নিউ ইয়র্কেও ইবোলার থাবা, আক্রান্ত চিকিত্‌সক

ইবোলা-আক্রান্ত গিনি থেকে সদ্যই নিউ ইয়র্কে ফিরেছিলেন চিকিত্‌সক ক্রেগ স্পেন্সার। এ বার তাঁর দেহেই মিলল ইবোলা ভাইরাস। মার্কিন মুলুকে ক্রেগ অবশ্য ইবোলার প্রথম শিকার নন। এর আগেও তিন জন ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যুও হয়। কিন্তু ক্রেগের ঘটনার পর উদ্বেগ যেন বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। কারণ নিউ ইয়র্ক শহরের মতো জনবহুল এলাকায় এই প্রথম কারও ইবোলা ধরা পড়ল। প্রশাসনের আশঙ্কা, এখান থেকে ফি দিন বিশ্বের নানা প্রান্তে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। সে দিক থেকে দেখলে নিউ ইয়র্কে সংক্রমণের হদিস মেলা মানে গোটা দুনিয়ার কাছেই তা অশনি-সঙ্কেত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৮
Share:

ইবোলা-আক্রান্ত গিনি থেকে সদ্যই নিউ ইয়র্কে ফিরেছিলেন চিকিত্‌সক ক্রেগ স্পেন্সার। এ বার তাঁর দেহেই মিলল ইবোলা ভাইরাস। মার্কিন মুলুকে ক্রেগ অবশ্য ইবোলার প্রথম শিকার নন। এর আগেও তিন জন ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যুও হয়। কিন্তু ক্রেগের ঘটনার পর উদ্বেগ যেন বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। কারণ নিউ ইয়র্ক শহরের মতো জনবহুল এলাকায় এই প্রথম কারও ইবোলা ধরা পড়ল। প্রশাসনের আশঙ্কা, এখান থেকে ফি দিন বিশ্বের নানা প্রান্তে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। সে দিক থেকে দেখলে নিউ ইয়র্কে সংক্রমণের হদিস মেলা মানে গোটা দুনিয়ার কাছেই তা অশনি-সঙ্কেত।

Advertisement

ক্রেগ নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তার উপর পেশায় চিকিত্‌সক হওয়ায় রোগের খঁুটিনাটিও জানা ছিল তাঁর। সে কারণেই গিনি থেকে ফিরে আসার পর নিয়মিত নিজের দেহের তাপমাত্রা মাপতেন তিনি। বুধবার পর্যন্ত তা স্বাভাবিকই ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু সে দিন থেকে অস্বাভাবিক ক্লান্ত লাগছিল তাঁর। তখনও বোঝেননি কিছু। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তাপমাত্রা মাপতে গিয়ে ক্রেগ দেখেন, থার্মোমিটারের পারদ ১০৩ ছুঁইছুঁই। পেটের সমস্যাও শুরু হয়েছে। উপসর্গগুলো বড় চেনা ঠেকেছিল তাঁর। আর দেরি করেননি। সোজা চলে যান নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে। তখনই জানা যায়, তাঁর দেহে বাসা বেঁধেছে ইবোলা ভাইরাস। ফলাফল নিয়ে সুনিশ্চিত হতে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হবে ক্রেগকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আপাতত বিশেষ ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তাঁকে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দল তাঁর খেয়াল রাখছেন। রয়েছে উপযুক্ত পরিষেবাও। তবে ক্রেগের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। ডাক্তাররা অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ বিচলিত নন। তাঁদের দাবি, এখন খারাপ থাকলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন ক্রেগ। কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তার কারণ অন্যত্র। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য কিছু তথ্য দ্রুত জানতে চায় প্রশাসন। যেমন রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ক্রেগ ঠিক কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কারা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিল ইত্যাদি। কিন্ত ৮০ লক্ষ মানুষের শহর নিউ ইয়র্কে এই কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে ইতিমধ্যেই খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

সে সূত্রেই তিন জনকে চিহ্নিত করেছে তারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ক্রেগের হবু স্ত্রী ও দুই বন্ধু। তাঁদের সম্পূর্ণ আলাদা রেখে (কোয়ারেনটাইন) নজরদারি চালানো হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে বুধবার রাতে যে ট্যাক্সিতে চেপে ম্যানহাটনে নিজের বাড়ি ফিরেছিলেন ক্রেগ, তার চালককে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন ডাক্তাররা। তাঁদের মতে, সরাসরি সংস্পর্শে না আসায় চালকের ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্রেগের অ্যাপার্টমেন্টও সিল করে দিয়েছে পুলিশ।

