ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিসের পাশাপাশি এবার দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে কালাজ্বরের প্রকোপও।
আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি ব্লকে রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সমীক্ষা এবং চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা থেকে তিন সদস্যের পতঙ্গবিদদের যে দল এসেছে তাঁরাও ওই সমস্ত এলাকায় ঘুরে কালাজ্বরের বাহক বেলেমাছির প্রকৃতি খতিয়ে দেখছেন। মঙ্গলবার ফাঁসিদেওয়া এলাকায় গিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন খড়িবাড়ি এলাকার গ্রামগুলিতেও ঘোরেন তাঁরা।
তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ বছরই যে ওই এলাকাগুলিতে কালাজ্বর হয়েছে, তা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই মহকুমার ওই এলাকাগুলি কালাজ্বরপ্রবণ বলে চিহ্নিত। রোগ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজও চলছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে শিলিগুড়ি মহকুমার তিনটি ব্লকে ১১২ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। মহকুমার যে তিনটি ব্লকে কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সেগুলি হল ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ি। তিনটি মহকুমার ৫৭টি গ্রাম কালাজ্বর প্রবণ বলে চিহ্নিতও করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক হলেও এখনও পর্যন্ত কালাজ্বরে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে গত বছর ফাঁসিদেওয়ার কালাজ্বরে এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “২০১৫ সালের মধ্যে কালাজ্বর নির্মূল করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই মতো আক্রান্ত ব্লকগুলিতে কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যদি প্রতি ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে একজন বা তার নীচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়, তবেই সেখানে রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে বলে ধরা হবে। কেন্দ্রের স্বাস্থ্য প্রকল্পে সেই কাজ হচ্ছে এ জেলাতেও। তাতে আগের চেয়ে রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ফাঁসিদেওয়ার গঙ্গারাম চা বাগানের কাছে ‘মুন্নি গ্রামে’ ২০১২ সালে ১২৮ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বছর সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ জন।
ফাঁসিদেওয়ার বিজলিমনি, ধীমালজোত, বাইজিজোত, ভিমবারের মতো ২৯টি গ্রাম কালাজ্বর প্রবণ। এ বছর ওই সমস্ত গ্রামে অন্তত ৭৫ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন একাধিক জন অসুস্থ রয়েছেন। বানসাভিটা, ডাকুয়াজোত, হাতিডোবার মতো খড়িবাড়ির ১৮টি গ্রামে এবং নকশালবাড়ির দমদমা ডিভিশন, জিরামনি, কিরণচন্দ্র চা বাগান এলাকার মতো ১০টি গ্রামে কালাজ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে এ বছরও। খড়িবাড়ির গ্রামগুলিতে কালাজ্বরে এ বছর আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন, নকশালবাড়ির গ্রামগুলিতে অন্তত ১৮ জনের কালাজ্বর হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টেই রয়েছে।
রোগ নিয়ন্ত্রণে আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে ঠিক কী করা হবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, আশা কর্মীরা এলাকাগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক সপ্তাহ ধরে সমীক্ষা করবেন। যাদের ১৫ দিনের বেশি জ্বর রয়েছে তাঁদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। প্রথমে ম্যালেরিয়া পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া গেলে কালাজ্বরের পরীক্ষা করা হবে। সেই উদ্দেশ্যে গ্রামের সাবসেন্টারগুলিতে এক দিন করে চিকিৎসকরা থাকবেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
তা ছাড়া সমীক্ষায় কোনও গ্রামে ৩টির বেশি রোগী মিললে আশেপাশের গ্রামগুলিকেও কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। তা ছাড়া রোগ নির্মূল করতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিশেষ ইঞ্জেকশন দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হবে। এতদিন কালাজ্বরের চিকিৎসায় যে সমস্ত ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হচ্ছিল, তা রোগীকে নিয়মিত নিতে হত। বিশেষ ওই ইঞ্জেকশন ১ টি নিলেই হবে। ওই সমস্ত ইঞ্জেকশন স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নিখরচায় বাসিন্দাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ দিন শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও রোগের প্রকোপ ছড়াচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। অথচ সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না-নিয়ে কার্নিভ্যাল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। আমরা উৎসব বিরোধী নই। তবে জীবনের মূল্যে আনন্দ হতে পারে না, তা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বোঝা দরকার। পুরসভায় প্রশাসক বসার পরে বকলমে তিনিই তো পুরবোর্ড চালাচ্ছেন। ওয়ার্ডগুলিতে কাউন্সিলর না-থাকায় সাফাই পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা কাকে বলবেন, তা বুঝতে পারছেন না।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য রথীন্দ্রবাবুর বক্তব্যের কোনও জবাব দিতে চাননি। রথীন্দ্রবাবু জানান, আগামী রবিবার দলের তরফে স্বচ্ছভারত অভিযান শুরু করা হবে বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে।