উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অনেক আগেই আবেদন করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর দীর্ঘ দিন বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি। তবে পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যভবনের মনোভাব পাল্টেছে বলে দাবি করেন হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “সম্প্রতি স্বাস্থ্যভবন থেকে ট্রমা কেয়ার ইউনিট গড়ার জন্য আমাদের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। তা আমরা পাঠিয়েও দিয়েছি। তার ভিত্তিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আমাদের একটি নকশা পাঠাতে বলেছে। পূর্ত দফতরকে দিয়ে সেই নকশা তৈরির কাজও চলছে।”
বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি বলেন, “ঠিক কোথায় ট্রমা কেয়ার ইউনিটটি গড়া হবে, সেই জায়গা নিয়ে একটু সমস্যা আছে। জায়গার সমস্যা মিটে গেলে ট্রমা কেয়ার ইউনিট গড়তে কোনও বাধা থাকবে না।”
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত কাঁড়ার বলেন, “জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। সে কথা স্বাস্থ্যভবনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
উলুবেড়িয়া হাসপাতালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। মুম্বই রোড এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ-সংলগ্ন হওয়ায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পুলিশ এখানেই এনে ভর্তি করায়। কিন্তু পৃথক ট্রমা কেয়ার ইউনিট না থাকায় এই হাসপাতালে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গেই দুর্ঘটনাগ্রস্তদের চিকিৎসা করাতে হয়। অনেক সময়ে দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেশি হলে নিয়মিত রোগীদের অস্ত্রোপচার স্থগিত রেখে সার্জেনদের সে দিকেই মনোনিবেশ করতে হয়। সে কারণে এই হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্বাস্থ্যভবনের কাছে বহু দিন ধরেই আবেদন করে আসছে।
ট্রমা কেয়ার ইউনিট হলে সুবিধা কী হবে?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ইউনিট খোলা হলে হাসপাতালে শুধুমাত্র দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জন্যই থাকবে একটি পৃথক সেল। তাতে থাকবে চিকিৎসকদের একটি দল। সেই দলে অন্তর্ভূক্ত হবেন একজন সার্জেন, একজন অস্থি বিশেষজ্ঞ, একজন অ্যানেস্থেটিস্ট এবং একজন মনোবিদ। পৃথক অপারেশন থিয়েটার থাকবে। এখানে শুধুমাত্র দুর্ঘটনাগ্রস্তদেরই অস্ত্রোপচার করানো হবে। এ ছাড়াও এখানে থাকবে সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি পৃথক দল। থাকবে বিশেষ ধরনের অ্যাম্বুলান্স। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের হাসপাতালে আনার জন্য এই অ্যাম্বুলান্সে থাকবে বিশেষ ধরনের শয্যা। ওয়ার্ডেও থাকবে বিশেষ ধরনের শয্যা।
হাসপাতালের সুপার সুদীপ্তবাবু বলেন, “এই হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিট গড়ার জন্য কী কী লাগবে সব কিছুই প্রস্তাবাকারে পাঠানো হয়েছে। এখন তৈরি হচ্ছে নকশা তৈরির কাজ। স্বাস্থ্য ভবন থেকেই নকশা তৈরি করে পাঠানোর জন্য আমাদের বলা হয়েছে।”
হাওড়ার বুক চিরে গিয়েছে মুম্বই রোড। ঘনবসতিপূর্ণ জেলা হওয়ায় মুম্বই রোডে দুর্ঘটনা লেগেই আছে। এ ছাড়াও শ্যামপুর, আমতা, উদয়নারায়ণপুর প্রভৃতি এলাকায় দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে অটো দুর্ঘটনা। সব রোগীকেই প্রথমে আনা হয় সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক প্রথামিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে ‘রেফার’ করা হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য প্রবীর রায় বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতিতে আমরা এই হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিট গড়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। আমাদের আবেদনে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সাড়া দিয়েছে। আশা করি দ্রুত এখানে ট্রমা কেয়ার ইউনিটটি খোলা হবে।”
• শুধুমাত্র দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জন্যই থাকবে একটি পৃথক সেল। তাতে থাকবে চিকিৎসকদের একটি দল।
• সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি পৃথক দল।
• পৃথক অপারেশন থিয়েটার। সেখানে শুধুমাত্র দুর্ঘটনাগ্রস্তদেরই অস্ত্রোপচার করানো হবে।
• বিশেষ ধরনের অ্যাম্বুলান্স। সেখানে থাকবে বিশেষ ধরনের শয্যা। ওয়ার্ডেও থাকবে বিশেষ শয্যা।