হৃৎপিণ্ড, তাও আবার ছাপা! হয় না কি? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই হয়েছে মার্কিন মুলুকে। আর তার সাহায্যেই বেঁচেছে ১৪ মাসের শিশুর প্রাণ। সৌজন্যে ত্রিমাত্রিক ছাপার কল বা পোশাকি ভাষায় থ্রি-ডি প্রিন্টার।
গল্পটা তা হলে খুলেই বলা যাক। কেন্টাকির ১৪ মাসের বাসিন্দা রোল্যান্ড লিয়ান কুং বাওয়ির জন্মের সময়ই হৃৎপিণ্ডে কিছু ত্রুটি ছিল। তা বুঝতেও পেরেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু ত্রুটিগুলো ঠিক করতে দরকার ছিল জটিল অস্ত্রোপচার। কিন্তু ১৪ মাসের শিশুর হৃৎপিণ্ড এতটাই ছোট, যে তা ভাল করে দেখে ওঠাটাই সমস্যা। অথচ তা খুঁটিয়ে না দেখা গেলে অস্ত্রোপচার প্রায় অসম্ভব। কোসেইর চিলড্রেনস হাসপাতালে ভর্তি রোল্যান্ডের চিকিৎসক আর্ল অস্টিন তাই শেষমেশ ইউনিভার্সিটি অব লুইভিলের শরণাপন্ন হলেন। তাদের প্রযুক্তি বিভাগেই ছিল ত্রিমাত্রিক ছাপার কল। তা-ই ব্যবহার করলেন অস্টিন।
তবে এ কাজে প্রথম দরকার ছিল রোল্যান্ডের হৃৎপিণ্ডের স্ক্যান করা ছবি। কম্পিউটারে রাখা সে ছবিকেই নকশা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আর তা অনুসরণ করেই ত্রিমাত্রিক ছাপার কল কাজ শুরু করে। প্রথম স্তরের উপর আর একটি স্তর, তার উপর আর একটি স্তর, এ রকম করে চলতে থাকে ছাপার কাজ। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর রোল্যান্ডের হৃৎপিণ্ডের ত্রিমাত্রিক প্রতিকৃতি হাতে পান অস্টিন। যা কি না আকারে রোল্যান্ডের হৃৎপিণ্ডের দেড় গুণ। তিন খণ্ডে ভাঙা সেই হৃৎপিণ্ড খুঁটিয়ে দেখে তখন ত্রুটিগুলি বুঝতে পেরেছিলেন চিকিৎসক। সে অনুযায়ী জটিল অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনাও করেন।
চলতি মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি সে অস্ত্রোপচার হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পায় রোল্যান্ড। অস্টিন লুইভিলের কুরিয়র-জার্নালে জানিয়েছেন, সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন অনেকটাই সুস্থ রোল্যান্ড। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে সে ফিরেও যেতে পারবে বলে আশা তার চিকিৎসকের।
এবং এ সব কিছুর নেপথ্যেই ত্রিমাত্রিক ছাপার কারিকুরি। তা না হলে খুদের অত ছোট হৃৎপিণ্ডের খুঁটিনাটি মোটেও ধরা পড়ত না অস্টিনের চোখে। প্রাণে বাঁচানোও হয়তো মুশকিল হত রোল্যান্ডকে।
কিন্তু ছাপার কলের কারিকুরি তার মৃত্যুর সম্ভাবনায় ‘কালি’ ঢেলে দিয়েছে। চিকিৎসক অস্টিন তাই বারবার বলছেন, “অসম্ভব কাজের জিনিস এটি।”