পুজো শুরুর আগেই চিকিৎসকদের পুজোর ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় পরিষেবা শিকেয় উঠেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খাতায় কলমে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ পুজোর সময় তাঁদের অধিকাংশেরই দেখা নেই বলে অভিযোগ। ফলে চরম ভোগান্তির মুখে রোগীরা। কালিয়াচকের আলিনগর থেকে রিনি বিবিকে রবিবার রাতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেছিল তাঁর পরিবার। সোমবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত একজন চিকিৎসকও তাকে দেখতে যাননি বলে অভিযোগ। রাত থেকে অসহ্য পেটের যন্ত্রণা নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শয্যায় শুয়ে কাতরাতে হয় তাঁকে।
আরও খারাপ অবস্থা হাসপাতালের শিশু বিভাগের। বর্তমানে ১১০টির বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। ১২ জন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ থাকলেও মাত্র দুজন চিকিৎসক পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। শিশুবিভাগে দুইদিন ধরে ভর্তি রতুয়ার কাহালার আলিম শেখের তিন বছরের ছেলে। শিশু বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে আলিম বলেন, “দু’দিন ধরে দেখছি মাত্র দুজন ডাক্তার সকাল ও সন্ধ্যায় শিশুদের দেখছেন। মাত্র দু’জন এতগুলি শিশু কে দেখায় সমস্যা হচ্ছে।”
কলেজ সূত্রের খবর, কেউ ছুটির আবেদন করে, কেউবা ছুটি না নিয়েই পুজো কাটাতে মালদহ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ফলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে রোগীদের। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, “মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে সমস্ত চিকিৎসক ছুটি না নিয়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের শোকজ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ অবশ্য চিকিৎসকদের খুব একটা দোষ দেখছেন না। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা সপ্তাহে দুদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকেন। বাকি পাঁচদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে থাকেন। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা দু’দিন বা তিন দিন থাকেন। বাকি দিনগুলি বাইরে থাকেন তাঁরা। এটা নতুন কিছু নয়।” বিষয়টি শুনেছেন মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদীও। জেলাশাসক বলেন, “কোন কোন চিকিৎসক ছুটি না নিয়ে পুজোর ছুটি কাটাতে গিয়েছেন, তা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইছি। প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তীও অভিযোগ করেছেন, ছুটি না নিয়ে চলে যাওয়া মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্যের শিক্ষা স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও ফল মেলেনি কোনও। হাসপাতালের চিকিৎসকদের ছুটি না নিয়ে মালদহ থেকে বাড়ি চলে যাওয়া রোখা যায়নি। তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রশাসনের ঢিলেমির জন্যই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাড়বাড়ন্ত। স্থানীয় প্রশাসন যদি কড়া হাতে বিষয়টি দেখত তবে চিকিৎসকরা ছুটি না নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ছেড়ে যাওয়ার সাহস পেতেন না।”