কিন্তু তার পরেও চিন্তা থাকছে। কারণ ক্রেগ জানিয়েছেন, বুধবার রাতে ম্যানহাটন থেকে সাবওয়ে করে ব্রুকলিনে যান তিনি। সেখানের একটি খেলার জায়গাতেও সময় কাটান। এখন প্রশ্ন দু’টো। সে সব জায়গায় ঠিক কত জন মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন ক্রেগ এবং তাঁদের কী ভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে? প্রশাসন অবশ্য নাছোড়। কিছুতেই সংক্রমণ ছড়াতে দেওয়া যাবে না। অতএব খড়ের গাদায় ছঁুচ খোঁজার মতো শুরু হয়েছে অনুসন্ধান। সতর্কতার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিলেও প্রশাসন অবশ্য বাসিন্দাদের বার বার জানাচ্ছে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মেয়র বিল দে ব্লাসিও বলেন, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই।...আমাদের ধারণা খুব কম মানুষই ক্রেগের সংস্পর্শে এসেছিলেন।”

কিন্তু তাতেও উদ্বেগ কমছে না। যে এলাকায় ক্রেগের ফ্ল্যাট, তার অনতিদূরেই স্কুল রয়েছে। ক্রেগের পড়শি কিকি হাওয়ার্ডের বয়ানে, “আমার চিন্তা স্কুলের বাচ্চাগুলোকে নিয়ে। ওদের কী হবে।” চিন্তা বেড়েছে ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ সংস্থাটিরও। এই সংস্থার হয়েই গিনিতে ইবোলা আক্রান্তের চিকিত্‌সা করতে গিয়েছিলেন ক্রেগ। সংস্থার তরফে অবশ্য চিকিত্‌সকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মবিধি বলে দেওয়া হয়েছিল। ক্রেগ তা অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেছিলেন বলে খবর। তার পর এই সংক্রমণ আসলে সেই নিয়মবিধিগুলোর কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে যাঁরা এখন ক্রেগের চিকিত্‌সা করছেন, তাঁরা নিজেরা ঠিক কতটা সুরক্ষিত। প্রশাসনের দাবি, সংক্রমণ এড়াতে বিশেষ ধরনের পোশাক পরা, জীবাণুনাশকের ব্যবহার সব কিছুই করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অতএব তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

কিন্তু যে ভাবে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ছে, তা জানার পর কোনও আশ্বাসই যেন যথেষ্ট নয়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক জানিয়েছেন, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে লাগাম না পড়ানো গেলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভয়াবহ রূপ ধরবে ইবোলা। মারা যাবেন বহু মানুষ। আশঙ্কা বাড়িয়েছে আরও একটি তথ্য। আর তা হল চূড়ান্ত সতর্কতা সত্ত্বেও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি-তে প্রথম ইবোলা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। তার বয়স ২। আদতে গিনির বাসিন্দা ওই শিশুর বাবাও (মতান্তরে মা) ইবোলায় মারা যান। তার পরই তাকে মালিতে নিয়ে আসা হয়। দিন দশেকও কাটেনি। তার দেহেও ইবোলার উপসর্গ ধরা পড়েছে। তার চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তার সংস্পর্শে আসা সকলকে আলাদা রেখে চিকিত্‌সার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সব দেখে অনেকেরই দাবি, ইবোলা যে হারে ছড়াচ্ছে তার থেকে ঢের দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণের আতঙ্ক। পরিস্থিতি এমনই যে গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওনের মতো দেশগুলিতে যেতে চাইছেন অনেক চিকিত্‌সকই। তাঁদের ক্রেগের উদাহরণ দিচ্ছে নিউ ইয়র্ক শহর প্রশাসন। গিনিতে যাওয়ার আগে যিনি নিজের ফেসবুক পেজ-এ আবেদন জানিয়েছিলেন, “মানুষের ইতিহাসের অন্যতম বড় বিপর্যয় কাটাতে সাহায্য করুন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement