রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পিজি-তে খাতায়কলমে এই প্রথম ‘ফ্রি’ শয্যা চালু হতে চলেছে। শনিবার হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। ১৭৭২ শয্যার মধ্যে ৭০০ শয্যা খাতায়কলমে নিখরচার হবে। পাশাপাশি, কিছু দিনের জন্য পিজির সঙ্গে ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’ (বিআইএন)-কে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয় বৈঠকে।
রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে একমাত্র এসএসকেএমেই ঘোষিত ‘ফ্রি’ বেড ছিল না। তবে রোজ বহু রোগী বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটির সুপারিশ নিয়ে শয্যা ফ্রি করাতে কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিতেন। কর্তৃপক্ষ জানান, ফি মাসে এই সুপারিশের চোটে তাঁদের গড়ে ৭৫০-৮০০ শয্যা ফ্রি করে দিতে হত।
কিন্তু অন্য সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজে যখন খাতায়কলমে ৭০% শয্যা ফ্রি, তখন এসএসকেএমে এত দিন কেন তা ছিল না? অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, অতীতে এসএসকেএমে শুধু মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা হত। তখন ফ্রি বেডের প্রয়োজনীয়তা ততটা বোধ হয়নি। কিন্তু স্নাতক স্তরের পড়াশোনা চালু হওয়ার পড়ে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র নিয়মানুযায়ী ‘ফ্রি টিচিং বেড’ দেখানোর প্রয়োজন হয়। একাধিক বার পরিদর্শনে এমসিআইয়ের পরিদর্শকেরা ফ্রি বেড না পেয়ে আপত্তি তুলেছেন। এ বছর এমসিআই অনুমতি দেওয়া নিয়ে অত্যন্ত কড়াকড়ি দেখানোয় এসএসকেএম আর ঝুঁকি নিতে পারছে না। তাই তাড়াতাড়ি খাতায়কলমে ৭০০ শয্যা নিখরচার করা হচ্ছে।
প্রদীপবাবু জানান, এমসিআই-এর পরিদর্শনে সুবিধের পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধে হবে। প্রথমত, বেড ফ্রি করার সুপারিশ জোগাড় করতে রোগীর বাড়ির লোককে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি বা সংস্থার দোরে দোরে ঘুরতে হত। তাঁরা রেহাই পাবেন। দ্বিতীয়ত, অনেকে ফ্রি শয্যার জন্য হাসপাতালে দালালদের খপ্পরে পড়তেন। তাঁদের অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হত। খাতায় কলমে নিখরচার শয্যা থাকলে দালাল-রাজ অনেকটা রোখা যাবে। তৃতীয়ত, বিপুল এই শয্যা নিখরচার করানোর কাগজপত্র দেখতে গিয়ে হাসপাতালের তিন জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অন্য কোনও প্রশাসনিক কাজে মন দিতে পারতেন না। তাঁরা কিছুটা চাপমুক্ত হবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এত শয্যা নিখরচার করলে স্বাস্থ্য দফতরের উপরে আর্থিক চাপ বাড়বে না? স্বাস্থ্য-শিক্ষা কর্তারা তা উড়িয়ে দিয়ে জানান, এমনিই গড়ে ৮০০ করে শয্যা নিখরচার করতে হত। নতুন করে সরকারের বেশি খরচের প্রশ্ন উঠছে না। বরং গরিব মানুষ উপকৃত হবেন। কারণ, পেয়িং বেডে রোজ ৬০ টাকা ভাড়ার পাশাপাশি সব ওষুধ, পরীক্ষা, অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা গুনতে হয়। ফ্রি বেড মানে সব নিখরচায়। ক’মাস আগে স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছিল, মেডিক্যাল কলেজ তো বটেই, সেই সঙ্গে জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সমস্ত শয্যা ধীরে-ধীরে ফ্রি করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
এ দিন পিজির রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিআইএন-কে পিজির সঙ্গে অন্তত কিছু দিনের জন্য মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়। সেই মিলিত হাসপাতালের মাথায় থাকবেন পিজির অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। এর পিছনেও এমসিআই-এর ভয় রয়েছে বলেই জানান স্বাস্থ্যকর্তারা। এত দিন বিআইএনের ডাক্তারদের পিজির ডাক্তার হিসেবে দেখানো হয়েছে। চলতি বছর পরিদর্শনে এসে তা নিয়ে আপত্তি তোলে এমসিআই। প্রদীপ মিত্রের কথায়, “বিআইএনে ইমার্জেন্সি নেই। আমরা ওদের ইমার্জেন্সি রোগীদের দেখি। তাঁদের ভর্তির জন্য এখানে আলাদা ওয়ার্ড আছে। বিআইএনের ডাক্তাররা পিজিতে এসে রোগী দেখেন। তবুও এমসিআই-এর আপত্তি। এটা না-করে উপায় ছিল না।” আরও ঠিক হয়েছে, পয়লা নভেম্বর থেকে ২৪ ঘণ্টা সাফাই পরিষেবা চালু হবে। পিজি চত্বরে থুতু বা পানের পিক ফেললে, যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করলে শাস্তি চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে।