স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য নতুন ভবন তৈরি হতে দেখে আশা জেগেছিল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। হয়তো বা এ বার থেকে আরও ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলবে। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির পরে প্রায় আড়াই বছর কেটে গেলেও আজও তা চালু না হওয়ায় বাসিন্দারা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেন্দা থানার রাজনোয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। এখানকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুরনো ভবনেই চলছে। তার অবস্থাও বেশ রুগ্ন। সেখানে শুধু মাত্র বহির্বিভাগের রোগীদের দেখা হয়। পাশেই তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। সেখানে বহির্বিভাগের সঙ্গে অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি করে রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাসিন্দারা আশা করেছিলেন, নতুন ভবন তৈরি হলে সেখানেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্থানান্তর করা হবে। রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানোর বাড়তি সুযোগ মিলবে ভেবে তাঁরা নিশ্চিন্তও হয়েছিলেন।
কিন্তু পুরনো ভবনের হাল ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়লেও নতুন ভবনটি চালু না হওয়ায় তাঁরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। নতুন ভবন চালুর দাবিতে ইতিমধ্যে তাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্ত লাভ হয়নি।
রাজনোয়াগড়ের বাসিন্দা তুলসি চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ বড়াল, বীরেন্দ্রনাথ সিংহদেও বলেন, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর এলাকার প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দা নির্ভরশীল। এখান থেকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল বা মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব ৩০-৩৫ কিলোমিটার। এখানে সকাল ৯টায় একজন চিকিৎসক আসেন। বেলা ১২টায় তিনি চলে যান। তারপরে কেউ সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লেও এখানে চিকিৎসা করানোর উপায় নেই।” বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এই অল্প সময়টুকুর মধ্যে কতটুকু স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্ভব? তাঁদের ক্ষোভ, নতুন ভবনে ১০ শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে বলে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন ভবন চালু না হওয়ায় পরিষেবাও দূর অস্ৎ।
এলাকার বাসিন্দা গোপীনাথ বাউরি, নিরঞ্জন দাস বলেন, “এখানে বড়জোর সামান্য পেট ব্যাথা কিংবা জ্বরের ওষুধ মেলে। তার থেকে বেশি রোগ হলে অনেক চড়া হারে গাড়ি ভাড়া করে পুরুলিয়ায় দৌড়তে হয়।” সম্প্রতি পুঞ্চার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় রাজনোয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। বাসিন্দারা তাঁর কাছে বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় বাড়ানো, ডিউটি রোস্টার চালু করা-সহ নিরাপত্তার জন্য ভিলেজ পুলিশ মোতায়েন করার প্রভৃতি দাবি জানান।
নতুন ভবন চালু করার জন্য বাসিন্দারা সম্প্রতি সভাধিপতির দ্বারস্থ হয়েছেন। জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “রাজনোয়াগড়ের বাসিন্দারা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা ঠিকঠাক স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে দেখতে বলেছি।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “এমনিতেই জেলায় চিকিৎসক প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরও কিছু চিকিৎসক পেলেই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনটি চালু করা হবে।”