সচেতনতা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামে। সাধারণ মানুষ যত বেশি এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হবেন, ততই সংক্রমণের ঘটনা কমবে।”

Advertisement

এডস্‌ প্রতিরোধে গেল অক্টোবরে জেলায় ১১টি শিবির হয়েছিল। শিবির হয়েছিল দাসপুর-২ ব্লকের জ্যোত্‌কানুরামগড়, নিশ্চিন্তপুর, দাসপুর-১ ব্লকের বাসুদেবপুর, চন্দ্রকোনা ১-এর মহাবালা, ঘাটালের সুলতানপুর প্রভৃতি এলাকায়। এই সব শিবির থেকেই সব মিলিয়ে ১০ জন নতুন এইচআইভি রোগীর সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এমন শিবিরে এক হাজার জনের রক্ত পরীক্ষা করা হলে ৮-১০ জনের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণ মেলে। এ বারও তাই হয়েছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এইচআইভি সংক্রমিতদের চিকিত্‌সার জন্য সরকারি উদ্যোগে সব রকম ব্যবস্থাই রয়েছে। চিকিত্‌সা শুরু হওয়ার ফলে রোগটাও আর ছড়াবে না।”

এইচআইভি সংক্রমিতদের চিহ্নিত করতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৪টি আইসিটিসি (ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং টেস্টিং সেন্টার) রয়েছে। ৪টি ফ্যাসিলেটেড আইটিসিটি রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এআরটি সেন্টার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) রয়েছে। এখানে এইচআইভি সংক্রমিতদের চিকিত্‌সা হয়। জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুরে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এটাও ঠিক, সংখ্যাটা ১,৬০০- র মধ্যে বাঁধা থাকছে না। অনেকে সমাজের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়ে রোগটা আড়ার করার চেষ্টা করেন। করছেনও। ফলে, সংক্রমিতের সংখ্যাটা কিছুটা হলেও বেশি।” তাঁর পরামর্শ, “যৌন রোগ সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। এড্স আক্রান্তদের প্রতি যেন বৈষম্য না- থাকে, সেই দিকে আমাদের সকলকেই নজর রাখতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement